
ছবি: সংগৃহীত
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ সম্প্রতি নিজের নামে প্রকাশিত একটি সংবাদ প্রতিবেদনকে ‘তথ্যসন্ত্রাস’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত বলে দাবি করে তিনি বলেন, কেউ যদি প্রমাণ করতে পারেন যে তিনি কারো কাছ থেকে অবৈধভাবে মাত্র এক টাকা নিয়েছেন, তাহলে তিনি আজীবনের জন্য রাজনীতি ত্যাগ করবেন।
শনিবার মধ্যরাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে হাসনাত সরাসরি প্রথম আলোর বিরুদ্ধে অবস্থান নেন এবং তাদের সাংবাদিকতাকে কটাক্ষ করে বলেন, “প্রথম আলো আজ শিরোনাম করেছে ‘হাসনাতের বিলাসী জীবনযাপন নিয়ে প্রশ্ন’। আমি প্রথম আলোর সেই সাংবাদিককে আমার বাসায় আমন্ত্রণ জানাচ্ছি— আপনি দয়া করে এসে দেখুন, আমি কেমন বিলাসী জীবন যাপন করি।” তিনি অভিযোগ করেন, প্রতিবেদনে যে ধরনের দাবি করা হয়েছে, বাস্তবে এনসিপির বৈঠকে এমন কোনো প্রশ্ন বা আলোচনা হয়নি।
প্রতিবেদন এবং পরবর্তী সংশোধন
প্রথম আলো অনলাইনে ২০ এপ্রিল প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন, যার শিরোনাম ছিল “এনসিপির সাধারণ সভা: নানা প্রশ্ন ও অভিযোগের জবাব দিলেন নেতারা”— তাতে দাবি করা হয়, এনসিপির একটি বৈঠকে হাসনাত আব্দুল্লাহর বিলাসী জীবনযাপন নিয়ে প্রশ্ন তোলেন দলেরই কয়েকজন নেতা। তবে প্রতিবেদন প্রকাশের কিছুক্ষণ পর পত্রিকাটি নিজেই একটি সংশোধনী প্রকাশ করে জানায়, শুরুর শিরোনাম এবং প্রতিবেদনটির কিছু অংশ পরিবর্তন ও পরিমার্জন করা হয়েছে। কারণ হিসেবে বলা হয়, প্রতিবেদন প্রকাশের পর আরও কিছু তথ্য তাদের হাতে আসে, যার ভিত্তিতে এই পরিবর্তন জরুরি হয়ে পড়ে।
হাসনাত তার পোস্টে স্পষ্ট করেন, বৈঠকে এমন কোনো প্রশ্ন ওঠেনি এবং প্রতিবেদনে যে আলোচনা তুলে ধরা হয়েছে, তা পুরোপুরি মনগড়া ও ভিত্তিহীন। তিনি বলেন, “যা কখনোই ঘটেনি, সেই বিষয়ে সংবাদ তৈরি করে জাতিকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে, এটা সরাসরি তথ্যসন্ত্রাস।”
রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের অভিযোগ
হাসনাত আব্দুল্লাহ দাবি করেন, তার বিরুদ্ধে প্রকাশিত এই সংবাদ হঠাৎ করে আসেনি। বরং এটি ছিল সুপরিকল্পিত রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের অংশ। তিনি বলেন, “র-এর বিরুদ্ধে আমি যে পোস্ট দিয়েছি, তার মাত্র দুই দিনের মাথায় এমন একটি খবর প্রকাশিত হলো— এটি নিছক কাকতালীয় হতে পারে না।”
তিনি সরাসরি ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা র (RAW), ভারতের ক্ষমতাসীন রাষ্ট্রশক্তি এবং বাংলাদেশে তাদের কথিত মিত্রদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে বলেন, “আমাদেরকে মেরে না ফেলা পর্যন্ত ভারত, র আর আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আমাদের এ লড়াই থামবে না, ইনশাআল্লাহ।”
প্রথম আলোকে ‘ভারতীয় সাম্রাজ্যবাদের মুখপত্র’ বলে আক্রমণ
হাসনাত আরও দাবি করেন, প্রথম আলো বরাবরই বাংলাদেশে যারা দেশপ্রেমিক ও সৎ রাজনীতি করেন, তাদের বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে অপপ্রচার চালিয়ে আসছে। তিনি বলেন, “ভারতীয় সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে যারা কথা বলে, তাদেরকে প্রতিবারই নিশানা করা হয়। আমি এখন সেই তালিকায় নতুন সংযোজন মাত্র।”
তার ভাষায়, “দিল্লি থেকে লিখে দেওয়া নিউজ করে যদি ভেবে থাকেন যে আমাকে থামাতে পারবেন, তাহলে এখনো ভুল করছেন আপনারা। আমি রাজনীতি করি জনগণের পক্ষে, জাতীয় স্বার্থে। কোনো ব্যক্তি বা রাষ্ট্রের ছত্রছায়ায় নয়।”
রাজনীতি ছাড়ার অঙ্গীকার
সবশেষে হাসনাত আব্দুল্লাহ তার স্ট্যাটাসে স্পষ্ট ঘোষণা দেন— “যদি কেউ প্রমাণ করতে পারে আমি কারো কাছ থেকে অবৈধভাবে এক টাকাও নিয়েছি, আমি আজই রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়াবো, ইনশাআল্লাহ। কিন্তু কেউ প্রমাণ দিতে পারবে না, কারণ আমি সত্যবাদী এবং আমার কাছে রাজনীতি মানে জনগণের সেবা।”
এই পোস্টের পর হাসনাতের সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়। অনেকেই তার বক্তব্যকে সাহসী ও প্রতিবাদী বলে আখ্যা দেন। অন্যদিকে প্রথম আলো এ বিষয়ে আর কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
ঘটনাটি এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিতর্কের কেন্দ্রে, যেখানে একপক্ষ এই ঘটনাকে ষড়যন্ত্রমূলক সংবাদ প্রকাশের উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরছে, আর অন্যপক্ষ সাংবাদিকতার স্বাধীনতাকে রক্ষার পক্ষে অবস্থান নিচ্ছে। তবে এ ঘটনায় এনসিপির অভ্যন্তরীণ অবস্থান কী— তা এখনও পরিষ্কার নয়।
বাংলাবার্তা/এমএইচ