সংগৃহীত ছবি
পৃথিবীর সৃষ্টিলগ্ন থেকেই মানবজাতি এমন একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থার চরম প্রয়োজন অনুভব করে, যার মাধ্যমে মহান আল্লাহ তায়ালার সান্নিধ্য অর্জন করা যায়। বিশ্ব মানবের এ সম্মিলিত প্রয়োজন মেটানোর মহান লক্ষ্যেই আল্লাহ তায়ালা যুগে যুগে শরিয়তসহ নবী-রাসুল পাঠিয়েছেন। সেই শরিয়ত বা আনীত দীনকে ধর্ম বলা হয়। পৃথিবীতে ধর্ম ছাড়া কেউ নেই। মানুষ মাত্রই কোনো না কোনো ধর্মের অনুসারী।
পূর্ববর্তী নবী-রাসুলগণ যে দীন নিয়ে এসেছেন, তার সব ক'টিতেই যেমন আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের সর্বোত্তম পন্থা বর্ণিত ছিল, ঠিক তেমনি ছিল খোদায়ি বিধান মতে পার্থিব জীবনে নিরাপদে বসবাসের যাবতীয় মূলনীতি। নবী-রাসুলদের এ পবিত্র আগমনী ধারার পূর্ণতা দানকারী, আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তিনি এসে দীনকে আবার নতুন করে ঢেলে সাজিয়েছেন। বিশ্ববাসীকে পুনরায় দীনের পথে ডেকেছেন, ইসলামের সঙ্গে পরিচয় করিয়েছেন, সবাইকে মিথ্যা ছেড়ে সত্যের পথে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। তাঁর আনীত দীন হচ্ছে একটি নিখুঁত ও পূর্ণাঙ্গ দীন। তিনি এসে একদিকে যেমন পার্থিব জীবনব্যবস্থাকে সংশোধনের ঐতিহাসিক ঘোষণা দিয়েছেন, অপর দিকে পারকালীন জীবনে অফুরন্ত সুখ-শান্তি লাভের মূলনীতিগুলোও বর্ণনা দিয়েছেন বিশদভাবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন,'তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামে প্রবেশ করো এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। নিশ্চয় সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।' (সুরা বাকারা,আয়াত :২০৮)
আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য ধর্ম ইসলাম। মানুষের ইহকালীন শান্তি ও পরকালীন মুক্তির ফায়সালা ইসলামেই নিহিত। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহর কাছে একমাত্র মনোনীত ধর্ম হচ্ছে ইসলাম।’ (সুরা আল ইমরান, আয়াত :১৯)
অন্যত্র আরও ইরশাদ হয়েছে, 'যে ব্যক্তিই ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো দীন অবলম্বন করবে, তা থেকে সে দীন কখনও কবুল করা হবে না এবং আখিরাতে সে হবে মহা ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত।’ (সুরা আলে ইমরান,আয়াত:৮৫)
অন্যত্র আরও ইরশাদ হয়েছে, 'আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দীনকে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের ওপর আমার নিয়ামত পরিপূর্ণ করলাম এবং দীন হিসেবে (চির দিনের জন্য) ইসলামকে মনোনীত করলাম।'
(সুতরাং এর বিধানাবলী পরিপূর্ণভাবে পালন করো)।
(সুরা মায়েদা আয়াত : ৩)
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা দিয়েছেন, ইসলাম পূর্ণাঙ্গ হওয়ার ব্যাপারে। এই পূর্ণতা লাভের অর্থ এই নয় যে, পূর্ববর্তী নবীদের দীন অপূর্ণ ছিল। 'বাহরে-মুহীত' গ্রন্থে 'কাফফাল মরওয়াযী'এর উদ্ধৃতি দিয়ে উল্লেখ করা হয়েছে যে, প্রত্যেক নবী ও রাসুলের দীনই তাঁদের জামানায় পূর্ণাঙ্গ ও পূর্ণ ছিল। যুগ ও জাতি হিসেবে প্রত্যেক ধর্মই ছিল পূর্ণাঙ্গ ও স্বয়ংসম্পূর্ণ। কিন্তু তা সামগ্রিক ছিল না। ইসলামী শরিয়ত এর ব্যতিক্রম। যা পূর্ণাঙ্গ ও স্বয়ংসম্পূর্ণ। কোনো বিশেষ যুগ, বিশেষ ভূখণ্ড অথবা বিশেষ জাতির সঙ্গে এর সম্পর্ক নেই। বরং কিয়ামত পর্যন্ত প্রত্যেক যুগ, ভূখণ্ড ও জাতির জন্য একমাত্র পূর্ণাঙ্গ ও স্বয়ংসম্পূর্ণ দীন।
ইসলাম পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা। কোনো বিষয়ের ঘাটতি বা কমতি নেই এখানে। যা মানুষকে ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জীবন পরিচালনার বিধান সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করে। ইসলাম এমনই এক জীবন বিধান, যা পরিপূর্ণ, যুক্তিসংগত ও বাস্তব অগ্নিপরীক্ষায় বারবার পরীক্ষিত ও সফল উত্তীর্ণ জীবন বিধান। মানব জীবনের এমন কোনো দিক বা ক্ষেত্র নেই, যা ইসলামের আওতাধীন নয়। পবিত্র কোরআনুল কারিমে ইসলাম মানুষের জীবনের সেই পরিপূর্ণতার কথা বারবার ঘোষণা করেছে।
বর্তমান সময়ে দেখা যায়, আমরা ইসলামকে সঠিকভাবে বোঝার চেষ্টা করি না। ইসলামকে নিতান্তই ব্যক্তিগত বিষয় মনে করি। আবার কেউ কেউ ব্যক্তি জীবনে ইসলামকে মানতে রাজি হলেও সমাজ ও জাতীয় জীবনে ইসলামের বিধানের প্রতিফলন ও বাস্তবায়ন দেখতে নারাজ। আমরা ইসলামের কিছু অংশে বিশ্বাস করি এবং মেনে নিই আর কিছু অংশে অবিশ্বাস করি এবং জীবনে বাস্তবায়ন করতে চাই না। প্রকৃতার্থে ইসলাম এমন মন চাই জীবন ব্যবস্থা নয়।
প্রশ্ন হয়, ‘আল্লাহর কাছে এমন ইসলাম কী গ্রহণযোগ্য ? আল্লাহ তায়ালার কাছে এ রকম খণ্ডিত ইসলাম কখনো গ্রহণযোগ্য নয়। ইসলামের কিছু বিধান খুব মন দিয়ে মেনে নেব আর কিছু অংশ ছেড়ে দেব। এ ধরনের ইসলাম পালন কোনোমতেই আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। বরং যদি কারও থেকে ইসলামের কোনো বিষয়ে আপত্তি কিংবা তা মেনে নিতে অস্বীকৃতিপূর্ণ কোনো আচরণ প্রকাশ পায়,তখন সে ব্যক্তির ইমানদার হওয়ার ব্যাপারেই প্রশ্ন আসে। সুতরাং সাবধান! বর্তমান সময়ে আধুনিকতার নামে ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী হয়ে কোনো মুসলমানের সেক্যুলারিজম তথা ধর্ম নিরপেক্ষতায় বিশ্বাস স্থাপনের কোনো সুযোগ নেই। মনে রাখতে হবে কোনো মুসলমানের জন্য আল্লাহর বিধানের বাইরে অন্য কিছুতে আত্মসমর্পণ করতে পারে না।
সুতরাং শরিয়তে ইসলামির নির্দেশ মতে জীবন গঠন করা মুসলিম উম্মাহর জন্য একান্ত আবশ্যক। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তোমাদের জন্য যা নিয়ে এসেছেন তা গ্রহণ করো আর যে কাজ থেকে বিরত থাকতে বলেছেন তা থেকে বিরত থাকো।’ (সুরা হাশর,আয়াত: ৭)
তাই ইসলামের একান্ত দাবি হলো, মানুষের ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ইসলামের অনুশীলন করে জীবন পরিচালনা করা। কেননা ইসলামের বাইরে কোনো কাজই আল্লাহ তায়ালার কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। তাই মুসলিম উম্মাহকে জীবন ব্যবস্থা হিসেবে ইসলামকেই গ্রহণ করতে হবে এবং পরিপূর্ণরূপে আমল করতে হবে। আল্লাহ তায়ালা ইসলাম বহির্ভূত সকল কাজ পরিহার করার তাওফিক দান করুন, আমিন!
লেখক: মাহমুদ হাসান ফাহিম, শিক্ষার্থী, জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলূম মাদানিয়া, যাত্রাবাড়ী, ঢাকা।