বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী (ছবি : বাংলাবার্তা)
‘আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কৃষি মন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাকের বক্তব্য প্রমাণ করে সব পূর্ব পরিকল্পিত’— এমনটিই মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
সোমবার (১৮ ডিসেম্বর) দুপুরে অনলাইন প্ল্যাট ফর্মে আয়োজিত ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
রিজভী বলেন, ‘বিএনপি নেতাকর্মীদের সম্পূর্ণ মিথ্যা সাজানো মামলায় জেলে পুরে এবং সারাদেশে বাড়ি-ঘর ছাড়া করে তাড়িয়ে বেড়ানোর গোমর ফাঁস করেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক।
গতকাল একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন, সিট ভাগাভাগির উদ্ভট তামাশার নির্বাচনকে নির্বিঘ্ন কন্টকমুক্ত করার জন্যই বিএনপির ২০ হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে জেলে রাখা হয়েছে। আমরা চিন্তা-ভাবনা করেই এই কাজ করেছি। তাদেরকে জেলে না ভরলে দেশ অচল হয়ে যেত। হরতালের দিন গাড়ি চলত না।’
‘ড. আবদুর রাজ্জাক সাহেব আরও বলেছেন, বিএনপিকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল তারা নির্বাচনে আসলে নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়া হবে। শুধু পিছিয়ে দেওয়া নয়, বলা হয়েছে, সবাইকে জেল থেকে ছেড়ে দেওয়া হবে। এমনকি একরাতে সব নেতাকে জেল থেকে মুক্তির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বিএনপি রাজি হয়নি’— বলেন রিজভী।
তিনি বলেন, ‘এতক্ষণে-অরিন্দম কহিলা বিষাদের মতো কৃষিমন্ত্রীর এই হরষের স্বীকারোক্তি প্রমাণ করে, গত ২৮শে অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশে হামলা করে পুলিশি তাণ্ডব-হত্যাকাণ্ড থেকে শুরু করে চলমান যত সহিংসতা, মিথ্যা মামলা, গ্রেফতার, হুলিয়া, হত্যা, বিএনপিসহ বিরোধীদলের বাড়ি-ঘরে হামলা-তল্লাশি, ভাংচুর-গৃহছাড়া-আটক বাণিজ্য সবকিছু শেখ হাসিনার পূর্ব পরিকল্পিত। শেষ পর্যন্ত এই প্রভাবশালী মন্ত্রী হাটে হাঁড়ি ভেঙ্গে স্বীকার করলেন যে, দেশের আইন-আদালত, আইন শৃঙ্খলা বাহিনী, প্রশাসন-কোর্ট কাচারি-বিচার-আচার সবকিছুই আওয়ামী মাফিয়া সরকারের হাতে বন্দি।’
রিজভী বলেন, ‘বিচার ব্যবস্থা আর আওয়ামী লীগ একাকার হয়ে গেছে। পৃথক কোনো সত্ত্বা নেই। দেশে কোনো আইন নাই। সব শেখ হাসিনার ইশারাই চলছে। বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দেড় লাখ মামলা দায়ের আর অর্ধ কোটি আসামি করা হয়েছে শেখ হাসিনার নির্দেশে। কারাগারে নেতাকর্মীদের হত্যা করা হচ্ছে সরকারের ব্লুপ্রিন্টে। বিনা কারণে বাংলাদেশি নাগরিক গ্রেফতার, নির্বিচারে বিএনপিসহ আন্দোলনরত দলগুলোর নেতাকর্মীদের কারাগারে আটক ও নির্যাতন, ইচ্ছা মাফিক জেল ও জামিন বিচার বিভাগের অস্তিত্বকেই বিলিন করে দিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘বিচার বিভাগ আইনের গতিতে নয়, চলছে গণভবনের গতিতে। মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল বিচার বিভাগকে কার্যত আওয়ামী লীগের একটি ইউনিটে পরিণত করা হয়েছে। পরীক্ষিত আওয়ামী লীগের নেতাদের বেছে বেছে সেখানে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এ কারণে গত ১৫ বছর ধরে বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদছে। স্বাধীন বিচার বিভাগ ও আইনের শাসনের আওয়ামী নমুনা কৃষিমন্ত্রীর কথায় স্পষ্ট হয়েছে।’
রিজভী বলেন, ‘২০ হাজার নির্দোষ নেতা-কর্মীকে নির্বিঘ্নে নির্বাচন করতে পুরোপুরি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে। সারাদেশের নির্দোষ নেতাকর্মীদের কারাগারে গাদাগাদি করে রাখা হচ্ছে। জামিনের অধিকারও খর্ব করা হয়েছে। শেখ হাসিনা চাইলে গ্রেফতারকৃতদের এক রাতেই ছেড়ে দিতে পারেন। ২০ হাজার নিরপরাধ নেতা-কর্মীকে নির্জলা মিথ্যা মামলায় নির্বিচারে গ্রেফতার করা এবং সরকারের সঙ্গে সমঝোতা করলে এক রাতেই মুক্তি দেওয়া কোনো গণতান্ত্রিক দেশে, কোনো আইনের শাসনের দেশে— এমনকি ডিক্টেটর শাসিত অনেক দেশেও সম্ভব নয়। এতে প্রমাণ হয় বর্তমান আওয়ামী মাফিয়া সরকার পৃথিবীতে সর্বোচ্চ জুলুমের এক অদ্ভুত স্বৈরতান্ত্রিক এবং একনায়কতন্ত্রিক সরকার।’
তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্র বিজ্ঞানের ভাষায় এই সরকারকে নতুন করে সংজ্ঞায়িত করতে হবে। শেখ হাসিনা আজীবন ক্ষমতায় থাকার লিপ্সায় চার বারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বিনা অপরাধে ফরমায়েশি রায়ে কারারুদ্ধ করে রেখে বিষ প্রয়োগে হত্যার চেষ্টা করছে— এ কথা শতভাগ সত্য। সব কিছুর হিসাব রাখছেন দেশের জনগণ। এই নজিরবিহীন অবিচারের বিচার একদিন হবে।’
বাংলাবার্তা/এমপি