ছবি: বাংলাবার্তা
যশোরের শিল্প ও বাণিজ্য নগরী নওয়াপাড়া পৌর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুজ্জামান জনির দলীয় পদ স্থগিতকে কেন্দ্র করে দুর্দিনে রাজপথে থাকা নেতাকর্মীদের বৃহৎ একটি অংশ সাংগঠনিকভাবে স্থবির হয়ে পড়েছেন। এ অবস্থায় সুযোগ সন্ধানীরা বিএনপির নাম ভাঙিয়ে টার্মিনাল, ব্রোকার্স ইউনিয়ন, মোটরশ্রমিক ইউনিয়ন, নৌঘাট দখল-হ্যান্ডেলিং শ্রমিক সর্দার নিয়োগ দিতে ব্যবসায়ীদের উপর বলপ্রয়োগ-চাঁদাবাজি, মামলা বাণিজ্যে মেতে উঠেছে। এছাড়াও দলের নাম ভাঙিয়ে প্রভাব বিস্তার করে বাজার কমিটি, মসজিদ-মাদ্রাসা-বিদ্যালয়ের কমিটি গঠনে বলপ্রয়োগ এবং বিভিন্ন ডিলার নিয়োগে বাণিজ্যে জড়িয়েছে একাধিক চক্র।
জনগণের কাছে বিএনপির স্বচ্ছতা-জনপ্রিয়তা সৃষ্টি করতে দলীয় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বার্তার প্রতিফলন ঘটানোর পরিবর্তে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সর্ববৃহৎ এই বাণিজ্য নগরীতে জনমনে চরম অসন্তোষ সৃষ্টি করছে। এমনকি, স্বৈরাচার হাসিনার আমলের মতো এই বন্দরের প্রতিটি ক্ষেত্রে বিএনপির নাম ভাঙিয়ে সুবিধাভোগীরা ঢুকে পড়েছে। বিশেষ করে ট্রাক টার্মিনাল স্লিপ, ঘাট শ্রমিক সর্দার নিয়োগে প্রভাব বিস্তারে ব্যবসায়ী মহলে বাড়ছে অসন্তোষ। অনেকেই ভয়ে মুখ খুলতে সাহস না পেলেও নিজেদের মধ্যে বলছেন, স্বৈরাচার পালিয়ে গেলেও আমাদের (ব্যবসায়ী) লাভ হয়নি। শুধুমাত্র তোলা আদায়কারী ব্যক্তির পরিবর্তন হয়েছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে বরং জটিলতা বেশি সৃষ্টি করছে।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের দুঃশাসনের টানা সাড়ে ১৫ বছর স্থানীয় আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী ও পুলিশের ভীতিকর পরিবেশের মধ্যেও আন্দোলন-সংগ্রামে পৌর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুজ্জামান জনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। প্রতিটি বিষয়ে জেলা-উপজেলা নেতাদের সাথে পরামর্শ করে মিছিল-সমাবেশ করেছেন নওয়াপাড়ায়। একারণেই তাকে অসংখ্যবার মিথ্যা মামলায় জেলে যেতে হয়েছে। মামলার তালিকাও অনেক লম্বা। নিজের ব্যবসা-বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। তবুও হাল ছাড়েননি এ নেতা।
এছাড়া দলের বিপদগ্রস্থ নেতাকর্মীদের আর্থিক সহযোগিতার পাশাপাশি করোনা মহামারি, বন্যা-শীতে নিজস্ব অর্থে সাহার্য্য অব্যহত রেখেছিলেন। ফলে তাকে ঘিরে একটি শক্তিশালী সমর্থকগোষ্ঠি সৃষ্টি হয়।
ছাত্রআন্দোলনের শুরু থেকেই দলীয় নির্দেশনা মোতাবেক আসাদুজ্জামান জনি নওয়াপাড়ায় আন্দোলন-সংগ্রামে নজির সৃষ্টি করে আলোচনায় আসেন। তবে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পলায়নের পর থেকেই আসাদুজ্জামান জনির বিরুদ্ধে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চাঁদাবাজি-জমি দখল, ঘরবাড়ি-ঘাট দখলের মতো গুরুতর অপকর্মের তথ্য ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন মাধ্যমে। একপর্যায়ে জেলা বিএনপি তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়ার পাশাপাশি পরিস্থিতি সামাল দিতে আসাদুজ্জামান জনির পদ স্থগিত করে। এছাড়াও জেলা বিএনপির একাধিক নেতা অভিযোগের তদন্ত করতে সেইসব ভুক্তভোগীদের সাক্ষাত গ্রহণ করেন।
অন্যদিকে, ওই সকল ভুক্তভোগীরা প্রকৃত ঘটনা জানিয়ে এতে আসাদুজ্জামান জনি সংশ্লিষ্ট নেই মর্মে লিখিত দেন। তবুও দলের সিদ্ধান্ত বহাল থাকে। এতে আস্তে আস্তে জনি সমর্থকদের মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই গুরুত্বপূর্ণ নওয়াপাড়া বন্দর এলাকায় চোখের সামনে বিএনপির নাম ভাঙিয়ে দখল-চাঁদাবাজি করতে দেখলেও প্রতিহত করার পরিবর্তে নীরব দর্শকের ভূমিকায় থাকছেন দুর্দিনে নেতৃত্ব দেওয়া একাংশের এই নেতাকর্মীরা।
বাংলাবার্তা/এমআর