
ফাইল ছবি
দেশে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আওয়ামী লীগের একশোরও বেশি মন্ত্রী, সংসদ সদস্য এবং সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত ও মামলা দায়ের করেছে। এতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার পরিবার, সাবেক মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, উপদেষ্টা এবং আমলারা জড়িত রয়েছেন। গত সাত মাসে এসব মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে দুদক সূত্র জানিয়েছে।
এদিকে, গত বৃহস্পতিবার, অর্থ আত্মসাৎ, জালিয়াতি এবং অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সাবেক মন্ত্রী আমির হোসেন আমু ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা এবং শেখ হাসিনার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের বিরুদ্ধে দুদক মামলা দায়ের করেছে।
দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো: আক্তার হোসেন জানিয়েছেন, প্রতিটি মামলার তদন্ত সময়মতো সম্পন্ন হবে। তিনি আরও জানিয়েছেন যে, শেখ হাসিনাসহ প্রায় দেড় শতাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তির বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। অনেকের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শেষে মামলা করা হয়েছে, বাকিদের বিরুদ্ধেও মামলা প্রস্তুতি চলছে।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, "জনগণ প্রত্যাশা করে, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হোক। যদি দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা না নেয়া হয়, তবে দুদক নিয়ে জনগণের হতাশা আরও বাড়বে।"
এছাড়া, প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ এবং জালিয়াতি নিয়ে শেখ হাসিনা, তার বোন শেখ রেহানা ও পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে গত জানুয়ারিতে মোট ৯টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। প্রায় ১৫০টি মামলা হয়েছে শেখ হাসিনার উপদেষ্টা, সংসদ সদস্য, আমলা ও পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে।
গত বছর ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর শেখ হাসিনা সরকার পতন হয় এবং এর পর থেকেই তার শাসনামলের প্রায় ৩০০ প্রভাবশালী ব্যক্তির বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু হয়। দুদক এই সময়ে কয়েকটি বিতর্কিত ব্যবসায়ী গ্রুপ এস আলম ও বেক্সিমকোসহ আরও কিছু প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির সম্পদ জব্দ করেছে।
এদিকে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, শেখ রেহানা, তার মেয়ে আজমিনা সিদ্দিক, টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক এবং সাবেক সামরিক উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিকসহ একাধিক নেতার বিরুদ্ধে মামলার তদন্ত চলছে।
দুদকের সুত্রে জানা যায়, গত ১৫ বছরে বড় বড় প্রকল্পে দুর্নীতি ঘটে এবং প্রায় ১৬ হাজার ব্যক্তির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে, এর মধ্যে ৮০% অভিযোগ আসছে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর।
এছাড়া, বিভিন্ন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অবৈধ সম্পদ অর্জন, বিদেশে টাকা পাচারের অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে। ইতোমধ্যে, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ, সাবেক নৌ পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানসহ একাধিক শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে তদন্ত ও মামলা চলছে।
এ সকল মামলা ও তদন্ত দেশের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক মহলে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি করেছে এবং দুদক কঠোরভাবে আইন প্রয়োগ করতে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ।
বাংলাবার্তা/এমএইচ