
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচন ও দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনায় মিলিত হয়েছে বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এবং চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিনিধিদল। শনিবার (২৬ এপ্রিল) সন্ধ্যায় রাজধানীর ওয়েস্টিন হোটেলে প্রায় ঘণ্টাব্যাপী এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংবাদমাধ্যমের সামনে দুই দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর আলোচনার বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন।
চীনের প্রত্যাশা: স্থিতিশীল ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে মির্জা ফখরুল বলেন, "চীনের কমিউনিস্ট পার্টি বাংলাদেশের নির্বাচন প্রসঙ্গে স্পষ্ট করেছে যে, তারা একটি স্থিতিশীল, শক্তিশালী এবং গণতান্ত্রিক পরিবেশ দেখতে চায়। তারা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে চায় না। তারা শুধু চায় বাংলাদেশে শান্তি ও উন্নয়ন বজায় থাকুক।"
তিনি আরও বলেন, "চীনারা জানতে চেয়েছেন বর্তমান নির্বাচনী পরিবেশ সম্পর্কে। আমরা তাদের সবকিছু ব্রিফ করেছি। বাংলাদেশে বর্তমানে কী পরিস্থিতি বিরাজ করছে এবং কেন আমরা একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছি — এসব বিষয় আমরা তাদের ব্যাখ্যা করেছি।"
পুরনো সম্পর্কের নবায়ন
মির্জা ফখরুল এ বৈঠককে দুই দলের মধ্যে পুরনো সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, "চীনের কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে বিএনপির দীর্ঘদিনের সম্পর্ক রয়েছে। তবে বিগত প্রায় ১৫ বছর এই সম্পর্ক কার্যত বিচ্ছিন্ন ছিল। ফ্যাসিবাদী সরকার রাজনৈতিক কারণে এই সম্পর্ক বন্ধ রেখেছিল। এখন আবার আমরা এই ঐতিহাসিক সম্পর্ক নবায়ন করছি এবং তা আরও গভীরতর করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছি।"
বিএনপির প্রতিনিধিদলে ছিলেন যারা
বিএনপির পক্ষে এই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে সাত সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল অংশ নেয়। প্রতিনিধি দলে নেতৃত্ব দেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। অন্যান্য সদস্যরা হলেন—
দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান
চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ইসমাইল জবিউল্লাহ
আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল
ফরেন অ্যাফেয়ার্স অ্যাডভাইজারি কমিটির সদস্য হুমায়ুন কবির
মিডিয়া সেলের সদস্য মাহমুদা হাবিবা
চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব এবিএম আব্দুস সাত্তার
চীনা প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে পেং জিউবিন
অন্যদিকে, চীনের কমিউনিস্ট পার্টির পক্ষ থেকে আট সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল বৈঠকে অংশ নেয়। প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে ছিলেন পেং জিউবিন, যিনি চীনের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক বিভাগের দক্ষিণ-পূর্ব ও দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক ব্যুরোর গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা। প্রতিনিধি দলে আরও ছিলেন—
আইডিসিপিসির দক্ষিণ-পূর্ব ও দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক ব্যুরোর উপপরিচালক চেন জুয়ানবো
একই ব্যুরোর তৃতীয় সচিব চেন ইয়াংপেই
ব্যুরো ফর দক্ষিণ-পূর্ব ও দক্ষিণ এশীয় অ্যাফেয়ার্সের কর্মকর্তা ঝাং গুইউ
ঢাকায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন
চীনা দূতাবাসের রাজনৈতিক বিভাগের পরিচালক ঝাং জিং
একই বিভাগের সংযুক্ত কর্মকর্তা লিউ হংরু
চীনা প্রতিনিধিদলের উপস্থিতি এবং তাদের বিশদ আলোচনার আগ্রহ, বাংলাদেশে চীনের কূটনৈতিক তৎপরতা এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে তাদের মনোযোগের গভীরতাই তুলে ধরেছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
আগে আরও একটি বৈঠক
এদিন একই স্থানে চীনের প্রতিনিধিদলের নেতা পেং জিউবিনের সঙ্গে আরেকটি বৈঠক করেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা। এই বৈঠকটিও রাজনৈতিক বিষয়াবলী এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা নিয়ে গঠনমূলক আলোচনার অংশ ছিল বলে জানা গেছে।
বৈঠকের তাৎপর্য
বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন ঘিরে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আগ্রহ বাড়ছে। চীন সাধারণত দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে প্রকাশ্যে হস্তক্ষেপ না করলেও, গুরুত্বপূর্ণ মিত্র হিসেবে তাদের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর যোগাযোগ কূটনৈতিক গুরুত্ব বহন করে। বিশেষ করে যখন দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ উত্তপ্ত এবং একটি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রশ্ন সামনে আসে, তখন এ ধরনের আলোচনা তাৎপর্যময় হয়ে ওঠে।
বিএনপি এই বৈঠকের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মহলের কাছে দেশের নির্বাচন-সংক্রান্ত বাস্তব চিত্র তুলে ধরার চেষ্টা করেছে বলে মনে করা হচ্ছে। একই সঙ্গে চীনের সঙ্গে দলীয় সম্পর্ক গভীর করে ভবিষ্যতে কৌশলগত সমর্থন পাওয়ার আশাও করছে দলটি।
চীনের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং গণতান্ত্রিক পরিবেশ বজায় রাখার প্রত্যাশা প্রকাশ, বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে। বিএনপির পক্ষ থেকেও আন্তর্জাতিক মিত্রদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ রেখে চলার এই প্রচেষ্টা আগামী দিনে রাজনৈতিক অঙ্গনে বড় প্রভাব ফেলতে পারে বলে পর্যবেক্ষকদের মত।
বাংলাবার্তা/এমএইচ