
ছবি: সংগৃহীত
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেছেন, রাজনৈতিক কোনো দলে যোগদানের ব্যাপারে এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেননি তিনি। শনিবার (২৬ এপ্রিল) তার নিজস্ব ফেসবুক পেজের মাধ্যমে এই বার্তা দেন আসিফ মাহমুদ, যেখানে তার পেজের অ্যাডমিনের পোস্টে বিষয়টি পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করা হয়।
পোস্টে বলা হয়, আসিফ মাহমুদ জানিয়েছেন, ‘আমি এখনো কোনো রাজনৈতিক দলে যোগদানের সিদ্ধান্ত নিইনি। যখন সময় আসবে, তখন দেশের মানুষের বৃহত্তর স্বার্থে, দেশের কল্যাণে এবং জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতি সম্মান দেখিয়ে, সবচেয়ে ভালো যে বিকল্পটি মনে হবে, সেটিকেই বেছে নেব।’ তিনি আরও বলেন, ‘নতুন ছাত্রদের তৈরি রাজনৈতিক দল বা অন্য কোনো বিশেষ প্ল্যাটফর্মে যোগ দিতে হবে— এমন কোনো বাধ্যবাধকতাও আমার ওপর নেই।’
তার এই বক্তব্য স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, সাম্প্রতিক সময়ে এনসিপি (নতুন ছাত্র রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম) বা বিভিন্ন নতুন রাজনৈতিক উদ্যোগের সঙ্গে তার সংযুক্তির সম্ভাবনা নিয়ে যে জল্পনা তৈরি হয়েছিল, তা এখনই নির্দিষ্ট কোনো দিকে গড়াচ্ছে না। দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে যেখানে অন্তর্বর্তী সরকার থেকে দায়িত্ব নেওয়া ব্যক্তিদের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক ভূমিকা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে, সেখানে আসিফ মাহমুদের এই বিবৃতি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
উল্লেখ্য, গত কয়েক মাস ধরেই দেশের বিভিন্ন স্তরে একটি নতুন রাজনৈতিক জোট অথবা দল গঠনের গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল, যেখানে তরুণ নেতৃত্ব এবং ছাত্র রাজনীতির নতুন মুখদের অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে অনেকে ধারণা করেছিলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের পর উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদও সেই নতুন প্ল্যাটফর্মের অংশ হতে পারেন। বিশেষ করে এনসিপি নামে একটি সম্ভাব্য রাজনৈতিক উদ্যোগের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা নিয়ে গুজবও ছড়িয়ে পড়েছিল।
তবে শনিবারের বক্তব্যে আসিফ মাহমুদ এসব জল্পনা নিরুৎসাহিত করেছেন। তিনি সরাসরি জানিয়েছেন, কোনো নির্দিষ্ট দলে যুক্ত হওয়ার চাপ বা শর্ত তার ওপর নেই এবং তিনি সময় ও পরিস্থিতি বিবেচনায় সিদ্ধান্ত নেবেন। এতে বোঝা যাচ্ছে, রাজনৈতিক পদক্ষেপ গ্রহণে তিনি অনেক বেশি সতর্ক এবং কৌশলগতভাবে এগোতে চান।
ফেসবুক পেজের পোস্টে আরও উল্লেখ করা হয়, আসিফ মাহমুদ তার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তে বিশ্বাসী এবং দেশের জনগণের ইচ্ছা-আকাঙ্ক্ষাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সামনের দিনগুলোতে পথচলার পরিকল্পনা করছেন।
বিশ্লেষকদের মতে, অন্তর্বর্তী সরকারের অংশ হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী একজন উপদেষ্টার পক্ষ থেকে এমন সতর্ক অবস্থান নেওয়া একদিকে তার ব্যক্তিত্বের পরিচয় বহন করে, অন্যদিকে ভবিষ্যতে রাজনৈতিকভাবে আরও বড় কোনো ভূমিকা পালনের ইঙ্গিতও দেয়।
এদিকে, তার এ বক্তব্যের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। অনেকে তার ধীরস্থির ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নেওয়ার মানসিকতার প্রশংসা করেছেন, আবার কেউ কেউ দ্রুত কোনো অবস্থান পরিষ্কার করার আহ্বান জানিয়েছেন।
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় যে কোনো নতুন দল বা জোটে যোগদানের সিদ্ধান্ত খুবই সংবেদনশীল ও কৌশলী হতে হয়। তাই আসিফ মাহমুদের মতো একজন অভিজ্ঞ প্রশাসনিক ব্যক্তির পক্ষ থেকে এ ধরনের সময় নিয়ে চিন্তাভাবনা করা স্বাভাবিক। তারা মনে করছেন, তার সিদ্ধান্ত কেবল ব্যক্তি পর্যায়ের নয়, বরং বৃহত্তর রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটেও প্রভাব ফেলতে পারে।
এখন দেখার বিষয় হলো, সামনে দেশের রাজনৈতিক ময়দানে নতুন কোনো সমীকরণ তৈরি হলে, আসিফ মাহমুদ তাতে কী ভূমিকা রাখেন এবং তিনি জনগণের জন্য কোন বিকল্পকে সবচেয়ে ভালো মনে করেন।
বাংলাবার্তা/এমএইচ