বাংলাবার্তা
ছেলেদের জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুজন ব্যক্তি হচ্ছেন মা ও স্ত্রী। যে পরিবারে মা ও স্ত্রীর মাঝে সমন্বয় ভালো ছেলেদের জন্য পরম সৌভাগ্য। আর এর ব্যত্যয় ঘটলে ছেলেদের জীবন নরকে পরিণত হয়।
ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল (রহ.)-এর কাছে একজন লোক এসে বলল, আমার মা বলেছেন আমার স্ত্রীকে তালাক দিতে। এখন আমার কী করা উচিত? ইমাম ইবনে হাম্বল (রহ.) বলেন, তুমি স্ত্রীকে তালাক দিয়ো না। মায়ের কথা শুনবে না। লোকটি বলল, আপনার ফতোয়া কি হাদিসের বিরোধী হয়ে গেল না? একবার হযরত উমর (রা.) তাঁর ছেলে আবদুল্লাহ ইবনে উমরকে বলেছিলেন, তোমার অমুক স্ত্রীকে তালাক দাও। তিনি তালাক দিচ্ছিলেন না। উমর (রা.) বিষয়টি নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জানানোর পর তিনি ইবনে উমরকে ডেকে বললেন, أَطِعْ أَبَاكَ وَطَلِّقْهَا তোমার পিতার কথা মেনে স্ত্রীকে তালাক দাও। [মুস্তাদরাক : ২৭৯৮]
সুতরাং পিতার কথা অনুযায়ী যদি স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার বিধান থাকতে পারে তাহলে মায়ের কথা অনুযায়ী স্ত্রীকে তালাক দেবো না কেন? লোকটির কথা শুনে ইমাম ইবনে হাম্বল (রহ.) বললেন, শোনো! তোমার মা উমর না। অর্থাৎ তোমার মা হযরত উমর (রা.) এর মতো ইনসাফ ও ন্যায়নিষ্ঠ না।
সাধারণত মা ও স্ত্রীর মধ্যে একধরনের বিরোধ ও দ্বন্দ্ব থাকে। মা চায় ছেলে যেন স্ত্রীর কথামতো না চলে, আর স্ত্রী চায় স্বামীকে নিজের কন্ট্রোলে রাখতে। ইসলামের নির্দেশ হল, মাকে তার সম্মান ও হক দাও এবং স্ত্রীকেও তার সম্মান ও হক দাও। কারও ওপর জুলুম করবে না। তাই আমাদের উচিত কেবল একপক্ষের কথা না শোনা। তবে উভয়ের মাঝে ভারসাম্য রক্ষা করা ও ইনসাফ বজায় রেখে উভয়কে সন্তুষ্ট রাখা বেশ কঠিন কাজ। এই কঠিন কাজটাই কৌশল, হেকমত, বুদ্ধিমত্তা ও ধৈর্যের সাথে করতে হবে। পুরুষ মানুষ হিসেবে এই কাজটা আপনাকে করতেই হবে। না করলে বিপদে পড়বেন।
আপনি বাসায় যাওয়ার পর আপনার মা হয়তো স্ত্রীর নামে অনেক বিচার দিবে। আপনি মাকে খুশি করার জন্য বলবেন, ওর এত্ত বড় সাহস! দাঁড়াও ওর বিচার করছি। মাকে সন্তুষ্ট করার পর আপনার বিবেক বিবেচনা অনুযায়ী স্ত্রীকে বলবেন কিংবা বলবেন না। কারণ, আপনার মায়ের সব কথা সঠিক নাও হতে পারে। মনে রাখবেন আপনার মা আপনার জন্য মা, আপনার স্ত্রীর মা না। গভীরভাবে খেয়াল করলে দেখবেন আপনার মা আপনার স্ত্রীর সঙ্গে যেমন আচরণ করে, নিজের মেয়ের সঙ্গে এমন আচরণ করছে না। একদিকে আপনার মা চাচ্ছে আপনার স্ত্রী যেন আপনাকে নিয়ন্ত্রণ না করে, আবার অন্যদিকে তিনি তার মেয়েকে পরামর্শ দিচ্ছেন জামাইকে নিয়ন্ত্রণ করার। এমন স্ববিরোধী অনেক কাজই আপনার মা করে থাকেন। বিষয়গুলো আপনাকে ইনসাফের সাথে হ্যান্ডেল করতে হবে।
আরও পড়ুন : জিনরা যেভাবে তৈরি করেছিল মসজিদে আল-আকসা
তদ্রুপ আপনার স্ত্রীর সকল অভিযোগ ও কথাই বিনা বিবেচনায় মেনে নিবেন না। কথা শুনবেন এবং বলবেন ব্যবস্থা নিচ্ছি। তাকে সন্তুষ্ট রাখার পর প্রয়োজন মনে করলে আপনার মাকে বলবেন, প্রয়োজন মনে না করলে বলবেন না। আপনার জন্য দুজনই জরুরি। আপনার মায়ের পায়ের নিচে আপনার জান্নাত, আবার আপনার স্ত্রীর পায়ের নিচে আপনার সন্তানের জান্নাত। উভয়কেই খুশি রাখা আবশ্যক। কাজটা জটিল, তবে অসম্ভব না।
বাংলাবার্তা/জেডএইচ