ফাইল ফটো
জুলাইয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন একপর্যায়ে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে রূপ নেয়। এতে ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। হাসিনা ভারতে পলায়ন করেন। আর বেশিরভাগ সক্রিয় নেতাকর্মী চলে যান আত্মগোপনে।
পতনের সাড়ে ৩ মাস পেরিয়ে গেছে। পরিস্থিতি দিনকে দিনকে খারাপের দিকেই যাচ্ছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারছেন না। স্বাভাবিক জীবনে ফেরার চেষ্টা করলেই ক্ষমতায় থাকতে যাদের উপর নির্যাতন-অন্যায়-জুলুম করেছেন সেইসব মানুষ ও দলের রোষে পড়ছেন। জানা গেছে, যেসব নেতাকর্মীরা দেশ ছাড়তে পারেননি বা যাদের সামর্থ নেই; তারা দেশেই গা ঢাকা দিয়ে রয়েছেন।
এদিকে, দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া নেতাকর্মীরা বিদেশেও খুব ভালো নেই। সেখানেও তারা এক ধরনের আত্মগোপনে আছেন। তারা একেবারেই প্রকাশ্যে আসছেন না। দরকার না হলে বাইরেও বের হচ্ছেন না। যারা বাইরে বের হচ্ছেন, তারাও আবার এমনভাবে বের হচ্ছেন যেন কেউ তাদের চিনতে না পারে।
জানা গেছে, পালিয়ে যাওয়া নেতাকর্মীদের অধিকাংশই রয়েছেন ভারতে। এদের বড় একটা অংশ আবার কলকাতায়। এদের মধ্যে যাদের সামর্থ কম, তারা আবার সেখানে আয়ের পথ খুঁজছেন। এ ছাড়া, অনেকে আমেরিকা, যুক্তরাজ্য, কানাডা, ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া ও মধ্যপাচ্যের দেশগুলোয় পারি জমিয়েছেন।
এদিকে, দলটির শীর্ষ পর্যায়ের বেশ কিছু নেতা, সাবেক মন্ত্রী, এমপি, জেলা, উপজেলা পর্যায়ের নেতা এবং সহযোগী সংগঠনের নেতাাং গ্রেফতারর হয়ে কারাগারে রয়েছেন।
গ্রেফতার আতঙ্কে আছেন অন্য নেতাকর্মীরাও। কর্মী পর্যায়েও অনেকে গ্রেফতার হয়েছেন। গ্রেফতারের বাইরে থাকা বেশিরভাগের নামেই মামলা হয়েছে। কারো কারো বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দায়ে হয়েছে।
সূত্রগুলো আরও জানায়, আত্মগোপনে থাকা নেতা-কর্মীদের অবস্থা দিন দিন শোচনীয় হয়ে উঠছে। এভাবে তাদের আরও অনেক মাস থাকতে হতে বলে তারা আশঙ্কা করছেন। এই পরিস্থিতিতে তাদের অনেকেই দল বা রাজনীতির কথা এখন ভাবতে পারছেন না। নিজের অবস্থা কী হবে সে চিন্তাই এখন তাদের কাছে বড় হয়ে উঠেছে।
আওয়ামী লীগের মধ্যম পর্যায়ের এক নেতার সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি বলেন, ভালো নেই, কেমন আর থাকতে পারি। আছি কোনো রকম, চুপচাপ নিরাপদ থাকার চেষ্টা করছি ৷ জানি না কতদিন এভাবে থাকতে হবে, কত দিন সেফ থাকতে পারবো।
এদিকে দলের দায়িত্বশীল নেতাদের সঙ্গে বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মী যারা যোগাযোগ করেন, তারা ওই নেতাদের কাছ থেকে সুনির্দিষ্ট কোনো পরামর্শ বা নির্দেশনা পাচ্ছে না বলে জানা গেছে। নেতারা শুধু সবাইকে নিরাপদে থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন আর ধৈর্য ধরতে বলছেন। বলছেন, হয় তো কিছুদিনের মধ্যে বা কয়েক মাসের মধ্যে পরিস্থিতি অনুকূলে আসবে, স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারবেন।
দলটির জেলা পর্যায়ের এক নেতা জানান, দু-একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতার সাথে মাঝেমধ্যে কথা হয়, তারা এ মুহূর্তে তেমন কিছু বলতে পারছেন না। তারা আশা দিচ্ছেন, পরিস্থিতি ঠিক হয়ে যাবে। ধৈর্য ধরতে বলছেন, সব নেতা-কর্মীকে ধৈর্য ধরতে বলেন।
রাজনীতি বিশ্লেষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ মনে করেন, দেশের রাজনীতিতে এ ধরনের ঘটনা নতুন নয়। তাই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের জন্য এই পরিস্থিতি কতদিন থাকতে হবে; সেটি দেশের জনগণের ওপর নির্ভর করবে। এ ব্যাপারে জনগণের ভূমিকাই সব থেকে বড়।
বাংলাবার্তা/এমআর