ছবি সংগৃহীত
ঢাকা: শারদীয় দুর্গাপূজার আগে ১৮ অক্টোবর ঢাকায় অনুষ্ঠেয় জনসমাবেশ থেকে এক দফা মানতে সরকারকে ‘চূড়ান্ত আলটিমেটাম’ দিতে পারে দলটি। ৭২ থেকে ৯৬ ঘণ্টার ওই আলটিমেটাম শেষে দাবি মানা না হলে ২৭ অক্টোবর থেকে লাগাতার আন্দোলনে নামতে পারে বিএনপি ও শরিকরা।
শেষ ধাপের আন্দোলনে নামার আগে নানামুখী তৎপরতা চালাচ্ছে বিএনপি। এই ধাপে ঘেরাওয়ের মতো কর্মসূচি দিয়ে দলটি আন্দোলন শুরু করতে চাইছে। এর মধ্য দিয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই আন্দোলনকে যৌক্তিক পরিণতিতে নিয়ে চাইছে দলটি। এ লক্ষ্যে বিএনপির প্রতিটি শাখাকে সর্বাত্মক কাজে লাগানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। শেষ ধাপের আন্দোলন শুরুর ইঙ্গিত দিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল শনিবার এক কর্মসূচিতে বলেছেন, খালেদা জিয়ার মুক্তি ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনকে এক করেই দুর্গাপূজার পরে ‘দুর্বার গণ-আন্দোলন’ ঘোষণা করা হবে।
জানা গেছে, সচিবালয়, নির্বাচন কমিশন বা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচির মধ্য দিয়ে আন্দোলনের শুরু হতে পারে। সঙ্গে আসতে পারে অবস্থানের মতো কর্মসূচিও। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে কর্মসূচি আরও জোরালো করার পরিকল্পনা রয়েছে দলটির। প্রয়োজনবোধে তফসিলের পর নো রিটার্ন পজিসনে যাওয়ার চিন্তা রয়েছে দলটির। এ সময় হরতালের মতো কর্মসূচি দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে।
শনিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ইটিআই ভবনে জেলা প্রশাসকদের নির্বাচনী প্রশিক্ষণে নির্বাচন কমিশনার (ইসি) আনিছুর রহমান জানিয়েছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল নভেম্বরে ঘোষণা করা হবে। বিএনপির সূত্রগুলো বলছে, দলের প্রতিটি সাংগঠনিক টিম, কূটনৈতিক তৎপরতা ও শরিক দলগুলো এই তিনটি শাখাকে একযোগে কাজে লাগানোর পরিকল্পনা রয়েছে দলটির। এ জন্য ইতিমধ্যে রাজপথের কর্মসূচিতে যেকোনো মূল্যে মাঠে থাকতে এবং যেকোনো পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকতে নির্দেশনা দিয়েছে বিএনপি। সরকারবিরোধী প্রতিটি দলকে সামর্থ্য অনুযায়ী রাজপথে সাংগঠনিক শক্তি প্রদর্শনের আহ্বান জানানো হয়েছে। সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে কূটনৈতিক তৎপরতাকে।
জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার অন্তত তিনটি দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপি। এর মধ্যে বিএনপি মহাসচিব যুক্তরাষ্ট্র, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান যুক্তরাজ্য ও আমীর খসরু মাহমুদের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল সুইজারল্যান্ডের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকে আবারও নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগের আহ্বান জানান।
এ মাসের মধ্যে কূটনৈতিক পর্যায়ে আরও কিছু বৈঠক হতে পারে বলে দলটির সূত্রে জানা গেছে; বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক ব্যুরোর ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি আফরিন আখতারের ঢাকা সফরের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। বিএনপি আশা করছে, তার এই সফরে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন দেখার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান তিনি পুনর্ব্যক্ত করবেন। কেননা, তিনি দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক ব্যুরোতে বাংলাদেশ, ভুটান, নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপের সঙ্গে সম্পর্ক দেখভাল করেন। তিনি এমন আশা ব্যক্ত করলে সেটি সরকারের জন্য সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি হবে বলে মনে করছেন বিএনপি নেতারা।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান কর্মসূচি প্রসঙ্গে জানান, জনদাবি পূরণে পূজার পরে কর্মসূচি আরও জোরালো হবে। সরকার যদি শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে বাধা দেয়, তার দায় তাদেরই নিতে হবে।
জানা গেছে, ১৮ অক্টোবর যুগপৎ সমাবেশের আগে ১৬ অক্টোবর নয়াপল্টনে যুব সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। বিএনপির ঘোষিত এই কর্মসূচির পর চূড়ান্ত আন্দোলনে নামার আগে যুগপতের শরিকদের মতামত নিচ্ছে বিএনপি। এর অংশ হিসেবে ইতিমধ্যে ১২-দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট ও লেবার পার্টির সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। গত ৩০ ডিসেম্বর থেকে যুগপৎ আন্দোলন শুরুর পর এটিই ছিল বিএনপির হাইকমান্ডের সঙ্গে শরিকদের বৈঠক।
কর্মসূচি নিয়ে জানতে চাইলে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘১৮ অক্টোবর যুগপৎ সমাবেশ থেকে আমরা সরকারকে আলটিমেটাম দিয়ে সময় দেব। পূজার পর এই আলটিমেটামে কাজ না হলে আমরা রাজধানীতে ঘেরাও সঙ্গে বিক্ষোভ, প্রয়োজনে অবরোধের কর্মসূচি ঘোষণা করব। এতেও কাজ না হলে শেষ পর্যায়ে হরতালের মতো কর্মসূচি দেওয়ার সিদ্ধান্ত রয়েছে আমাদের। তবে পুরো বিষয় নির্ভর করবে সরকারের আচরণের ওপর।’
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লা বুলু বলেন, ‘রাজপথে যদি আঘাত আসে তা প্রতিরোধ না করতে পারলে দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হবে না। সরকার পদত্যাগ না করলে তফসিল ঘোষণার আগে থেকেই আমরা লাগাতার কর্মসূচিতে যাব। এ দেশকে মুক্ত করতে এ ছাড়া আমাদের বিকল্প নেই।’