রুহুল কবির রিজভী (ছবি: বাংলাবার্তা)
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার আঙ্গোরপোতা-দহগ্রাম সীমান্তে বাংলাদেশি রাফিউল ইসলাম টুকলুকে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ গুলি করে হত্যা করেছে। মাত্র ছয় দিন আগে বিজিবি সদস্য সিপাহী মোহাম্মদ রইসুদ্দিনকে ঠাণ্ডা মাথায় গুলি করে হত্যা করে বিএসএফ। কিন্তু আওয়ামী সরকার সীমান্তে অব্যাহত এই নির্মম হত্যাকাণ্ড নিয়ে প্রতিবাদ তো দূরের কথা টু শব্দ পর্যন্ত করার সাহস দেখাতে পারেনি। উল্টো ভারতের তোষামোদিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন মন্ত্রীরা।’
সোমবার (২৯ জানুয়ারি) দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, ‘কেবল সীমান্তে পাখির মতো গুলি করে হত্যা নয়, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঢুকে লুটপাট, হামলা, ভাংচুর, ধর্ষণের ঘটনা ঘটালেও কোনো প্রতিবাদ করেন না শেখ হাসিনার নতজানু সরকার। ক্ষমতার জন্য একান্ত বাধ্যগতভাবে গোলামি করছেন তিনি।’
রিজভী বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে পাকিস্তান, চীন, নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার ও বাংলাদেশের স্থল সীমান্ত রয়েছে। আর সমুদ্র সীমান্ত শ্রীলঙ্কার সঙ্গে। আমরা জানি, এই সবগুলো দেশের সীমান্তেই ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বা বিএসএফ মোতায়েন আছে। বাংলাদেশ ছাড়া অন্য ৫টি দেশের সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিরীহ কোনো লোক নিহত হওয়ার খবর খুব একটা চোখে পড়ে না।’
তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সীমান্ত আইনে কোনো দেশ অন্য দেশের নিরস্ত্র নাগরিককে হত্যা করতে পারে না। কেউ যদি অন্যায় করে তাহলে তাকে গ্রেফতার করে সে দেশের আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান থাকলেও বিএসএফ তার তোয়াক্কা করে না। তারা ‘ট্রিগার হ্যাপী নীতি’তে কাজ করছে। এটা আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী ভয়াবহ অপরাধ।’
রিজভী বলেন, ‘বাংলাদেশ ও ভারতে চোরাচালানের শাস্তি নিশ্চয়ই মৃত্যুদণ্ড বা গুলি করে মেরে ফেলা নয়। আর বিএসএফের সেই শাস্তি দেওয়ার অধিকারও নেই। কিন্তু বিএসএফ বেপরোয়া মনোবৃত্তি নিয়ে হত্যার নেশায় মেতে উঠেছে। শেখ হাসিনার অবৈধ সরকারের প্রতি ভারতের সমর্থনের বিনিময় যদি নিরীহ বাংলাদেশি নাগরিক অথবা বিজিবির সদস্যের প্রাণ হয়, তাহলে এটি নিশ্চিত বাংলাদেশের স্বাধীনতা এখন অরক্ষিত। আর অরক্ষিত স্বাধীনতাই পরাধীনতা।’
তিনি বলেন, ‘ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যে সুষ্পষ্টভাবে প্রমাণ হয়, ভারতের সহযোগিতায় বিনা ভোটে তামাশার নির্বাচনের মাধ্যমে তারা ক্ষমতা আবারও দখল করেছে। ভারতের প্রতিভু হয়ে শেখ হাসিনা বাংলাদেশে এক সর্বনাশা কতৃর্পক্ষে পরিণত হয়েছেন। জনসমর্থনহীন শেখ হাসিনা একনায়কতন্ত্রের দৌরাত্মে এক উদ্ভট, দৃষ্টান্তহীন এবং নিষ্ঠুর খামখেয়ালী রাজার মতো ভারতকে খুশী করতেই ব্যস্ত রয়েছেন। শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে ভারতের রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক সম্প্রসারণের আওতার মধ্যে ক্রমাগতভাবে ঠেলে দিচ্ছেন।’
আরও পড়ুন: জনগণের ভোটে আ.লীগ ক্ষমতায়, কারও দয়ায় নয়: কাদের
রিজভী বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব দুর্বল করে একটি ডামি রাষ্ট্র বানানোর সুদুরপ্রসারী পরিকল্পনা কার্যকর করছেন তিনি। বিনাভোটে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার জন্য তারা পুরো দেশটাকেই ডামি রাষ্ট্র বানিয়ে ফেলেছে। আওয়ামী লীগের নেতাদের কথায় স্পস্ট যে, তাদের ক্ষমতার উৎস জনগণ নয়। ক্ষমতার উৎস ভারত। আওয়ামী লীগ সরকার বাংলাদেশের জনগণের ভোটের আশা করে না এবং বাংলাদেশের জনগণের ভোটের প্রতি আস্থা নেই। ভারত সরকারের ক্ষমতার জোরে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আছে। আওয়ামী লীগ এখন একটি ভারতীয় পণ্যে পরিণত হয়েছে। যা স্বাধীন, সার্বভৌম রাষ্ট্রের স্বার্থ ও মর্যাদার পরিপন্থী।’
তিনি বলেন ‘আওয়ামী লীগের নেতারা ভারতের গোলামি করলেও এ দেশের মানুষ ভারতের গোলামির জিঞ্জির পরিধান করবে না। ঐতিহাসিকভাবেই যে কোনো ধরনের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের সাহসী জনগণের সর্বশক্তি দিয়ে প্রতিরোধের বীরত্বগাঁথা ঐতিহ্য রয়েছে। ভারতের জনগণের সঙ্গে আমাদের কোনো দ্বন্দ্ব নাই। তবে আমাদের আপত্তি ভারতের শাসকদের পলিসি, নীতি নিয়ে। তাই দল-মত নির্বিশেষে ভারতীয় এই আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে হবে।’
বাংলাবার্তা/এসএ/এসকে