প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
বিএনপির সঙ্গে সংলাপের সম্ভাবনা আবারও নাকচ করে দিয়ে দলটিকে উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এই সন্ত্রাসী, জঙ্গি, এ অমানুষগুলো, এদের সঙ্গে কারা থাকে, আর তাদের সঙ্গে বসা? এই জানোয়ারদের সঙ্গে বসার কথা কারা বলে? আমার কথা হচ্ছে জানোয়ারদেরও একটা ধর্ম আছে। ওদের সে ধর্মও নাই। ওদের মধ্যে কোনও মনুষ্যত্ববোধ নেই। ওরা চুরি, লুণ্ঠন, দুর্নীতি, দুর্বৃত্তায়ন ছাড়া কিছুই জানে না।
বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর) একাদশ জাতীয় সংসদের শেষ অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আপনার গাড়ি পোড়ালে এদের ধরে ওই আগুনে ফেলুন
এ সময় বিএনপির সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও দুর্বৃত্তপনা রুখে দিতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, বাংলাদেশটাকে নিয়ে কেউ যেন খেলতে না পারে। এজন্য দেশবাসীর কাছে সহায়তা চাই। দেশবাসীকে বলবো, অগ্নিসন্ত্রাসী ও দুর্বৃত্তদের ধরিয়ে দিন। আপনার গাড়ি পোড়ালে এদের ধরে ওই আগুনে ফেলুন। যে হাত দিয়ে গাড়ি পোড়াবে সেই হাত পুড়িয়ে দিন। তাহলে ওরা থামবে। তা না হলে ওরা থামবে না। এটা দেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে করতে হবে। দেশের মানুষের সহযোগিতা পেলে এদের দুর্বৃত্তপনা কমানো যাবে। মানুষকে বলবো ভয়ের কিছু নেই। এরা মুষ্টিমেয়। এদের বিরুদ্ধে সবাইকে এক হয়ে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানাচ্ছি।
সাংবাদিকরা কী অপরাধ করেছে?
বিএনপির চলমান আন্দোলনের কঠোর সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, খাদ্য নিরাপত্তা থেকে শুরু করে সব ধরনের ব্যবস্থা যখন আমরা করে যাচ্ছি তখন কী দেখলাম? কথা নেই, বার্তা নেই, নির্বাচন হতে দেবে না। আর আমাকে পদত্যাগ করাবে। ক্ষমতা থেকে হটাবে। ঘোষণা দিয়ে ২৮ অক্টোবর বিএনপি যে তাণ্ডব করছে সারা বাংলাদেশে..। এই দৃশ্যগুলো সহ্য করা যায় না। সাংবাদিকরা কী অপরাধ করেছে? আর এরাও বিএনপিরই কাজ করতো। তাদের যেভাবে মেরেছে! যারা ক্ষতিগ্রস্ত তার পাশে আছি। সাধ্যমতো সাহায্য করে যাচ্ছি।
দেশবাসীর সহযোগিতা চেয়ে তিনি আরও বলেন, এই দুর্বৃত্তরা সাধারণ মানুষের ওপর যারা আক্রমণ করছে, সাংবাদিক পুলিশ থেকে শুরু করে সাধারণ জনগণ যাদের পুড়িয়ে হত্যা করছে, যাদের সম্পদ নষ্ট করছে। শেষ অধিবেশনে আমার বক্তব্যে শেষে এটুকু আহ্বান জানাবো- জনগণ হচ্ছে শক্তির উৎস। আমার একমাত্র শক্তি বাংলাদেশের জনগণ। জনগণের শক্তি নিয়েই আমরা চলছি।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী ২৮ অক্টোবর সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের একটি ভিডিওচিত্র সংসদে প্রদর্শন করেন।
বারবার আমার ওপর আঘাত হেনেছে
সংসদ নেতা বলেন, জিয়াউর রহমান তো আমার বাবা, মা, ভাই, বোন সব হত্যার সঙ্গে জড়িত। আর খালেদা-জিয়া তারেক জিয়া তো আমাকে হত্যার চেষ্টা করছে। আওয়ামী লীগের ২১ হাজার নেতাকর্মী হত্যা করেছে। সাধারণ মানুষ। আজ কোন অবস্থায় দেশকে নিতে চায়।
তাকে বিদেশে হত্যার চেষ্টা হয়েছে অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বারবার আমার ওপর আঘাত হেনেছে। তারপর আমি বেঁচে গেছি। এখনও বারবার আমার ওপর হামলা হচ্ছে। এমনকি দেশে না, বিদেশেও আমার ওপর হামলার প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে। আমি বিস্তারিত বলবো না। শুধু এটুকুই জানিয়ে রাখলাম। আমি যখন বিদেশ যাই সেখানেও কিলার হায়ার করে আমাকে মারার চেষ্টা... সে চেষ্টাও ওই খালেদা জিয়ার ছেলে, যেটা লন্ডনে বসে আছে, সেসহ তাদের যারা সন্ত্রাসী তারাই...। তবে আমি কখনও এ ব্যাপারে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত না। জন্মালে তো মরতে হবে। কিন্তু যতক্ষণ শ্বাস আছে এ দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাবো।
জনগণ কোন বাংলাদেশ চায়
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ধারাবাহিক গণতান্ত্রিক বিধিব্যবস্থা ছিল বলেই দেশ এগিয়ে গেছে। আর সেটাকেই ধ্বংস করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। দেশবাসীর কাছে আমি আহ্বান জানাই, তারা কোন বাংলাদেশ চায়। এই ধ্বংসস্তূপ? নাকি উন্নত বাংলাদেশ? তাদের জীবনমানে যে উন্নতি হয়েছে সেটা ধরে রাখতে চান? সেটা ধরে রাখতে হলে একমাত্র আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে সেটা থাকবে। নৌকা মার্কা স্বাধীনতা দিয়েছে। নৌকা মার্কাই পারে উন্নত জীবন দিতে। এরা ধ্বংসই দিতে পারবে। এরা স্বাধীনতাও চায় না, উন্নতিও চায় না।
তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি কমাতে আমরা চেষ্টা করছি। এটা করতে পারবো। বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাক, উন্নয়নের অগ্রগতি অব্যাহত থাকুক। অধিকার সুরক্ষিত থাকুক সেটা আমরা চাই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোন বাংলাদেশ আমরা চাই? দিনরাত পরিশ্রম করে মাত্র ১৪ বছরের মধ্যে যে বাংলাদেশ আমরা উন্নত করেছি, বলেছিলাম দিনবদলের সনদ। আজ বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। আর তখন এ ধরনের ধ্বংসযজ্ঞ। আমার আজ বক্তব্য দেওয়ার মানসিকতা নেই।
তিনি বলেন, এরকম দৃশ্য। যারা জাজের বাড়িতে আক্রমণ করে। এটা তাদের অভ্যাস। এর আগে প্রধান বিচারপতির অফিসে লাথিও মেরেছে বিএনপি নেতারা। পুলিশের ওপর হামলা, অ্যাম্বুলেন্সে রোগী যাচ্ছে, সেখানেও আক্রমণ। আর কী বীভৎস দৃশ্য! পুড়িয়ে মানুষ হত্যা না শুধু, মনে হচ্ছে এরা পুরো দেশটাকে ধ্বংস করবে।
তিনি বলেন, মানুষের কল্যাণে কাজ করতে গিয়ে কে কোন দল করে সেটা আমি দেখিনি। মানুষকে মানুষ হিসেবে দেখেছি। তাদের জন্য কাজ করেছি। তাদের সেবা দেওয়ার চেষ্টা করেছি।
তিনি বলেন, আমরা যখন দেশের মানুষের উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি, তখন বিএনপি-জামায়াত জোট বারবার অগ্নিসন্ত্রাস, সংঘাত, মানুষ হত্যা, মামলা, নানাভাবে মানুষকে ব্যতিব্যস্ত করে তুলেছে। একদিকে আমরা দেশের জন্য কাজ করি, দেশের উন্নতি করি, অন্যদিকে তারা ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়। ধ্বংস করাটাও তাদের চরিত্র। ২৮ তারিখে যেভাবে পুলিশকে ফেলে দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছে, কোনও মানুষ এরকম করতে পারে? ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে তারা একইভাবে করেছে। মাঝখানে একটু থেমেছিল, তারপর আবার ভয়ংকর রূপ জাতি দেখছে।
বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী তার সরকারর উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ফিরিস্তি তুলে করেন। এ সংক্রান্ত ছোট একটি পুস্তক সংসদ সদস্যদের কাছে সরবরাহ করা হয়। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, বৈদেশিক মু্দ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি, স্বাস্থ্য খাত, বাজেট বৃদ্ধি, জিডিপির আকার বৃদ্ধি, শিক্ষা খাত, এডিপি, দারিদ্র্য বিমোচন, শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধি, গড় আয়ু বৃদ্ধি, সুপেয় পানির ব্যবস্থা, শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার কমানো, বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি, কারিগরি শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব প্রদান, খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি, দুধ উৎপাদন বৃদ্ধি, ইন্টারনেট ব্যবহারের হার বৃদ্ধি, সরকারি সেবা সহজীকরণ, সামাজিক সুরক্ষা, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির কথা জানান।
রিজার্ভ সময় সময়ে বাড়ে কমে, এটা স্বাভাবিক
রিজার্ভ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রিজার্ভ সময় সময়ে বাড়ে কমে। এটা স্বাভাবিক ব্যাপার। এটা নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। কারণ আমরা খাদ্য উৎপাদন থেকে শুরু করে অন্যান্য কাজ করে যাচ্ছি। আমরা সবসময় খুব সতর্কভাবে পদক্ষেপ নিচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, শ্রমিকদের সর্বনিম্ন মজুরি ২০০৬ সালে ছিল মাত্র ১ হাজার ৪৬২ টাকা। আমরা তিন দফায় বৃদ্ধি করে ৮ হাজার ৩০০ টাকায় উন্নীত করেছি।
শেখ হাসিনা বলেন, আমি জানি জিনিসপত্রের দাম নিয়ে অনেকে হা-হুতাশ করছেন। কিন্তু আমরা এই যে উৎপাদন বাড়ালাম, জনসংখ্যা কিন্তু এতগুণ বাড়েনি, তাহলে এগুলো গেলো কোথায়? মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে। অর্থনৈতিক উন্নতি হয়েছে। খাদ্যগুণ বেড়েছে। সেটাই হলো বড় কথা। দেশের অগ্রযাত্রা কেউ থামাতে পারবে না। ইনশাআল্লাহ আবার দেখা হবে।