ছবি: সংগৃহীত
যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান এবং নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। এই সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের লন্ডনের বাসভবনে, যেখানে বর্তমানে চিকিৎসার জন্য অবস্থান করছেন খালেদা জিয়া।
জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান সম্প্রতি ইউরোপ সফর শেষে সোমবার দেশে ফেরেন। দীর্ঘ প্রায় দুই সপ্তাহের সফর শেষে তিনি মঙ্গলবার রাতে এক গণমাধ্যমকে সাক্ষাৎকারে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এসময় তিনি জানান,
“বেগম জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি। আমরা একসঙ্গে অনেক দিন কাজ করেছি। উনি অসুস্থ, তাঁর খোঁজখবর নেওয়া আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। বহুদিন পর দেখা হয়েছে, আমরা ওনার জন্য দোয়া করেছি এবং ওনার কাছেও দোয়া চেয়েছি।”
সাক্ষাতের পটভূমি ও তাৎপর্য
বেগম খালেদা জিয়া বর্তমানে লন্ডনে অবস্থান করছেন এবং তারেক রহমানের বাসায় থেকে লন্ডন ক্লিনিকের চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তার স্বাস্থ্যগত অবস্থা ও রাজনৈতিক অনুপস্থিতির প্রেক্ষাপটে এ ধরনের সাক্ষাৎ বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা।
যদিও সাক্ষাতের বিস্তারিত আলোচনার বিষয়বস্তু জানাতে অনিচ্ছুক ছিলেন জামায়াতের আমির, তবুও তিনি ইঙ্গিত দেন যে, “দুজন মানুষ একসঙ্গে হলে তো অনেক কথাই হয়। অনেক কথাই হয়েছে।”
তবে তিনি এর বাইরে আর কিছু বলেননি।
তারেক রহমান ছিলেন উপস্থিত
এই সাক্ষাতের সময় তারেক রহমানও উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে তার উপস্থিতি সাক্ষাতকে আরও গুরুত্ববহ করে তুলেছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে সম্পর্কের বর্তমান অবস্থা, ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক কৌশল ও আন্দোলনের রূপরেখা নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না, তা নিয়ে এখন রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।
সফরের উদ্দেশ্য ও কার্যক্রম
জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান ও নায়েবে আমির আবদুল্লাহ তাহেরের সাম্প্রতিক ইউরোপ সফরের মূল উদ্দেশ্য ছিল আন্তর্জাতিক মহলের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার ও বাংলাদেশ বিষয়ে জামায়াতের অবস্থান তুলে ধরা। সফরের শুরুতে তারা যান বেলজিয়ামের ব্রাসেলস, যেখানে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদর দপ্তরে একাধিক বৈঠক করেন। এসব বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন:
ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সাউথ এশিয়ান ককাসের এমপিরা
ইইউর ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স ডিভিশনের সাউথ এশিয়া ডেস্ক কর্মকর্তারা
ব্রাসেলস সফর শেষে তারা যান লন্ডনে, যেখানে ঘটে এই আলোচিত সাক্ষাৎ।
এ সফরে দলের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা মাহমুদুল হাসানও তাদের সঙ্গে ছিলেন। এটি জামায়াতের সাম্প্রতিক সময়ের অন্যতম সক্রিয় আন্তর্জাতিক প্রচার অভিযান হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিক্রিয়া
সাক্ষাৎ সংক্রান্ত খবর ছড়িয়ে পড়ার পর, বিএনপির চেয়ারপারসনের সাবেক প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান মঙ্গলবার রাতে নিজের ফেসবুকে লেখেন:
“বেগম জিয়ার সঙ্গে জামায়াতের দুই শীর্ষ নেতার সাক্ষাতে কী কী বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে তা জানা যায়নি। দুই ডাক্তারের (শফিকুর রহমান ও তাহের) এই সাক্ষাৎ রাজনীতির রসায়নে নতুন কোনো ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে, নাকি নিছক সৌজন্য সাক্ষাৎ হয়েই থাকবে তা বুঝতে হলে আমাদের চোখ রাখতে হবে সামনের দিকে।”
তিনি আরও উল্লেখ করেন, “বেগম জিয়া উন্নত চিকিৎসার জন্য বিলেত যাওয়ার আগে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানও সস্ত্রীক তার বাসায় গিয়ে দেখা করেছিলেন। সে সাক্ষাৎ নিয়েও বিশদ কিছু জানা যায়নি।”
রাজনৈতিক বার্তা?
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই সাক্ষাৎকে নিছক ‘সৌজন্যমূলক’ হিসেবে চিহ্নিত করলেও, তার ভেতরে ভবিষ্যৎ রাজনীতির সম্ভাব্য জোট, কৌশল বা পুনঃসমন্বয়ের ইঙ্গিত লুকিয়ে থাকতে পারে। বিশেষ করে যখন বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে প্রকাশ্য রাজনীতি কিছুটা দূরত্বে রয়েছে, তখন এমন উচ্চপর্যায়ের সাক্ষাৎ আগামী রাজনীতিতে নতুন সমীকরণ আনতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
খালেদা জিয়া, তারেক রহমান ও জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের এই লন্ডন সাক্ষাৎ সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনাগুলোর একটি। যদিও কোনো পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি আসেনি, তবে রাজনৈতিক অঙ্গন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই ঘটনাকে ঘিরে শুরু হয়েছে জোর আলোচনা।
পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেয়, তা নির্ভর করবে ভবিষ্যৎ রাজনীতি, জোট গঠন, আন্দোলনের পরিকল্পনা ও কূটনৈতিক তৎপরতার ওপর। তবে এতটুকু নিশ্চিত, এই সাক্ষাৎ নিছক ‘সৌজন্য সাক্ষাৎ’ হিসেবেই থেকে যাবে না—তা আগামী সময়েই স্পষ্ট হয়ে উঠবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ
.png)
.png)
.png)



