সংগৃহীত ছবি
২০২৪ সালে (১৪৪৫ হিজরি) হজের খরচ ৯২ হাজার ৪৫০ টাকা কমানো হয়েছে। গত হজে (২০২৩) খরচ ছিল ৬ লাখ ৭১ হাজার ২৯০ টাকা। আগামী হজের সরকারি ব্যবস্থাপনায় দুটি প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। সাধারণ হজ প্যাকেজের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ লাখ ৭৮ হাজার ৮৪০ টাকা। বিশেষ হজ প্যাকেজের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৯ লাখ ৩৬ হাজার ৩২০ টাকা।
প্যাকেজ ঘোষণার পর হজ গমনেচ্ছুদের মধ্যে স্বস্তি ও শঙ্কা দুটোই দেখা গেছে। কারণ, বৈশ্বিক মহামারী করোনার পর গতবার পূর্ণাঙ্গরূপে হজ চালু হয়। কিন্তু খরচ ছিল অনেক বেশি। এবার আশা ছিল, পৃথিবীর পরিস্থিতি যেহেতু ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে, সুতরাং আসছে হজের খরচ কিছুটা কমবে। হজের সাধারণ প্যাকেজে খরচ কিছুটা কমানো হয়েছে, এটা নিশ্চয়ই স্বস্তির কথা।
শঙ্কা হলো, সাধারণ প্যাকেজে দুই কিলোমিটার দূরের বাসাসহ যেসব সুবিধার কথা বলা হচ্ছে, তাতে বৃদ্ধ, অসুস্থ ও নারী হজযাত্রীরা বিপাকে পড়বেন। কারণ, মক্কায় থেকে মসজিদে হারামে প্রতি ওয়াক্ত নামাজ দুই কিলোমিটার দূরে থেকে এসে আদায় করা কতটা সহজ হবে, সেটা বিবেচ্য বিষয়।
এমনিতে বাংলাদেশি হজযাত্রীদের ‘বি’ প্যাকেজে আগে ফিতরার (মক্কায় বাসা কাবা শরিফের কাছে-দূরে একাধিকবার বদল করাকে ফিতরা বলে) প্রচলন ছিল, তখন কয়েক দিন দূরে থাকলেও কিছুদিন কাবার কাছে থাকার সুযোগ ছিল, এবারের সাধারণ প্যাকেজের যাত্রীরা কাবার কাছে থাকা সুযোগ তেমন পাবেন না। এ ছাড়া হজ প্যাকেজের সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে আরও আলোচনা হবে।
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ১৪৪৫ হিজরি সনের ৯ জিলহজ ২০২৪ সালের ১৬ জুন পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে। গত বৃহস্পতিবার ধর্ম মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান আনুষ্ঠানিকভাবে ‘হজ প্যাকেজ ২০২৪’ ঘোষণা করেন। হজ নির্বাহী কমিটির মিটিংয়ে পর্যালোচনা করে এ হজ প্যাকেজ নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী।
ঘোষিত সাধারণ প্যাকেজ অনুযায়ী, এবার সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজযাত্রায় প্রত্যেক হজযাত্রীর গতবারের চেয়ে ৯২ হাজার ৪৫০ টাকা কম খরচ হবে। সংবাদ সম্মেলনে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী জানান, সরকারিভাবে হজে যেতে সাধারণ প্যাকেজে ৫ লাখ ৭৮ হাজার ৮৪০ টাকা খরচ ধরা হয়েছে। বিশেষ হজ প্যাকেজের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৯ লাখ ৩৬ হাজার ৩২০ টাকা। এবারই প্রথম হজের প্যাকেজে বিশেষ কোনো প্যাকেজ মূল্য সরকারিভাবে ঘোষণা করা হলো।
গত হজে সরকারিভাবে একটি প্যাকেজের মাধ্যমে হজ পালনে খরচ নির্ধারণ করা হয়েছিল ৬ লাখ ৭১ হাজার ২৯০ টাকা। অন্যদিকে বেসরকারিভাবে এজেন্সির মাধ্যমে হজ পালনে সর্বনিম্ন খরচ ধরা হয়েছিল ৬ লাখ ৬০ হাজার ৮৯০ টাকা। আগামীবার বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজ করতে পারবেন বলে ইতিমধ্যে ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে। এর মধ্যে সরকারিভাবে ১০ হাজার ১৯৮ ও বেসরকারি এজেন্সির মাধ্যমে ১ লাখ ১৭ হাজারজন হজ পালন করতে পারবেন।
বিশেষ হজ প্যাকেজের বৈশিষ্ট্য তুলে ধরে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী বলেন, অতিরিক্ত অর্থ প্রদান করে মক্কার হোটেলে দুই ও তিন সিটের রুম গ্রহণ করা যাবে। মক্কায় হারাম শরিফের চত্বর থেকে সর্বোচ্চ ৮০০ মিটারের মধ্যে উন্নতমানের হোটেল, মদিনায় মারকাজিয়া এলাকায় আবাসন ব্যবস্থা, এক রুমে সর্বোচ্চ চার সিট থাকবে, মিনায় ‘এ’ ক্যাটাগরির তাঁবুতে আবাসন ও বুফে খাবার ব্যবস্থা এবং মিনা-আরাফাহ-মুজদালিফা-মিনায় যাতায়াতে প্রত্যেক হজযাত্রীর জন্য বাসে সিট নিশ্চিত করা হবে বিশেষ প্যাকেজে।
সরকারি ও বেসরকারি উভয় মাধ্যমের সাধারণ প্যাকেজের মূল্য এবং সুযোগ-সুবিধা সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে জানিয়ে ফরিদুল হক খান বলেন, সাধারণ প্যাকেজে প্রতি রুমে সর্বোচ্চ ছয় সিট থাকবে। প্যাকেজ আপগ্রেডেশনের সুবিধায় অতিরিক্ত অর্থ প্রদান করে মক্কার হোটেলে দুই ও তিন সিটের রুম গ্রহণ করা যাবে। সাধারণ প্যাকেজের ব্যয় গতবারের চেয়ে ৯২ হাজার ৪৫০ টাকা কম। বিমান ভাড়া ২ হাজার ৯৯৭ টাকা কমিয়ে ১ লাখ ৯৪ হাজার ৮০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। দ্রুত বিজ্ঞপ্তি প্রচারের মাধ্যমে হজযাত্রীর নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু করা হবে জানিয়ে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, আগামী বছর ১ মার্চ থেকে হজ ভিসা ইস্যু শুরু হবে। ৯ মে থেকে হজ ফ্লাইট শুরু হবে। সরকারি মাধ্যমের সাধারণ প্যাকেজ মূল্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) বেসরকারি মাধ্যমের হজযাত্রীদের জন্য শিগগিরই হজ প্যাকেজ ঘোষণা করবে এবং হজযাত্রীদের জন্য অনুরূপ সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করবে। উন্নতমানের বাড়ি এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির মাধ্যমে এজেন্সি একাধিক প্যাকেজ ঘোষণা করতে পারবে বলেও জানান ধর্ম প্রতিমন্ত্রী। দুটি হজ প্যাকেজ করার কারণে এবার যারা টাকা কম দিয়ে যাওয়ার ইচ্ছে, তারা সেই সুযোগটা (সাধারণ প্যাকেজ) পাচ্ছেন। যারা আরাম-আয়েশে থাকতে চান, তারা একটু বেশি টাকা (বিশেষ প্যাকেজ) দিয়ে যাবে।
ধর্ম সচিব মু. আ. হামিদ জমাদ্দার বলেন, সৌদি সরকার আমাদের চাপ দিয়েছে যে, ডিসেম্বরের মধ্যে হজযাত্রীর সংখ্যা জানাতে হবে। এ নিয়মটা থাকবে কি না জানি না, আমরা সে প্রস্তুতিতেই এগোচ্ছি। তিনি বলেন, একজন মানুষ হজে যাবে তার প্রস্তুতির দরকার আছে। সরকারের কাছে টাকা জমা দেবে। তাই আমরা তাদের সে সময়টা দিচ্ছি। আশা করি আমরা সময়মতো কাজটা করতে পারব। আমরা তাড়াহুড়ো করতে চাই না। এবার আমরা কোটাও আগে পেয়ে গেছি।