ছবি: বাংলাবার্তা
র্তমানে আমাদের দেশের রাজনৈতিক যে অবস্থান তৈরি হয়েছে তাতে বাংলাদেশ একটি রাজনৈতিক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। যেভাবে রাজনীতি এগোচ্ছে তাতে সংঘাত হওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তাই শান্তিপ্রিয় দেশবাসী মনে করে, আলাপ- আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করা অধিক যুক্তিযুক্ত। এর যদি ব্যত্যয় ঘটে তাহলে দেশে আবারো এক অরাজকতার দিকে এগিয়ে যাবে- তাতে দেশের যে অর্থনৈতিক ক্ষতি হবে এর দায়ভার নেবে কে? রাজনৈতিক গোষ্ঠী না শাসক গোষ্ঠী? এ প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যায়।
বাংলাদেশ একটি স্বাধীন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। আমরা মনে করি, গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে এখানে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। যথাসময়ে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হোক- এটাই সকলের কাম্য। গত ৫ আগস্ট বিগত ১৬ বছরের নামধারী গণতান্ত্রিক একটি স্বৈরশাসকের পতন হয়েছে। এতে হাফ ছেড়ে মানুষ শ্বাস নিয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের তোপের মুখে টিকতে না পেরে স্বৈরাচারিণী পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছে। অসহায়, নিঃস্ব ও ধ্বংসের মুখে ফেলে রেখে চলে গেছে আওয়ামী লীগ নামক রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানটিকে। আজ যা শুধুই একটি ইতিহাস বলে মনে করছেন অনেকেই। অতীত আওয়ামী লীগ ও তার সংগঠন ছাত্রলীগের ইতিহাস পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, এরা দেশের মঙ্গলের চেয়ে নিজেদের আখের গোছাতেই ব্যস্ত ছিল বেশি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের যে ভূমিকা, তাতে এরা বাংলাদেশের সাধারণ ছাত্রদের ওপর আওয়ামী লীগ ও ভারতীয় এজেন্ডা বাস্তবায়নে রক্ত চক্ষু প্রসারিত করেছিল। যার বলি হয়েছে এ দেশের সাহসী ছাত্র আবু সাইদ, মুগ্ধর মতো হাজারো বীর। আর আওয়ামী লীগের এমন শাসননীতির প্রভাবে ইতিহাসের পাতায় আরো একটি কলঙ্কজনক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয় আগস্ট নামক মাসটিতে। রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের অতীত ইতিহাস সুদুরপ্রসারী থাকলেও বর্তমানে তা এক কালিমা জনক অধ্যায়।
তাদের দীর্ঘ সময়ব্যাপী ক্ষমতায় আসীন থাকার কারণে দেশের মানুষের মৌলিক অধিকার কেড়ে নিয়ে নিজেদের মনগড়া করে দেশ পরিচালনার ফলে আজ তারা বাংলাদেশের ইতিহাসের নিম্নতম স্তরে স্থান করে নিয়েছে। যার ফলে সাধারণ ছাত্র-জনতার আন্দোলনে তাদের দাবির মুখে ছাত্রলীগের অতীত ইতিহাসকে পর্যালোচনা করে আজ ছাত্রলীগকে সরকার নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হিসেবে তাদের সব কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। যার ফলে এই সংগঠনের সব কার্যক্রম ও তাদের কর্মী বাহিনীও নিষিদ্ধ হিসেবে গ্রেপ্তারের আওতায় আনছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। আওয়ামী লীগকেও দিতে হচ্ছে শেখ হাসিনার স্বেচ্ছাচারিতার খেসারত। আজ আওয়ামী লীগও ধ্বংসের মুখে। রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ঘুরে দাঁড়াবে- এমন কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। ৫ আগস্টের আগে থেকে শুরু করে এখন অবধি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, এমপি ও মন্ত্রীরা পালাতে গিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়ছে। আওয়ামীপন্থি আমলাদেরও পরিস্থিতি একই।
এ ছাড়াও সবচেয়ে বড় ভয়ের বিষয় হচ্ছে এক সময় যখন বাংলাদেশে জামায়াতী ইসলামীর অঙ্গ সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবিরকে নিষিদ্ধ করেছিল তার পরের ইতিহাস কি আমরা জানি?
এখন যে সংকট আওয়ামী লীগে শুরু হয়েছে, তার মুখোমুখি যদি অন্য দলগুলো হতে না চায়, তাহলে অবশ্যই সতর্কতার সঙ্গে তাদেরকে মোকাবেলা করতে হবে। ইসলামী ছাত্র শিবির নিষিদ্ধ হওয়ার পর তারা কৌশল পরিবর্তন করে ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িয়ে গিয়ে খোলস পরিবর্তন করে ছাত্রলীগের পদপদবি ধারণ করে রাজনীতির সঙ্গে মিশে গিয়েছিল। যার ফলে জুলাই-আগস্ট আন্দোলন অতি দ্রুত সফলতার মুখ দেখেছে। যে ভুল ছাত্রলীগ করে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতাদেরকে তাদের দলে ভিরিয়ে পদপদবি দিয়ে নিজ গৃহে পরবাসী হয়ে পড়েছিল ছাত্রলীগ। তেমনটি যাতে ছাত্র শিবির ও বিএনপির ছাত্রদলের মধ্যে অনুপ্রবেশ করতে না পারে, সেদিকে নিবিড় পর্যবেক্ষণ থাকতে হবে।
সংগঠনের জনবল বাড়িয়ে সংগঠন শক্তপোক্ত করার নামই সংগঠনের শক্তি নয়। মূল কথা হচ্ছে শৃঙ্খলা। রাজনীতিতে চেইন অব কমান্ড যদি ভেঙে পড়ে তাহলে রাজনীতি দেউলিয়া হয়ে যায় অতি সহজেই। তাই দলের নীতিনির্ধারকদের মনে রাখতে হবে, উঁচু নেতা থেকে শুরু করে মাঝারি বা নিচু নেতা পর্যন্ত যেন একই নীতিতে পরিচালিত হয় সংগঠনে। দলীয় প্রধান স্বেচ্ছাচারী হয়ে নিজের ক্ষমতাকে প্রভাবিত ও কুক্ষিগত করে রাখতে চাইলে সে নেতা অবশ্যই স্বৈরাচারী নেতায় পরিণত হবে। হারিয়ে যাবে তার জনসমর্থণ। ক্ষমতা, দলীয় শক্তি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহার করে কিছুদিন টিকে থাকলেও বেশি দিন সম্ভব হয় না অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার। যেভাবে আওয়ামী দুঃশাসনের কবলে পড়েছিল জনগণ। গণতান্ত্রিক পন্থা ব্যাহত করার ফল চিরদিনই এরকম হয়। যেটা বাংলাদেশের ইতিহাসে ১৯৭১ সাল দিয়ে শুরু হয়ে আজ পর্যন্ত এসে পৌঁছেছে।
যে কারণে আজ বাংলাদেশ একটি রাজনৈতিক সংকটকাল অতিক্রম করছে। ১/১১ যার একটি উদাহরণ। তবুও কেন আমরা এ জাতি মনে রাখতে পারি না। রাজনৈতিক সংকটকে বারবার টেনে আনি উন্নয়নমুখী এই দেশটাতে।
তাহলে কি আমরা এ দেশে যে ট্রেন্ড চালু করেছি এটা শুধুমাত্র নিজের আখের গোছানের জন্য? তাহলে আমাদের দেশপ্রেম কোথায়? কোথায় জনগণের জন্য ভালোবাসা? বহির্বিশ্বের চাটুকারিতা বাদ দিয়ে আমাদেরকে আগে দেশ প্রেমে মনোনিবেশ করে নিজেদেরকে শোধরাতে হবে। তাহলেই শান্তি মিলবে এ দেশে। সত্যিকারের গণতন্ত্র ফিরে আসবে আশীর্বাদ হয়ে।
লেখক: গণমাধ্যমকর্মী
বাংলাবার্তা/এমআর