ছবি সংগৃহীত
হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নবুয়তপ্রাপ্তির পর মক্কায় অবস্থানকালে দুইবার হজপালন করলেও মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করার পর দশম হিজরিতে একবারই হজ করেন। সেটিই ছিল তার জীবনের একমাত্র আনুষ্ঠানিক হজ এবং শেষ হজ, যা বিদায় হজ নামে পরিচিত।
দশম হিজরি সনে বিদায় হজ অনুষ্ঠিত হয়। দশম হিজরির জিলহজ মাসের ৯ তারিখ আরাফাতের ময়দানে প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার সাহাবির সামনে নবীজি (সা.) যে বক্তব্য পেশ করেন তা বিদায় হজের ভাষণ হিসেবে পরিচিত।
ওই ভাষণের অনুকরণে হজের সময় আরাফাতের ময়দান সংলগ্ন মসজিদে নামিরা থেকে এখনো হজের খুতবা দেওয়া হয়। খুতবায় সম-সাময়িক বিষয়ে মুসলমানদের করণীয় বিষয়ে নানা দিকনির্দেশনা থাকে। সেই সঙ্গে মুসলিম উম্মাহর শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনায় বিশেষ দোয়া করা হয়। গুরুত্ব বিবেচনায় বিভিন্ন দেশের টেলিভিশন হজের খুতবা সরাসরি সম্প্রচার করে। সৌদি আরব কর্র্তৃপক্ষ কয়েক বছর ধরে হজের আরবি খুতবা বাংলাসহ মোট ১৪টি ভাষায় অনুবাদ করে সম্প্রচারের ব্যবস্থা করে। সৌদি আরবের স্থানীয় সময়ানুসারে সাধারণত খুতবা শুরু হয় দুপুর সোয়া ১২টার পর।
সম্প্রতি হারামাইন পরিষদ বিগত একশ বছর ধরে যারা হজের খুতবা দিয়েছেন, তাদের একটি তালিকা প্রকাশ করেছেন। তালিকায় দেখা গেছে ১৩ জন ইমাম গত একশ বছরে হজের খুতবা দিয়েছেন। এর মধ্যে ১৪০২ হিজরি (১৯৮১ সাল) থেকে টানা ১৪৩৬ হিজরি (২০১৫ সাল) পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি সময় ৩৫ বছর হজের খুতবা দিয়েছেন গ্র্যান্ড মুফতি শায়খ আবদুল আজিজ বিন আবদুল্লাহ আলে শায়খ। ২০১৬ সালে তিনি বার্ধক্যজনিত কারণে অবসর নেন। এরপর থেকে প্রতি বছর একজন করে নতুন খতিব নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে।
তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন শায়খ আবদুল্লাহ বিন হাসান আলে শায়খ। তিনি ১৩৪৪ হিজরি থেকে ১৩৭৬ হিজরি পর্যন্ত ৩৩ (এক বছর বাদে) বছর হজের খুতবা দিয়েছেন। তালিকার তৃতীয় স্থানে রয়েছেন শায়খ আবদুল আজিজ বিন আবদুল্লাহ্ বিন হাসান আলে শায়খ। তিনি ১৩৭৭ হিজরি থেকে ১৪০১ হিজরি পর্যন্ত ২৩ বছর হজের খুতবা দিয়েছেন।
হজের খতিবদের তালিকা হলো-
১. ১৩৪৩ হিজরি, শায়খ মুহাম্মাদ বিন আবদুল লতিফ আলে শায়খ।
২. ১৩৪৪ হিজরি থেকে ১৩৭৬ হিজরি সাল পর্যন্ত শায়খ আবদুল্লাহ বিন হাসান আলে শায়খ।
৩. ১৩৭০ হিজরিতে পিতা শায়খ আবদুল্লাহ্ বিন হাসানের অনুপস্থিতিতে হজের খুতবা দেন শায়খ মুহাম্মাদ বিন আবদুল্লাহ্ বিন হাসান আলে শায়খ।
৪. ১৩৭৭ হিজরি থেকে ১৪০১ হিজরি পর্যন্ত খুতবা দেন শায়খ আবদুল আজিজ বিন আবদুল্লাহ্ বিন হাসান আলে-শায়খ। তিনি শায়খ আবদুল্লাহ বিন হাসান আলে শায়খের সন্তান এবং শায়খ মুহাম্মাদ বিন আবদুল্লাহ্ বিন হাসান আলে শায়খের ভাই।
৫. ১৩৯৯ হিজরিতে খুতবা দেন শায়খ সালেহ বিন মুহাম্মাদ আল-লুহাইদান।
৬. ১৪০২ হিজরি থেকে ১৪৩৬ হিজরি পর্যন্ত হজের খুতবা দেন সৌদি আরবের গ্র্যান্ড মুফতি আবদুল আজিজ আলে শায়খ।
৭. ১৪৩৭ হিজরিতে (২০১৬ সালে) হজের খুতবা দেন মসজিদে হারামের প্রধান খতিব ও হারামাইন পরিচালনা কমিটির প্রেসিডেন্ট শায়খ ড. আবদুর রহমান আস সুদাইস।
৮. ১৪৩৮ হিজরিতে (২০১৭ সালে) শায়খ ড. সাআদ আশ শাসরি।
৯. ১৪৩৯ হিজরিতে (২০১৮ সালে) হজের খুতবা দেন মসজিদে নববির বর্তমান ইমাম ও মদিনা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি শায়খ ডা. হুসাইন বিন আবদুল আজিজ আশ শায়েখ।
১০. ১৪৪০ হিজরিতে (২০১৯ সালে) শায়খ মুহাম্মদ বিন হাসান আলে শায়খ।
১১. ১৪৪১ হিজরিতে (২০২০ সালে) শায়খ আবদুল্লাহ বিন সোলায়মান আল মানিয়া। শায়খ মানিয়া হলেন সবচেয়ে বেশি বয়স্ক হজের খতিব।
১২. ১৪৪২ হিজরিতে (২০২১ সালে) হজের খুতবা দিয়েছেন মসজিদে হারামের ইমাম ও খতিব শায়খ বানদার বিন আবদুল আজিজ বালিলাহ।
১৩. ১৪৪৩ হিজরিতে (২০২২ সালে) হজের খুতবা দেন সৌদি আরবের রাজনীতিক এবং দেশটির সাবেক বিচারমন্ত্রী শায়খ ড. মোহাম্মদ বিন আবদুল করিম আল ঈসা।