
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল—বিএনপি—নিজেকে একটি সংস্কারবান্ধব ও সংস্কারমূলক চিন্তাধারার রাজনৈতিক দল হিসেবে পুনরায় উপস্থাপন করেছে। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও প্রবীণ রাজনীতিক নজরুল ইসলাম খান আজ বৃহস্পতিবার সকালে জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের’ সঙ্গে আলোচনা সভায় সূচনা বক্তব্যে বলেন, “বিএনপি সংস্কারের বিপক্ষে নয়, বরং বিএনপি সংস্কারেরই দল।” তিনি দৃঢ়ভাবে জানান, তাদের দল অতীতেও সংস্কারের পথিকৃত ছিল, এখনও সংস্কারমূলক চিন্তা-চর্চাকে প্রাধান্য দিয়ে রাজনীতি করে।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, “যারা এখন সংস্কারের কথা বলেন, তারা যখন সংস্কারের প্রথম অক্ষরটিও উচ্চারণ করেননি, তখন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ভিশন ৩০ উপস্থাপন করেছিলেন। আরও আগে, যখন অনেকেই রাষ্ট্রচিন্তায় সংস্কার ধারণা আনেননি, তখন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ১৯ দফা কর্মসূচি দিয়েছিলেন। অর্থাৎ, বিএনপি সবসময়ই ভবিষ্যতমুখী সংস্কারের পক্ষেই থেকেছে।”
তিনি মনে করিয়ে দেন যে, বিএনপি ইতোমধ্যেই দেশের সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য ৩১ দফা কর্মসূচি প্রকাশ করেছে, যা দলটির একটি আনুষ্ঠানিক ঘোষণা ও রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি।
“আমরা বলেছি, যদি এর চেয়ে ভালো কোনো প্রস্তাব থাকে, আমরা সেগুলো সাদরে গ্রহণ করব। এই যে কমিশন কাজ করছে, আমরা সেটিকে সেই দৃষ্টিকোণ থেকেই দেখছি,” বলেন নজরুল।
আলোচনায় বিএনপির পক্ষ থেকে স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হয় যে, তারা যে ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছে তা কোনো রাজনৈতিক শ্লোগান নয়, বরং তা ভবিষ্যতের জন্য দলটির একটি গঠনমূলক রূপরেখা। নজরুল ইসলাম খান বলেন, “এই প্রস্তাব আমাদের অঙ্গীকার। এটি আমরা বাস্তবায়নে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। আর যদি ঐকমত্য কমিশন থেকে কোনো সনদ তৈরি না-ও হয়, আমাদের তো একটি সনদ আছেই—সংস্কারের সনদ।”
তিনি আরও বলেন, “সংস্কার একটি সদা চলমান প্রক্রিয়া। সময়ের সঙ্গে এই পরিবর্তন অবশ্যই ঘটবে। তাই আমরা চাই—এ আলোচনায় সময়ক্ষেপণ না করে আমরা দ্রুত এমন একটি জায়গায় পৌঁছাই, যাতে মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা বাস্তবে রূপ নিতে পারে।”
বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, “গতকাল আমরা প্রধান উপদেষ্টাকে জিজ্ঞাসা করেছি—বিএনপির চেয়ে বেশি সংস্কার কোন রাজনৈতিক দল করেছে? আমরা রাজনৈতিক সংস্কার করেছি, গণতান্ত্রিক সংস্কার করেছি, দলীয় কাঠামোতে সংস্কার এনেছি। এমনকি নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় সংস্কারের দাবিও আমরাই সবচেয়ে জোরালোভাবে তুলেছি।”
তিনি দাবি করেন, বিএনপি কমিশনের কাজকে সহযোগিতা করছে এই বিশ্বাসে যে, গণআন্দোলনের মধ্য দিয়ে দেশে যে নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে, তা যাতে কাজে লাগানো যায়। “আমরা বিশ্বাস করি, এই প্রক্রিয়ায় গণতন্ত্রের পথ আরও সুসংহত হবে,” বলেন তিনি।
আলোচনার শুরুতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষক ও অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, তাদের লক্ষ্য হলো একটি জাতীয় সনদ তৈরি করা, যার মাধ্যমে দেশে একটি প্রাতিষ্ঠানিক গণতন্ত্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা পাবে।
তিনি বলেন, “আমাদের দেশের গণতন্ত্র বারবার হোঁচট খেয়েছে, বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে। আমরা সেই ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে এমন একটি কাঠামো তৈরি করতে চাই, যা রাজনৈতিক দলগুলোর দীর্ঘদিনের আন্দোলনের ফসল হিসেবে গণতান্ত্রিক ধারাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেবে।”
আলী রীয়াজ আরও বলেন, “বিএনপির সঙ্গে অনেক বিষয়ে ইতোমধ্যেই ঐকমত্য হয়েছে। যেসব বিষয়ে এখনও ভিন্নমত রয়েছে, আমরা আশা করি সেসব বিষয়েও আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে একটি গ্রহণযোগ্য সমাধানে পৌঁছানো সম্ভব হবে।”
এই আলোচনা প্রক্রিয়া প্রমাণ করে যে, দেশের বৃহৎ রাজনৈতিক শক্তিগুলো আজ সংস্কারকে এড়ানোর নয়, বরং গ্রহণ করার পথে এগিয়ে আসছে। বিএনপি তার অবস্থান থেকে এটাও বারবার স্পষ্ট করছে যে, তারা শুধু বিরোধিতার রাজনীতি করতে চায় না, বরং জাতীয় স্বার্থে বাস্তবভিত্তিক ও গ্রহণযোগ্য রূপরেখার অংশ হতে চায়।
নজরুল ইসলাম খানের কথায়, “আমরা এমন একটি ভবিষ্যৎ চাই, যেখানে সময় নষ্ট না করে মানুষের চাহিদা অনুযায়ী একটি স্থায়ী, কার্যকর ও সাংবিধানিক গণতন্ত্র গড়ে উঠবে। এটি কেবল বিএনপির দাবি নয়, এটি সময়ের দাবি।”
এ আলোচনার মাধ্যমে দেশের রাজনীতিতে একটি গঠনমূলক, অংশগ্রহণমূলক এবং সর্বজনগ্রাহ্য সংস্কার প্রক্রিয়ার সূচনা হতে পারে বলেই আশাবাদী সংশ্লিষ্ট মহল।
বাংলাবার্তা/এমএইচ