ছবি : বাংলাবার্তা
মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় মহাসমাবেশ বিশ্ব ইজতেমা। আগামীকাল শুক্রবার ফজরের নামাজের পর আম বয়ানের মধ্যদিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে এবারের ৫৭তম ইজতেমা। ইজতেমাকে ঘিরে দেশ-বিদেশ থেকে লক্ষ লক্ষ ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরা একত্রিত হচ্ছেন টঙ্গীর তুরাগ তীরে। ইজতেমার আনুষঙ্গিক বিভিন্ন দিক নিয়ে বাংলাবার্তার সঙ্গে কথা বলেছেন বিশিষ্ট লেখক, গবেষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উর্দু বিভাগের অধ্যাপক মাওলানা ড. গোলাম রাব্বানী।
বাংলা বার্তা : বিশ্ব ইজতেমায় আপনার প্রথম স্মৃতি?
মাওলানা ড. গোলাম রাব্বানী : কিশোর বেলায় ১৩ বছর বয়সে সর্বপ্রথম টঙ্গী ইজতেমায় গিয়েছিলাম কত আশা, আকাঙ্ক্ষা নিয়ে। ওই সময় মাঠে অনেক কষ্ট করতে হতো। বাথরুম ছিল চটের। কাঁদা মাটি দিয়ে হেঁটে আসতে হতো। এতো কিছু সত্ত্বেও তাবলীগের সাথীদের মাঝে কত মিল মহব্বত দেখেছি। মাদরাসায় পড়া অবস্থায় প্রতি বছর ইজতেমায় গিয়েছি। কোনো বছর মিস করিনি। ইজতেমার ময়দানে মাওলানা উমর পালনপুরী রহ. কে দেখেছি। যার বয়ান মন্ত্রমুগ্ধের ন্যায় শুনতাম। মাওলানা আহমদ লাট সাহেবকেও কাছ থেকে দেখেছি। ভরাট কণ্ঠে বয়ান করেন। পুরো ইজতেমা ময়দান ঘুরে দেখতাম। বিশ্ব ইজতেমায় প্রথম স্মৃতিটা এখনো জ্বলজ্বল করছে।
বাংলা বার্তা : দাওয়াত ও তাবলীগের মূল উদ্দেশ্য কী?
মাওলানা ড. গোলাম রাব্বানী : দাওয়াত ও তাবলীগের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে বান্দাকে মহান আল্লাহর সাথে জুড়ে দেওয়া। মুসলিম অমুসলিম সবাইকে মহান আল্লাহর সাথে জুড়ে দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। দাওয়াত ও তাবলীগের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, যেই মুসলমানেরা দ্বীন ভুলে আছে, দ্বীন থেকে দূরে রয়েছে, নামাজ-রোজা থেকে দূরে আছে তাদেরকে বিভিন্ন আমলের সঙ্গে যুক্ত করে দেওয়া। মুসলমানদের মাঝে ঈমানী প্রেরণা জাগিয়ে তোলা, ইসলামের মৌলিক বিধান ও আমলের প্রতি মানুষের ভালোবাসা তৈরি করা হলো তাবলীগের মূল উদ্দেশ্য। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায় হজের ভাষণে দীনের দাওয়াত সবার কাছে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব দিয়েছেন।
বাংলা বার্তা : সমাজে দাওয়াত ও তাবলীগের ফলাফল কেমন?
মাওলানা ড. গোলাম রাব্বানী : দাওয়াত ও তাবলীগের কাজ সমাজে চলছে। অনেক মানুষ যারা দাওয়াত ও তাবলীগের বদৌলতে দ্বীনি উপকৃত হচ্ছেন। আমরা দেখতে পাই সমাজে দাওয়াত ও তাবলীগের ফলাফল ব্যাপক। সমাজে দাওয়াত ও তাবলীগের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের উপর যথেষ্ট দ্বীনি ও ঈমানী প্রভাব পড়ছে। এর মাধ্যমে মানুষের মাঝে ঈমানী প্রভাব তৈরি হচ্ছে।
বাংলা বার্তা : দাওয়াত ও তাবলীগের দুই গ্রুপ সম্পর্কে কী বলবেন?
মাওলানা ড. গোলাম রাব্বানী : পরিবার বড় হলে সংসার আলাদা হয়। ষড়যন্ত্র বা যে কোনো কারণেই হোক দুটি গ্রুপ হয়েছে। আমরা উলামায়ে কেরামের তত্ত্বাবধানে থাকবো। তবে যারা অন্য গ্রুপে আছে তাদেরকে কাফের মনে না করা। তারা মানুষদের দ্বীনের দাওয়াত দিচ্ছে। তাদেরকে গালি দেওয়া যাবে না। যেখানে দাওয়াত ও তাবলীগের কাজ চলছে সেখানে বলতে পারি ভাই, উলামায়ে কেরামের তত্ত্বাবধানে চলে আসেন। আর যে ভাই সদ্য দাওয়াত ও তাবলীগে এসেছে তাকে কাজ করতে দেন। সে যে দলেরই হোক। পরস্পর পরস্পরকে গুমরাহ বা খারাপ না বলা। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে দাওয়াত ও তাবলীগের গ্রুপিং থেকে রক্ষা করুন।
আরও পড়ুন : বিশ্ব ইজতেমায় পৌঁছেছেন মাওলানা ইবরাহিম দেওলা ও আহমদ লাট
বাংলা বার্তা : দুই গ্রুপের সমাধান কোন পথে?
মাওলানা ড. গোলাম রাব্বানী : প্রত্যেক গ্রুপকে কাজ করতে দেন। স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে দেওয়া উচিত। অনেক কাজেরই তো দুই গ্রুপ থাকে- বিষয়টিকে এভাবে নেওয়া। তবে সবচেয়ে ভালো হতো যদি এক গ্রুপ থাকত। দুই গ্রুপ নয় আমরা এক গ্রুপ চাই। অভ্যন্তরীণ সকল সমস্যার সমাধান করাটা সময়ের চাহিদা। মহান আল্লাহ আমাদের সঠিকটা বুঝার তাওফিক দান করুন। আমরা মানুষদের দাওয়াত দিব মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য। নিজের প্রচারের জন্য নয়।
বাংলা বার্তা : বাংলাবার্তাকে সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।
মাওলানা ড. গোলাম রাব্বানী : সুন্দর ও সময়োপযোগী বিষয়ে সাক্ষাৎকার গ্রহণ করায় বাংলাবার্তাকেও ধন্যবাদ।
বাংলাবার্তা/জেডএইচ