
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ গঠনে আত্মনির্ভরশীলতা এবং জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, “আমাদের দেশের ভবিষ্যৎ আমাদেরকেই নির্মাণ করতে হবে। আমেরিকা থেকে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, চীন থেকে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং কিংবা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এসে আমাদের সমস্যা সমাধান করে দিয়ে যাবেন না। নিজেদের পরিবর্তন ও উন্নয়নের দায়িত্ব আমাদেরকেই নিতে হবে। এই বাস্তবতা আমাদের মানসপটে গেঁথে রাখতে হবে।”
শনিবার রাজধানীতে আয়োজিত ‘বাংলাদেশের ক্ষমতায়ন: নেতৃত্ব, ঐক্য এবং প্রবৃদ্ধির পথ’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় প্রধান আলোচক হিসেবে অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন তিনি। আলোচনায় রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক বিভিন্ন প্রেক্ষাপট তুলে ধরে দেশের স্বার্থে সর্বস্তরের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানান ফখরুল।
তিনি বলেন, “যেভাবে অতীতে গণঅভ্যুত্থান কিংবা স্বাধিকার আন্দোলনে মানুষ একসাথে হয়েছিল, সেভাবেই আজ আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, মানবিক মূল্যবোধ রক্ষা এবং অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতা অর্জনে দলমত নির্বিশেষে সবাইকে একই লক্ষ্যে কাজ করতে হবে।”
দেশের সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বাংলাদেশকে দেওয়া বাড়তি ট্যারিফ বর্তমানে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই সমস্যার দ্রুত ও কূটনৈতিকভাবে সমাধান করতে না পারলে দেশের রপ্তানি খাত, বিশেষ করে পোশাকশিল্প মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হবে।” তিনি আরো যোগ করেন, “বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে আমাদের অর্থনৈতিক কৌশল হতে হবে বাস্তবভিত্তিক ও বহুমাত্রিক।”
কৃষিখাতের প্রতি বিশেষ নজর দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে ফখরুল বলেন, “দেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড কৃষি। যারা মাঠে কাজ করছেন, আমাদের সেই কৃষক ভাইদের প্রাপ্য মর্যাদা ও প্রণোদনা নিশ্চিত করতে হবে। কৃষিখাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি নিশ্চিত করতে কৃষকদের আধুনিক প্রযুক্তি ও তথ্যভিত্তিক সহায়তা দিতে হবে।”
ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার বিষয়টি প্রসঙ্গে ফখরুল বলেন, “তিনি দায়িত্ব পেয়েছেন, চেষ্টা করছেন। আমি তাকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। আশা করি তিনি নিরপেক্ষভাবে কাজ করবেন এবং সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক একটি নির্বাচন উপহার দিতে সক্ষম হবেন।”
সভাপতির বক্তব্যে তিনি বলেন, “আসুন আমরা নিজেরা নিজেদের সাহায্য করি। এই দেশ আমাদের, এর ভবিষ্যৎও আমাদের। দলমতের ঊর্ধ্বে উঠে, দেশের জন্য, মানুষের জন্য আমরা যদি এক হই, তাহলে সামনে একটি আলোকিত বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব।”
এ সময় তিনি তরুণ প্রজন্মকে দেশের নেতৃত্বে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “তরুণরাই জাতির ভবিষ্যৎ। তাদের সৃজনশীলতা, উদ্যোগ এবং ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়েই বাংলাদেশকে একটি মর্যাদাপূর্ণ রাষ্ট্রে পরিণত করা সম্ভব।”
আলোচনা সভায় বিএনপি ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি, শিক্ষাবিদ, ব্যবসায়ী, কৃষক প্রতিনিধি এবং তরুণ উদ্যোক্তারা উপস্থিত ছিলেন। আলোচনা শেষে সবার মাঝে দেশের উন্নয়ন ও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়।
চূড়ান্তভাবে, মির্জা ফখরুলের বক্তব্যে ছিল একটি স্পষ্ট বার্তা—ভরসা করতে হবে নিজেদের ওপর, এবং ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসেই গড়ে উঠবে কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ।
বাংলাবার্তা/এমএইচ