সংবাদ সম্মেলনে কথা বলছেন রুহুল কবির রিজভী (ছবি: সংগৃহীত)
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘শেখ হাসিনা তার অস্তিত্ব আধিপত্ববাদী শক্তির কাছে বিলীন করে দিয়েছেন। অন্য দেশের সরাসরি মদদে জনগণের ভোটাধিকার গলাটিপে হত্যা করে ইলেকশন ক্রাইম করেছেন। এখন তার পক্ষে কোনো দেশ নেই। গণবিচ্ছিন্ন স্বৈরাচার শেখ হাসিনা বুঝে গেছেন গণতান্ত্রিক বিশ্ব এবং দেশের সমস্ত জনগণ তার বিপক্ষে। তার নিরাপদ প্রস্থানের পথও সংকুচিত হয়ে গেছে। এখন তার ভরসা একনায়কতান্ত্রিক কয়েকটি দেশ। তবে, এভাবে তিনি টিকে থাকতে পারবেন না। জনগণের আন্দোলনে তার পতন হবে।’
রোববার (১৪ জানুয়ারি) দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
‘রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং ফিলিস্তিনে ইসরাইলের হামলার কারণে জিনিসের দাম বেড়েছে। এর মধ্যে আবার আমেরিকা হুতিদের আক্রমণ করল। এ কারণে অর্থনীতিতে আরেকটা ধাক্কা আসবেই’— প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়ার এমন বক্তব্যের জবাবে রিজভী বলেন, ‘ইউক্রেন যুদ্ধসহ অন্য কোনো কারণে দেশে দ্রব্যমুল্যের দাম বাড়েনি। দ্রব্যমূল বেড়েছে সরকারের সীমাহীন লুটপাটের কারণে।’
তিনি বলেন, ‘উদ্ভট উন্নয়নের নামে বাংলাদেশে মহাসমারোহে দুর্নীতি আর লুটপাট চলছে। মেগা প্রকল্পের নামে মেগা দুর্নীতি হচ্ছে। এটি এখন সর্বজনস্বীকৃত। সরকার দলীয় লোকেরা সমস্ত ব্যাংক লুটে নিয়েছে। মন্ত্রী ও দলীয় ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণে সকল পণ্যের মূল্য এখন আকাশচুম্বী। দেশ থেকে লাখ লাখ কোটি টাকা আওয়ামী লীগের লোকজন পাচার করে দিয়েছে।’
রিজভী বলেন, ‘এক কেজি চালের দামে এক কেজি আলু কেনা যায় না। এই সবজির সিজনেও সব সবজির চড়া দাম। পেঁয়াজ, কাঁচা মরিচের দাম আকাশচুম্বী। মানুষ ক্ষুধার জ্বালায় সন্তান বিক্রি করে আহাজারী করছে। কিন্তু ক্ষমতাসীন দলের লোকেরা সুখস্বর্গের মধ্যে বাস করছে। তাই ক্ষুধার্ত জনগণের সঙ্গে মশকরা করতে তাদের বাধে না। সরকারের মহাদুর্নীতি এবং অর্থ পাচারের কারণেই অর্থনীতিতে বারবার ধাক্কা আসছে।’
‘নির্বাচনের পর বিএনপি আবারও নতুন করে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। সরকার যাতে ক্ষমতায় থাকতে না পারে, সে জন্য তারা বিদেশি বন্ধুদের দিকে তাকিয়ে আছে। তারা কম্বোডিয়ার মতো নিষেধাজ্ঞা আশা করছে’— আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের দেওয়া এমন বক্তব্যের জবাবে রিজভী বলেন, ‘বিএনপি নয়, আওয়ামী লীগই বিদেশিদের ওপর ভর করে ক্ষমতায় টিকে আছে। ডামি নির্বাচনের মাধ্যমে ডামি সরকার গঠন করে এখন ক্ষমতা হারানোর আতঙ্কে ভুগছে।’
তিনি বলেন, ‘জনগণ থেকে প্রত্যাখ্যাত হয়ে এখন আপনারা ষড়যন্ত্র তথ্য খুঁজছেন। ৭ জানুয়ারি জনগণ আপনাদেরকে চুড়ান্তভাবে লালকার্ড দেখিয়েছে। সেই একদলীয় একতরফা ভুয়া নির্বাচনে ভোটাররা যায়নি। গণমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জাল ভোট ও অনিয়মের হাজারো চিত্র ভাইরাল হয়েছে। শিশুরাও দেদারসে সিল মেরেছে। আগে ভোট কেন্দ্রে গরু ছাগলসহ চতুস্পদ প্রাণীরা বিচরণ করলেও এবারের নির্বাচনে নতুন সংযোজন হয়েছে বানর।’
রিজভী আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগের পরাজিত প্রার্থীরাও এই নির্বাচনকে প্রহসন ও তামাশার নির্বাচন বলে অভিহিত করেছে। এই প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন দেশে-বিদেশে কোথাও গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং উন্নয়ন অংশীদাররা নির্বাচন বাতিল করে নতুন নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘ডামি নির্বাচন এবং চার দিনের মধ্যে বিশ্ব ইতিহাসে দ্রুততম সময়ে কলঙ্কজনক সরকার গঠনের নজিরবিহীন ঘটনার পরও শেখ হাসিনার মধ্যে ন্যুনতম গ্লানী নেই। অপকর্মের মহাসাগরে ডুবে থাকলে মানুষ বিবেকহীন হয়ে পড়ে। সে কারণেই হয়তো প্রধানমন্ত্রী টুঙ্গিপাড়ায় বসে দেশবাসীর সঙ্গে সস্তা রসিকতা করছেন। ফুরফুরে মেজাজে হিন্দি গান ও রবীন্দ্র সঙ্গীত শোনাচ্ছেন। নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি প্রদর্শনের জন্য ডামিদের প্রতিযোগিতার আসর বসানোর স্বীকারোক্তিও দিয়েছেন। টুঙ্গিপাড়ায় দেওয়া শেখ হাসিনার বক্তৃতা শুনে আমি বিস্মিত হয়েছি।’
বাংলাবার্তা/এসএ/এসকে