ছবি : সংগৃহীত
যশোরের শিল্প ও বাণিজ্য নগরী নওয়াপাড়া পৌর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুজ্জামান জনির দলীয় পদ স্থগিতের পর এবার তাঁর জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানিয়ে একটি আবেগঘন স্ট্যাটাস দিয়েছেন কেন্দ্রীয় বিএনপির খুলনা বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত।
সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) নিজের ফেসবুক পেজে বিএনপি নেতা জনির সাথে তোলা একটি ছবি পোস্ট করে তিনি লেখেন- ‘আসাদুজ্জামান জনি- দল অন্তঃপ্রাণ, সাহসী ও চুড়ান্ত বেয়াড়া এক রাজনৈতিক কর্মী। দেশনেত্রী ম্যাডাম খালেদা জিয়া’র মুক্তি তথা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লড়াই এর সংকটময় মূহূর্তগুলোতে অভয়নগর-নওয়াপাড়ার অধিকাংশ পদধারীরা যখন দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ, তখন এই বেয়াদব জনিরাই রাজপথ আঁকড়ে ধরে ছিল। তাই আপনারা সবাই ওদেরকে ভুলে গেলেও আমরা ওদের অবদানের কথা কৃতজ্ঞচিত্তেই স্মরণ করবো। শুভ জন্মদিন জনি! পদে থাকিস, আর না থাকিস, তুই আমার ভাই। তোর জন্য অফুরন্ত দোয়া ও নিরন্তর শুভকামনা।’
এদিকে, কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতার এই স্ট্যাটাস পড়ে অসংখ্য নেতা-কর্মীরা নানা ধরণের মন্তব্য লিখছেন। কেউ কেউ মন্তব্য করেছেন, ‘এর থেকে বড় পাওয়া আর কিছুই হতে পারে না।’
কেউ মন্তব্য করেছেন, ‘এই লেখা পড়ে দলের দুঃসময়ের কর্মীদের আপনার প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস আরো বেড়ে যাবে। এম টি বেনজির মন্তব্য করেছেন, ত্যাগী কর্মীদের ভালোবাসা ও মূল্যায়ন করায় আপনি অনন্য! রাজু আহম্মেদ লিখেছেন, শত কোটি টাকা দিয়েও এই ভালোবাসা পাওয়া যায় না। মো. মাসুদ রানা লিখেছেন, জনি ভাইয়ের রাজনৈতিক জীবন স্বার্থক।’
এর আগে, ‘নওয়াপাড়ায় বিএনপি নেতা জনিকে ঘিরে স্থবির নেতাকর্মীরা’ শিরোনামে বাংলা বার্তায় সংবাদ প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটি নিচে দেওয়া হলো—
যশোরের শিল্প ও বাণিজ্য নগরী নওয়াপাড়া পৌর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুজ্জামান জনির দলীয় পদ স্থগিতকে কেন্দ্র করে দুর্দিনে রাজপথে থাকা বৃহৎ একটি অংশের নেতাকর্মীরা সাংগঠনিকভাবে স্থবির হয়ে পড়েছে। এই সুযোগে সুযোগসন্ধানীরা বিএনপির নাম ভাঙিয়ে টার্মিনাল, ব্রোকার্স ইউনিয়ন, মোটরশ্রমিক ইউনিয়ন, নৌঘাট দখল-হ্যান্ডেলিং শ্রমিক সর্দার নিয়োগ দিতে ব্যবসায়ীদের উপর বলপ্রয়োগ-চাঁদাবাজি, মামলা বাণিজ্যে মেতে উঠেছে বলে উল্লেখ করা হয়। এছাড়াও দলের নাম ভাঙিয়ে প্রভাব বিস্তার করে বাজার কমিটি, মসজিদ-মাদ্রাসা-বিদ্যালয়ের কমিটি গঠনে বলপ্রয়োগ ও বিভিন্ন ডিলার নিয়োগে অর্থবাণিজ্যে জড়িয়েছে সুবিধালোভী একাধিক চক্র।
জনগণের কাছে বিএনপির স্বচ্ছতা-জনপ্রিয়তা সৃষ্টি করতে দলীয় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বার্তার প্রতিফলন ঘটানোর পরিবর্তে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সর্ববৃহৎ এই বাণিজ্য নগরীতে জনমনে চরম অসন্তোষ সৃষ্টি করছে।
স্থানীয়দের বরাতে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, আওয়ামী লীগের দুঃশাসনের টানা সাড়ে ১৫ বছর স্থানীয় আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী ও পুলিশের ভীতিকর পরিবেশের মধ্যেও আন্দোলন-সংগ্রামে পৌর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুজ্জামান জনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। প্রতিটি বিষয়ে জেলা-উপজেলা নেতাদের সাথে পরামর্শ করে মিছিল-সমাবেশ ঘটিয়েছেন নওয়াপাড়ায়। একারণেই তাকে অসংখ্যবার মিথ্যা মামলায় জেলে যেতে হয়েছে। মামলার তালিকাও অনেক লম্বা। নিজের ব্যবসা-বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। তবুও হাল ছাড়েননি এ নেতা। এছাড়া দলের বিপদগ্রস্থ নেতাকর্মীদের আর্থিক সহযোগিতার পাশাপাশি করোনা মহামারি, বন্যা-শীতে নিজস্ব অর্থে সাহার্য্য অব্যহত রেখেছিলেন। ফলে তাকে ঘিরে একটি শক্তিশালী সমর্থকগোষ্ঠি সৃষ্টি হয়।
ছাত্রআন্দোলনের শুরু থেকেই দলীয় নির্দেশনা মোতাবেক আসাদুজ্জামান জনি নওয়াপাড়ায় আন্দোলন-সংগ্রামে নজির সৃষ্টি করে আলোচনায় আসেন। তবে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পলায়নের পর থেকেই আসাদুজ্জামান জনির বিরুদ্ধে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চাঁদাবাজি-জমি দখল, ঘরবাড়ি-ঘাট দখলের মতো গুরুতর অপকর্মের তথ্য ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন মাধ্যমে। একপর্যায়ে জেলা বিএনপি তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়ার পাশাপাশি পরিস্থিতি সামাল দিতে আসাদুজ্জামান জনির পদ স্থগিত করে। এছাড়াও জেলা বিএনপির একাধিক নেতা অভিযোগের তদন্ত করতে সেইসব ভুক্তভোগীদের সাক্ষাত গ্রহণ করেন। অন্যদিকে, ওই সকল ভুক্তভোগীরা প্রকৃত ঘটনা জানিয়ে এতে আসাদুজ্জামান জনি সংশ্লিষ্ট নেই মর্মে লিখিত দেন। তবুও দলের সিদ্ধান্ত বহাল থাকে। এতে আস্তে আস্তে জনি সমর্থকদের মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই গুরুত্বপূর্ণ নওয়াপাড়া বন্দর এলাকায় চোখের সামনে বিএনপির নাম ভাঙিয়ে দখল-চাঁদাবাজি করতে দেখলেও প্রতিহত করার পরিবর্তে নীরব দর্শকের ভূমিকায় থাকছেন দুর্দিনে নেতৃত্ব দেওয়া একাংশের এই নেতাকর্মীরা।
বাংলাবার্তা/এমআর