
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের রাজনীতিতে নির্বাচন নিয়ে যে তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে, তাতে বামপন্থি দলগুলোর অবস্থান অত্যন্ত স্পষ্ট। অন্তর্বর্তী সরকারের গঠন শুরু থেকে এই দলগুলো নির্বাচনের জন্য আন্দোলন চালিয়ে আসছে, আর এই আন্দোলন রাজনৈতিক জটিলতা ও সরকারের কার্যক্রমের প্রতি গভীর অসন্তোষ নিয়ে গড়ে উঠেছে।
অন্তর্বর্তী সরকারকে শক্তিশালী করতে এবং নির্বাচন গ্রহণযোগ্য করতে বামপন্থি দলগুলো ধারাবাহিকভাবে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের সমালোচনা করছে। তাদের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দাবি হলো, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখা, এবং সরকারের মধ্যে পক্ষপাতিত্ব ও ক্ষমতার দখলকে বিরোধিতা করা। দলের নেতারা বলেছেন, সরকারের নানা কার্যক্রম কেবল সরকারের দুর্বলতা প্রকাশ করছে, যা নির্বাচন অনুষ্ঠানে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার প্রক্রিয়া নিয়ে বেশ কঠোর মন্তব্য করেছে। দলটির সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ অভিযোগ করেছেন যে, সরকার আলোচনার নামে সময় ক্ষেপণ করছে এবং নির্বাচন নিয়ে কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি হচ্ছে না। তিনি বলেন, “সরকারের মধ্যে একটি অভ্যন্তরীণ দ্বিধা রয়েছে, তারা ক্ষমতা ছাড়তে চাচ্ছে না। জনগণের মধ্যে এক ধরনের অসন্তোষ সৃষ্টি হচ্ছে, এবং সরকারের সংস্কারের ইচ্ছা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।”
এদিকে, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) নির্বাচন প্রক্রিয়াকে সামনে রেখে সরকারের কাছে মৌলিক সংস্কারের আহ্বান জানিয়েছে। সিপিবির সভাপতি শাহ আলম বলেন, “এটি একটি ধীরগতি প্রক্রিয়া। শুধু ঐকমত্য সনদে স্বাক্ষর করা কোনো সমাধান নয়। যতক্ষণ না নির্বাচন হয়, ততক্ষণ সরকার কোনো নিরপেক্ষ পরিস্থিতি তৈরি করবে না।” তাদের মতে, দেশের সার্বিক অগ্রগতি নির্বাচন প্রক্রিয়ার ওপর নির্ভরশীল, এবং যত দিন না তা সুস্পষ্টভাবে শুরু হচ্ছে, ততদিন দেশি ও বিদেশি ষড়যন্ত্রের ভয় বাড়বে।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, সরকারের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলে দাবি করেছে যে, সরকার নতুন রাজনৈতিক দল তৈরি করার জন্য পরিকল্পনা করছে। দলের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেছেন, “সরকারের কার্যক্রম একটি অস্থিরতা তৈরি করছে, যা শুধু নির্বাচনের প্রক্রিয়াকেই প্রশ্নবিদ্ধ করবে। নতুন দল তৈরি হলে দেশের রাজনৈতিক পরিবেশে বিশৃঙ্খলা বাড়বে।” তাদের মতে, সরকার যদি দ্রুত সময়ে জুলাই চার্টার গঠন না করে, তবে জনগণের মধ্যে অস্থিরতা ও সন্দেহ আরও বাড়বে।
এই পরিস্থিতিতে বামপন্থি দলগুলোর মধ্যে একতা সৃষ্টি হয়েছে এবং তারা সরকারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। তারা দাবী করছে যে, সরকারের সংস্কার প্রক্রিয়া দ্রুত এবং কার্যকরভাবে সম্পন্ন করতে হবে। পাশাপাশি, সরকারের স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা প্রতিষ্ঠার জন্য তাদের কার্যক্রম আরও বিশ্বাসযোগ্য হতে হবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ