
ফাইল ছবি
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে গভীর শঙ্কা প্রকাশ করেছে বিএনপি। দলটি মনে করছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সুনির্দিষ্ট নির্বাচনি রোডম্যাপ প্রকাশে কৌশলে বিলম্ব করছে। সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে পরস্পরবিরোধী তথ্য আসায় সন্দেহ আরও ঘনীভূত হচ্ছে বলে মনে করছেন দলটির নেতারা।
সোমবার বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে নির্বাচনকেন্দ্রিক এ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। দলীয় সূত্র জানায়, বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, আগামী এপ্রিল ও মে মাসজুড়ে সভা-সমাবেশসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে বিএনপি রাজপথে সক্রিয় থাকবে।
আওয়ামী ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ
স্থায়ী কমিটির বৈঠকে অভিযোগ করা হয়, আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত কিছু ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান একাধিক রাজনৈতিক দলকে আর্থিক সুবিধা দিচ্ছে। বিশেষ করে একটি ইসলামী দল এবং নতুন একটি দলের নেতৃত্বে থাকা ব্যক্তিরা এসব প্রতিষ্ঠান থেকে সুবিধা নিচ্ছেন বলে দাবি করেন বিএনপি নেতারা। তাদের মতে, এর ফলে দুর্নীতি বাড়ছে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে।
সরকার নির্বাচন নিয়ে গড়িমসি করছে
বিএনপি নেতাদের মতে, সরকার নির্বাচনকে দীর্ঘায়িত করার চেষ্টা করছে। গণপরিষদ নির্বাচন, সেকেন্ড রিপাবলিক ও স্থানীয় সরকারব্যবস্থার সংস্কারের কথা বলে সরকার জাতীয় নির্বাচন এড়িয়ে যেতে চাইছে। এতে সরকারের একাধিক উপদেষ্টার ভূমিকা রয়েছে বলে সন্দেহ প্রকাশ করেন তারা।
বৈঠকে আরও বলা হয়, সরকার বিএনপিকে প্রধান প্রতিপক্ষ ভাবছে না, বরং নবগঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র সংগঠনগুলোকেই বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে। বিএনপি নেতাদের ধারণা, বর্তমান সরকার সহজে ক্ষমতা ছাড়তে চাইবে না, তাই রাজনৈতিক চাপ বাড়ানোর জন্য দলটি আন্দোলন জোরদার করবে।
বিদেশি কূটনীতিকদের বার্তা
স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বিএনপির শীর্ষ নেতারা জানান, বিভিন্ন বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে আলোচনার পর তারা অনুধাবন করেছেন যে, বাংলাদেশের জন্য কোনো ইতিবাচক বার্তা নেই। তাই দলের নেতাদের আরও সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের উদ্যোগ নিয়ে প্রশ্ন
বৈঠকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের ভূমিকা নিয়েও আলোচনা হয়। বিএনপি নেতারা প্রশ্ন তুলেছেন, সংলাপে কারা থাকবে? শুধু নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল, নাকি অনিবন্ধিত সংগঠনও যুক্ত হবে? এ ক্ষেত্রে জামায়াতের ভূমিকা কী হবে? এ বিষয়ে কমিশনের সুস্পষ্ট অবস্থান প্রয়োজন বলে মত দেন নেতারা।
সংলাপের প্রস্তাব নিয়ে সিদ্ধান্ত আসছে
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সম্প্রতি রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে ১৬৬টি সংস্কার সুপারিশ সংবলিত প্রস্তাব পাঠিয়েছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা ইতোমধ্যে চিঠির জবাব প্রস্তুত করতে বৈঠক করেছেন। দলের নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, দু-একদিনের মধ্যেই কমিশনকে আনুষ্ঠানিক জবাব দেওয়া হবে।
বিএনপি মনে করে, নির্বাচন নিয়ে চলমান অনিশ্চয়তা দূর করতে দ্রুত একটি স্বচ্ছ রোডম্যাপ ঘোষণা করা উচিত। এজন্য দলটি রাজপথে কর্মসূচি চালিয়ে যাবে এবং সরকারের ওপর রাজনৈতিক চাপ বাড়ানোর কৌশল গ্রহণ করবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ