ছবি: বাংলাবার্তা
স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক পৃথিবীতে সবচেয়ে মধুর ও আনন্দময়। জীবন চলার পথে রাগ, অভিমান, হাসি-কান্না অনেক কিছুই হবে। শুধু বিচ্ছেদ হবে না। একটি বিচ্ছেদ দুই পরিবার ও সন্তানের উপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। তাই তো আমাদের প্রিয় নবীজি (সা.) স্ত্রীদের সঙ্গে হাসি-কৌতুকও করতেন।
একদিন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত সাওদা (রা.)-এর ঘরে অবস্থান করছিলেন। দিনটি তার জন্য নির্ধারিত ছিল। হযরত আয়েশা (রা.) রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য হালুয়া রান্না করলেন এবং হযরত সাওদা (রা.)-এর ঘরে নিয়ে এলেন। এনে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সম্মুখে রাখলেন। হযরত সাওদা (রা.) ও তখন নবীজির সামনে উপবিষ্ট ছিলেন। হযরত আয়েশা (রা.) তাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, আপনিও খান। কিন্তু বিষয়টি হযরত সাওদা (রা.)-এর নিকট অপ্রীতিকর মনে হলো যে, আল্লাহর রাসুল আমার ঘরে অবস্থানরত অবস্থায় এ কাজটি সে কেন করতে গেল? হালুয়া বানানোর আর সময় পেল না?! তাই তিনি খেতে অস্বীকৃতি জানালেন।
হযরত আয়েশা (রা.) বললেন, খান; অন্যথায় এই হালুয়া আমি আপনার মুখে মাখিয়ে দেবো। কিন্তু হযরত সাওদা (রা.) বললেন, আমি খাব না। ফলে হযরত আয়েশা (রা.) একটুখানি হালুয়া তুলে নিয়ে হযরত সাওদা (রা.)-এর মুখে মাখিয়ে দিয়েছেন। এবার সাওদা (রা.) রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে নালিশ জানালেন, হে আল্লাহর রাসুল! আয়েশা আমার মুখে হালুয়া মাখিয়ে দিয়েছেন! রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কুরআনে আছে : جَزَاء سَيِّئَةٍ سَيِّئَةٌ مِّثْلُهَا
‘মন্দের প্রতিদান অনুরূপ মন্দ।’ (সূরা শোরা, আয়াত : ৪০)
আরও পড়ুন: শীতার্তকে বস্ত্রদানে জান্নাতে পাবে সবুজ পোশাক
তো আয়েশা (রা.) যখন তোমার মুখে হালুয়া মাখিয়ে দিয়েছে; তুমিও তার মুখে অতটুকু হালুয়া মাখিয়ে দাও। ফলে হযরত সাওদা (রা.) একটু হালুয়া তুলে নিয়ে হযরত আয়েশা (রা.)-এর মুখে মাখিয়ে দিলেন। আর এসব ঘটনা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সম্মুখেই ঘটছিল। এমন সময় দরজায় করাঘাত পড়ল। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন, কে? উত্তর শুনে জানতে পারলেন, হযরত উমর (রা.) এসেছেন। তখনো পর্দার বিধান আসেনি। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্ত্রীদের বললেন, যাও তাড়াতাড়ি দুজনে মুখ ধুয়ে পরিষ্কার হয়ে আসো। কারণ উমর এসেছে। দুজনে উঠে গিয়ে মুখ ধুয়ে এলেন। (মাজমাউয যাওয়ায়েদ : ৪/১৩৬)
চিন্তা করুন! সেই সত্তা, যার প্রতিটি মুহূর্ত আল্লাহর সঙ্গে যোগাযোগের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হয়। যার প্রতিটি সময় আল্লাহর সঙ্গে কথোপকথনের মধ্যে দিয়ে ব্যয় হয় এবং যার জন্য আল্লাহর দরবারে সেই মর্যাদা অর্জিত আছে। যা জগতে আর কারও ভাগ্যে জোটেনি, সেই তিনি স্ত্রীদের মনোরঞ্জনের প্রতি এতটা লক্ষ্য রাখছেন!
বাংলাবার্তা/জেডএইচ