ছবি : সংগৃহীত
কয়েক বছর আগে তিনি কানাডায় এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় দুটি পা হারালেন। এবার তিনি হজ্জ পালন করার নিয়ত করেছেন । প্রথমে প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ , মা-বাবার কবর জিয়ারত করবেন, স্বজনদের সাথে দেখা সাক্ষাৎ, দোয়া আশীর্বাদ নিয়ে তিনি যাবেন সৌদি আরবে।
টিকেট কেটেছেন বাংলাদেশ বিমানে। টরোন্ট - ঢাকা- জেদ্দা -ঢাকা -টরোন্ট ।
উপস্থিত হলেন টরোন্ট পিয়ারসন বিমানবন্দরে বাংলাদেশ বিমানের চেকিং কাউন্টারে ।
চেকিং সুপারভাইজর এ ধরনের যাত্রীদের বর্ডিংকার্ড দিতে অবশ্যই ম্যানেজারের সিদ্ধান্ত চাইবেন।
শারিরীক ভাবে চ্যালেঞ্জন্ড যে সকল যাত্রী মোটেও হাঁটতে পারেন না তাদের কে বিশেষ হুইলচেয়ারের (আইল চেয়ার) সাহায্যে উড়োজাহাজের সীটে বসিয়ে দেয়া হয় ।
কিন্তু প্রশ্ন হলো প্রায় ২০ ঘন্টার যাত্রা পথে সে কি ভাবে ওয়াশরুম ব্যবহার করবেন। তার কোন পা নেই । কোন মবিলিটি ডিভাইস নেই ।
এ যাত্রীকে নেওয়ার জন্য মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে তাকে বর্ডিংকার্ড দিলাম, তার ব্যাগেজ গ্রহণ করলাম কিন্তু স্ট্যান্ডবাই রাখলাম ।
যাত্রীর উৎকন্ঠিত করুন চোখের ভাষা আমি বুঝি ! তবে এ ক্ষেত্রে যাত্রীর নিজের নিরাপত্তার কারনেই ক্যাপ্টেন , পার্সার সকলের একটা সম্মিলিত সিদ্ধান্ত খুবই গুরুত্বপূর্ণ ।
চীপ পার্সারকে অবগত করলে তিনি ক্যপ্টেনকে রেফার করলেন । ক্যাপ্টেন ইশতিয়াক হোসাইন বললেন চীপ পার্সার যদি গ্রহণ করেন তার কোন আপত্তি নেই। চীপ পার্সার রাজি হলেন , কিন্তু তিনি অধিকতর নিশ্চিত হওয়ার জন্য ক্যাপ্টেনের নিকট গেলে ক্যাপ্টেন প্রশ্ন করলেন , জরুরী অবস্থায় এ যাত্রীকে কি ভাবে হ্যন্ডল করা হবে ? তারতো কোন পা নেই ! প্যাঁচ লেগে গেল !
চীপ পার্সার দ্বিধান্বিত হয়ে সিদ্ধান্ত বদলে ফেললেন । অতীত কিছু অভিজ্ঞতা অবশ্য তাদেরকে সতর্ক করে দিল ।
প্রশ্ন করলাম “প্রতিবন্ধী বা শারীরিকভাবে চ্যালেঞ্জন্ড যাত্রী কি বিমানভ্রমন করবে না ? “
- হ্যাঁ, ভ্রমন করবে । তবে প্রতিবন্ধী হলেও তাদের তো পা থাকে , জরুরী অবস্থায় স্লাইড করতে পারে । এনিতো পারবে না !
“যে সকল যাত্রী স্ট্রেচারে করে ভ্রমন করে তাদের যদি আমারা গ্রহণ করি তাহলে মনে হয় এ যাত্রীকেও আমরা গ্রহন করতে পারি । এবং তার সফরসঙ্গী স্ত্রী , কন্যা, পুত্র রয়েছেন তারা কোলে করে ওয়াশরুমে নিবেন। তাদের সীট ওয়াশরুমের নিকটে দেয়া হয়েছে এবং আমরা যদি ঐকমত হই তাকে আমরা প্রিমিয়াম ক্লাসে কার্টিসি আপগ্রেডেশন দিতে পারি ।”
ক্যাপ্টেন ইশতিয়াক হোসাইন এবং চীপ পার্সার দু’জনেই তাদের চৌকস লিডারশিপের পরিচয় দিলেন।
- মশিকুর ভাই, দেন উঠিয়ে , আল্লাহ ভরসা ! কিছু হলে দায় আপনার ।
“আমি দায় নিতে জানি । তবে এ যাত্রী সহিসালামতে ঢাকা পৌঁছবেন এবং মক্কাও যাবেন । ইনশাল্লাহ ।”
সকল অনিশ্চিতার বেড়াজাল ছিড়ে যখন হতভাগা এ যাত্রীকে জাহাজের সীটে বসিয়ে দিলাম । তখন অশ্রু সজল নয়নে সে আমায় জড়িয়ে ধরলেন , ভাই সারা জীবন আপনাকে মনে রাখবো , দোয়া করবো । উৎকন্ঠিত হৃদয়ের সকল আনন্দ তার অশ্রু হয়ে বেড়িয়ে এলো। তার স্ত্রী একটা ছবি তোলার আবদার করলেন , আমিও সে স্মৃতি ধরে রাখলাম ।
বাংলাদেশ বিমান কত মানুষের কতো স্বপ্ন সফল করে প্রতিনিয়ত! কত স্মৃতি নিয়ে সে উড়ে চলে দেশে বিদেশে ! পাড়ি দেয় আটলান্টিক মহাসাগর- পেছনে ফেলে ধু ধু মরু - পৌছে দেয় পবিত্র কাবার পথে।
লেখক: মুশিকুর রহমান (বিমান স্টেশন ম্যানেজার টরন্টো, কানাডা)
বাংলাবার্তা/এআর