ছবি : বাংলাবার্তা
মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় মহাসমাবেশ বিশ্ব ইজতেমা। শুক্রবার ফজরের নামাজের পর আম বয়ানের মধ্যদিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় এবারের ৫৭তম ইজতেমা। ইজতেমাকে ঘিরে দেশ-বিদেশ থেকে লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরা একত্রিত হয়েছেন টঙ্গীর তুরাগ তীরে। ইজতেমার আনুষঙ্গিক বিভিন্ন দিক নিয়ে বাংলাবার্তার সঙ্গে কথা বলেছেন বিশিষ্ট লেখক, গবেষক, লন্ডন ইউকে টিভির পরিচালক ও জামিয়া লুতফিয়া আনওয়ারুল উলুম হামিদনগর বরুণা মাদরাসার নায়েবে সদরে মুহতামিম শায়খ নূরে আলম হামিদী।
বাংলাবার্তা : বিশ্ব ইজতেমায় আপনার প্রথম স্মৃতি?
শায়খ নূরে আলম হামিদী : প্রিয় মাতৃভূমির গা ঘেঁষে টঙ্গীর প্রান্তরে বিশ্ব ইজতেমার আনুষ্ঠানিকতা আমার হৃদয়ের আবেগ। কৈশোর থেকে স্বীয় পিতা ফিদায়ে ইসলাম শায়খুল হাদীস আল্লামা শায়খ খলীলুর রহমান হামিদী রাহিমাহুল্লার (পীর সাহেব বরুণা) সাথে সেই আবেগের তাড়নায় নিয়মিত বিশ্ব ইজতেমায় শরীক হওয়ার সৌভাগ্য হয়েছে। এখনো দেশে থাকলে শত ব্যস্ততার মধ্যেও বিশ্ব ইজতেমাকে বাদ দিতে পারিনি। আমার মনে পড়ে, আব্বার সাথে যখন কৈশোরে গিয়েছিলাম তখনকার অবিভক্ত বিশ্ব ইজতেমার আবেদন ছিল অনন্য। চলাচলের পথ তেমন উপযোগী না থাকায় পায়ে হেঁটে, রিক্সায়,ভ্যানগাড়ীতে পথ অতিক্রম করার সেই মধুময় ও মশ্রিণ স্মৃতি আমাকে আবেগ তাড়িত করে।
বাংলা বার্তা : দাওয়াত ও তাবলীগের মূল উদ্দেশ্য কী?
শায়খ নূরে আলম হামিদী : একজনের অর্জিত জ্ঞান বা শিক্ষা নিজ ইচ্ছা ও চেষ্টার মাধ্যমে অন্যের কাছে পৌঁছানো বা অপরকে শেখানোকে তাবলীগ বলা হয়। তাবলীগের মূল উদ্দেশ্য, আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে আল্লাহর সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক তৈরি করা, যাতে ইহকাল ও পরকালে শান্তি ও সফলতা লাভ করা যায়।
বাংলাবার্তা : সমাজে দাওয়াত ও তাবলীগের ফলাফল কেমন?
শায়খ নূরে আলম হামিদী : দ্বিধা ও সংকোচহীনভাবে একথা বলা যায় যে, বর্তমানে মুসলিম বিশ্বে সবচেয়ে ব্যাপকভিত্তিক দ্বীনী দা'ওয়াহ হল তাবলীগ, যার পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষ কোন প্রচলিত রাজনৈতিক সংস্কৃতি নেই। তাবলীগী মেহনতের কর্মপরিধি ও প্রভাব শুধু পাক-ভারত উপমহাদেশে নয়, বরং মুসলিম, অমুসলিম দেশসমূহেও সম্প্রসারিত। এর মাধ্যমে সব শ্রেণী-পেশার মানুষের মাঝে ব্যাপক সাড়া জেগেছে। টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা এর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। দ্বীনের এই মেহনতের ফলে সমাজের মানুষের মধ্যে ইসলামী আদর্শ সুদৃঢ় হচ্ছে। টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমাকে কেন্দ্র করে পণ্য ব্যবসায়ীরা অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধি অর্জন করছে। তাবলীগ জামায়াতের সর্বপ্রধান গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, তা মানুষকে আল্লাহর সাথে সম্পর্ক দৃঢ়করণে কাজ করে যাচ্ছে। যা হযরত শায়খে বর্ণভী রহ.-এর প্রতিষ্ঠিত আমাদের আঞ্জুমানে হেফাজতে ইসলামেরও কর্মপদ্ধতি। আল্লাহর সাথে মানুষের সম্পর্ক করার দায়িত্ব নবীগণের উপর ন্যস্ত ছিল। সেই নবীওয়ালা দায়িত্বের ধারাবাহিকতাকে টিকিয়ে রাখার প্রয়াসে বাংলাদেশে তাবলীগ জামাতের কর্মধারায় অভূতপূর্ব সফলতা এসেছে।
দাওয়াত ও তাবলীগের কার্যক্রম মুসলিম সমাজে আরো কিছু ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। যেমন: ভ্রাতৃত্ববোধ তৈরি, সমাজের সর্বত্র দ্বীন পালনের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি, দ্বীনী প্রতিষ্ঠানের প্রতি মানুষের ইতিবাচক মনোভাব তৈরি ইত্যাদি। সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে দ্বীনী দাওয়াত তথা তাবলীগের গুরুত্ব অপরিসীম।
বাংলাবার্তা : দাওয়াত ও তাবলীগের দুই গ্রুপ সম্পর্কে কী বলবেন?
শায়খ নূরে আলম হামিদী : হিদায়াত, ইত্তেহাদ, সম্প্রীতি, সৌহার্দ্য ইসলামের আদর্শিক চেতনা। আমি মনে করি এ ক্ষেত্রে সবাই আন্তরিক। জাতির কান্ডারী আকাবির ও আসলাফের নীতি-আদর্শ জলাঞ্জলি দিয়ে সেই আদর্শিক ধারাবাহিকতা অক্ষুন্ন থাকবে না। আলেমদের নেতৃত্ব আমাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্য।
বাংলা বার্তা : দুই গ্রুপের সমাধান কোন পথে?
শায়খ নূরে আলম হামিদী : আমি স্পষ্ট ও নির্ভীক চিত্তে বলি- দুপক্ষের ঐক্য প্রয়াস সময়ের অনিবার্য দাবী। 'পরমতসহিষ্ণুতা' বিশ্বাস করে হিদায়াত, ইত্তেহাদ, সৌহার্দ্য, সম্প্রীতির আদর্শিক চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে দুপক্ষের ঐক্যে মুসলিম বিশ্ব লাভবান হবে, ইনশাআল্লাহ।
নিজের রুচি, স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্য এবং ননআর্টিফিশিয়াল আচরণ প্রকাশ করতে গিয়ে জাতির দিশারি আকাবির-আসলাফের আদর্শিক স্রোতের বিপরীত অবস্থান মনুষ্য ইসলাম থেকে বিচ্ছিন্ন হবে।
বাংলা বার্তা : বাংলাবার্তাকে সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।
শায়খ নূরে আলম হামিদী : ধন্যবাদ আপনাকে ও বাংলাবার্তাকে। জাযাকাল্লাহু খায়রান।
বাংলাবার্তা/জেডএইচ