সংবাদ সম্মেলনে কথা বলছেন রিজভী (ছবি: বাংলাবার্তা)
বিএনপির যুগ্ম সিনিয়র মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘দখলদার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চেতনার স্তরে সুবিচার বলে কিছুই নেই। তিনি দ্রুত হিংসার প্রয়োগে পারঙ্গম। তিনি গণতন্ত্রকে বিকলাঙ্গ করে সর্বগ্রাসী রাষ্ট্রের উদ্ভব ঘটিয়েছেন। ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পরে তিনি ভয়াবহ একক কর্তৃপক্ষ হয়ে উঠেছেন।’
সোমবার (২২ জানুয়ারি) দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, ‘স্বৈরশাসকদের পরিণাম থেকে শিক্ষা গ্রহণ না করে শেখ হাসিনা দেশকে অনিবার্য ধ্বংসের পথে ঠেলে দিয়েছেন। স্বৈরতন্ত্রের পতন নিশ্চিত করতে জনগণের ঐতিহাসিক প্রয়াসের দৃষ্টান্ত তিনি স্মরণে আনতে পারছেন না। কোনো কালেই নিপীড়ক আওয়ামী সরকার সদিচ্ছাপ্রসূত রাজনৈতিক আচরণ করেনি। ওদের হাতের মুঠোয় ধ্বংসের শক্তি আর ভাষায় বিদ্বেষের শক্তি।’
তিনি বলেন, ‘৭ জানুয়ারি ভোট জনগণ প্রত্যাখান করেছে। অনেক অনুনয়—বিনয় আর স্বৈরাচারী উগ্র প্রতিমূর্তি ধারণ করেও ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে নিয়ে যেতে পারেনি। কারণ, জনগণ আগেই টের পেয়েছিল- এরা ভোটকেন্দ্রে লোক সমাগম দেখিয়ে সন্ধ্যা বেলায় পূর্ব নির্ধারিত ব্যক্তিদেরকে সংসদ সদস্য হিসেবে নাম ঘোষণা করবে। সেটি ভোটের দিন অক্ষরে অক্ষরে প্রমাণ হয়েছে।’
রিজভী বলেন, ‘ধোকাবাজির নির্বাচন সম্পন্ন করতে বিএনপির হাজার হাজার নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পাশবিক নিপীড়ন নির্যাতন চালানো হয়েছে। শারীরিক নির্যাতনে অনেকেই কারাগারে মৃত্যুবরণ করেছেন এবং অসংখ্য নেতাকর্মী পঙ্গুত্ববরণ করেছেন। কারা হেফাজতে ও রিমান্ডে নির্যাতন পৃথিবীর সকল জালিমশাহীর রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। কারও হাত—পা ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছে, কারও হাত ও পায়ের নখ তুলে ফেলা হয়েছে, কারও চোখের আলো নিভে গেছে পুলিশের ছোঁড়া শট গানের গুলিতে।’
তিনি বলেন, ‘অনেকে আদালত থেকে জামিন পেলেও কারামুক্তি মিলছে না। জামিনের কাগজ নিয়ে কারাফটক থেকে বের হওয়ার সাথে সাথে আবারও নতুন মামলায় গ্রেফতার করা হচ্ছে। আওয়ামী পুলিশ প্রশাসন বিএনপিসহ গণতন্ত্রকামী দলগুলোর নেতা-কর্মীদের জীবন নিয়ে খেলছে। অবৈধ সরকার যেন নিজেদের টিকিয়ে রাখতে রাষ্ট্রযন্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর।’
রিজভী বলেন, ‘জামিনে মুক্তি পেলেও জেলগেটে অপেক্ষমাণ গোয়েন্দা সংস্থার লোকদের টাকা না দিলে তাদের মুক্তি মিলছে না। অসংখ্য গরীব নেতা-কর্মী জেলগেটের টাকা না দেওয়ার কারণে কারাগারেই ধুকে ধুকে জীবন কাটাচ্ছে। শেখ হাসিনা বিএনপির বিরুদ্ধে প্রতিশোধের হাতিয়ার হিসেবে গড়ে তুলেছেন আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এখন আওয়ামী সুরক্ষাবাহিনীতে পরিণত হয়েছে।’
আরও পড়ুন: কথার বোমায় সরকারকে উৎখাত করা যাবে না: কাদের
তিনি বলেন, ‘গত দেড় দশক ধরে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে ফ্রি লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে বিএনপি নেতাকর্মীদের কাছ থেকে টাকা চুষে নেওয়ার জন্য। আমি মনে করি গণতন্ত্র আদায়ে জনগণের অঙ্গীকার কখনও নিষ্ফল হবে না।’
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুর খায়ের ভূঁইয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, সহ-প্রচার সম্পাদক আসাদুল করীম শাহীনসহ আরও অনেকে।
বাংলাবার্তা/এসএ/এসকে