ছবি : বাংলাবার্তা
উত্তম স্বভাব মানুষকে সম্মানের আসনে আসীন করে। আর মন্দ স্বভাব মানুষকে অসম্মানিত ও অপমানিত করে। আর মানুষের মন্দ স্বভাবের মাঝে সবচেয়ে নিকৃষ্ট হচ্ছে ছলনা ও বিশ্বাসঘাতকতা। এ কারণে ছলনা ও বিশ্বাসঘাতকতার শাস্তিও হবে ভয়ংকর।
ছলনা ও বিশ্বাসঘাতকতাকারী জাহান্নামের সর্বনিম্ন পর্যায়ে থাকবে। এদের লাঞ্চিত করার জন্য হাশর ময়দানে প্রত্যেকের পিছনে ছলনা ও বিশ্বাসঘাতকতার ঝান্ডা ওড়িয়ে দেয়া হবে। হাশরের সবাই দেখে বুঝতে পারবে যে, ওরা পৃথিবীতে স্বজাতির সঙ্গে ছলনা ও বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল।
ছলনাকারী ও বিশ্বাসঘাতকের বিরুদ্ধে মহান আল্লাহর অভিযোগ উত্থাপন
মহান আল্লাহ হাশর ময়দানে যাদের বিরুদ্ধে ওই দিন অভিযোগ উত্থাপন করবেন- তাদের মাঝে প্রথম হচ্ছে ছলনাকারী ও বিশ্বাসঘাতক শ্রেণি। কতই না দুর্ভাগ্য তাদের! বিখ্যাত সাহাবি হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তিন শ্রেণির মানুষের বিরুদ্ধে স্বয়ং মহান আল্লাহ হাশর ময়দানে অভিযোগ উত্থাপন করবেন। ১. ওই সব লোক যারা আল্লাহর সঙ্গে ওয়াদা দিয়ে গাদ্দারি করেছে। ২. যারা স্বাধীন মানুষকে বিক্রি করে মূল্য আত্মসাৎ করেছে। ৩. যারা কোনো ব্যক্তিকে ভাড়ায় খাটিয়ে তার পারিশ্রমিক আদায় করে না। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২২৭০)
মহান আল্লাহ সব অন্যায়কারীর বিরুদ্ধেই দাঁড়াবেন। তারপরও এই তিন শ্রেণির কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করার দ্বারা বুঝা যাচ্ছে, এ তিন শ্রেণির অপরাধ মহান আল্লাহর দৃষ্টিতে খুবই গর্হিত।
ইসলামের দৃষ্টিতে ছলনা ও বিশ্বাসঘাতকতার মাঝে দুটি উপাদান পাওয়া যায়। আর উভয়টি জঘণ্য পাপ ও মন্দ স্বভাবের অন্তর্ভূক্ত। শরিয়তে ইসলামির নির্দেশনা হচ্ছে, কথা ও কাজে মিল থাকা। আর ছলনা ও বিশ্বাসঘাতকা হচ্ছে, মানুষের বাহ্যিক আচার-আচরণ ও চিন্তার মাঝে মিল না থাকা। বরং ছলনাকারী ও বিশ্বাষঘাতকতাকারীরা মুখে বলে এক কথা আর অন্তরে পোষণ করে অন্য কথা। ইসলামি পরিভাষায় এ ধরনের আচরণকে মুনাফেকি বলা হয়। মহান আল্লাহ মুনাফিকের বাস্তবতা প্রকাশ করে বলেন, ‘যখন মুনাফিকরা আপনার কাছে আসে তখন তারা বলে, আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি নিশ্চয় আল্লাহর রাসূল। আর আল্লাহ জানেন যে, আপনি নিশ্চয় তাঁর রাসূল এবং আল্লাহ সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, মুনাফিকরা অবশ্যই মিথ্যাবাদী (কারণ ওদের কথা ও অন্তরের বিশ্বাসের মাঝে মিল নেই)। (সুরা মুনাফিকুন, আয়াত : ১)
প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, মুনাফিকের আলামত চারটি। ১. আমানত রাখলে খেয়ানত করা, ২. মিথ্যা কথা বলা, ৩. অঙ্গীকার ভঙ্গ করা, ৪. ঝগড়ার সময় গালাগালি করা।’ (সহিহ বুখারি)
উপর্যুক্ত হাদিসে উল্লেখিত প্রত্যেকটি বিষয়েই মানুষের ভিতরগত অবস্থা ও বাহ্যিক আচরণের মাঝে মিল না থাকায় মুনাফিকের আলামত সাব্যস্ত করা হয়েছে। আর এটাই ছলনা ও বিশ্বাসঘাতকতা।
আরও পড়ুন : ৩ দিন পর শুরু হচ্ছে বিশ্ব ইজতেমা, প্রস্তুতি সম্পন্ন
ছলনাকারী ও বিশ্বাসঘাতকরা সবচেয়ে বেশি অপমানিত ও অপদস্ত হবে হাশরের মাঠে। তাদের অপকর্মকে মানব জাতির সামনে তুলে ধরার জন্য মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে পতাকার ব্যবস্থা করা হবে। সহিহ বুখারিতে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, প্রত্যেক ছলনাকারী ও বিশ্বাসঘাতকের জন্য কিয়ামত দিবসে আলাদা আলাদা ঝান্ডা থাকবে। বলা হবে এটা ওমুকের ছলনা ও বিশ্বাসঘাতকতার ঝান্ডা। ঝান্ডা মূলত ব্যবহার হয় পরিচয়ের জন্য। প্রত্যেক জাতির ঝান্ডা ওই জাতির সংস্কৃতি ও চেতনা বিশ্বাসের প্রতিনিধিত্ব করে। ছলনাকারী ও বিশ্বাসঘাতকের ঝান্ডা মূলত তার সংস্কৃতি ও চেতনা বিশ্বাসের প্রতিনিধিত্ব করবে।
ইসলামি শরিয়তে ছলনা ও বিশ্বাসঘাতকতা সম্পর্কে ভয়ঙ্কর ও মর্মন্তুদ শাস্তির কথা আসা সত্ত্বেও ছলনাকারী ও বিশ্বাসঘাতকের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছেই। কথা ও কাজে মিল রেখে চলা মুমিনের বৈশিষ্ট্য। মহান আল্লাহ আমাদের সকলকে কথা ও কাজে মিল রেখে চলার তাওফিক দান করুন। আমিন।
বাংলাবার্তা/জেডএইচ