
ছবি: সংগৃহীত
জুলাই আন্দোলনের চেতনায় গঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এর নেতারা এই ঈদে নিজেদের নির্বাচনী প্রস্তুতি তুঙ্গে নিয়ে গেছেন। রমজান মাসে দলের নেতারা ইফতার মাহফিল আয়োজন এবং নির্বাচনী জনসংযোগে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। রমজান শেষে ঈদের পর আরও জোরালোভাবে নির্বাচনী প্রচারণায় নামবে এনসিপি।
ঈদে নির্বাচনী জনসংযোগ ও শোডাউন
এনসিপি’র নেতারা ঈদ উদযাপন উপলক্ষে নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় ফিরে গিয়ে স্থানীয় জনগণের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করছেন। দলটি জানায়, ঈদের ছুটির সময় জনসংযোগ বাড়ানোর জন্য নেতারা এলাকায় পায়ে হেঁটে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন এবং তাদের পরিকল্পনায় প্রতিটি নেতাকে নিজের সংসদীয় আসনে শ্রমিক, দিনমজুরদের মনোভাব বোঝার এবং তারুণ্যকে আকর্ষণ করে ভোটব্যাংক বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে নেতাদের মধ্যে কিছু শোডাউন নিয়ে সমালোচনা তৈরি হয়েছে। কিছু এলাকায় নেতাদের জনসংযোগকালে হামলার ঘটনাও ঘটেছে।
এনসিপি’য়ের যুগ্ম আহ্বায়ক ড. আতিক মুজাহিদ জানান, দলের নেতারা ঈদ উপলক্ষে এলাকাবাসীর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। তিনি বলেন, "আমরা সাধারণ মানুষের কথা শোনার চেষ্টা করছি এবং আমাদের প্রচারণা এমনভাবে চালানোর চেষ্টা করছি যাতে সাধারণ মানুষ আমাদের সঙ্গে সংযুক্ত হয়।"
নির্বাচন ও আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী
এনসিপি নেতাদের মতে, ঈদের পর দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম ত্বরান্বিত হবে এবং তৃণমূল নেতাকর্মীদের সদস্য ফরম পূরণের মাধ্যমে সংগঠন আরও শক্তিশালী হবে। দলের নেতৃত্ব জানায়, দলের বিভিন্ন নেতাদের নির্বাচনী এলাকায় প্রস্তুতি প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। এনসিপির প্রধান নেতাদের মধ্যে আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ঢাকা-১১ (রামপুরা-বনশ্রী) থেকে নির্বাচনে প্রার্থী হতে চলেছেন। এছাড়া অন্যান্য নেতারা নিজেদের নির্বাচনী আসনে জনসংযোগ শুরু করেছেন।
দলটির নির্বাচনী পরিকল্পনায় প্রত্যেক নেতাকে তাদের নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় জনসংযোগ এবং সাংগঠনিক কার্যক্রম চালানোর জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। দলীয় নির্দেশনায় বলা হয়েছে যে, যতটা সম্ভব কম খরচে জনসংযোগ করা এবং অর্থের উৎস নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি না করা উচিত।
সমালোচনার মুখে সারজিস আলম ও হামলার অভিযোগ
দলের উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলমের একটি গাড়িবহরের জনসংযোগকে কেন্দ্র করে ব্যাপক সমালোচনা তৈরি হয়েছে। পঞ্চগড়ে তার শতাধিক গাড়ির বহর নিয়ে জনসংযোগ পরিচালনা এবং আর্থিক উৎস নিয়ে উঠা প্রশ্ন নিয়ে দলের মধ্যে বিতর্ক সৃষ্টি হয়। বিশেষত, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ ধরনের শোডাউনের সমালোচনা করেছেন।
এছাড়া, গত ২৪ মার্চ নোয়াখালীর জাহাজমারা এলাকায় এনসিপির যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসউদের ওপর হামলা হয়েছে। হামলার জন্য বিএনপির নেতাকর্মীদের দায়ী করা হয়েছে। এই হামলা নিয়ে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে এনসিপি এবং ঘটনাস্থলে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে দলের নেতাকর্মীরা।
নেতৃবৃন্দের মন্তব্য
এনসিপি’র যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরা শারমিন বলেন, "নেতারা ব্যক্তিগতভাবে জনসংযোগ করছেন, তারা সাধারণ মানুষের কথা শুনছেন এবং নিজেদের পরিচিতি বাড়াচ্ছেন। ঈদের পরে আমরা দলের সাংগঠনিক কাঠামো শক্তিশালী করব এবং সদস্য সংগ্রহ শুরু করব।"
এনসিপি নেতারা জানিয়েছেন, নির্বাচনের সময় প্রার্থী নির্ধারণ হবে দলের অভ্যন্তরীণ সিদ্ধান্তের মাধ্যমে এবং এটি সম্পূর্ণ দলীয় সিদ্ধান্তের ব্যাপার হবে।
এনসিপি নেতারা ঈদের পর দলের সাংগঠনিক কাঠামো পুরোদমে শুরু করার জন্য প্রস্তুত এবং আগামী জাতীয় নির্বাচনের জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছেন।