ছবি : বাংলাবার্তা
মহান আল্লাহ মানুষকে সর্বোত্তম আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন। সমস্ত সৃষ্টিজীবের উপর মানুষকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন । মানুষকে মহান আল্লাহ সম্মানিতও করেছেন। মানুষের প্রতিটি আকৃতি যেভাবে সৃষ্টি করলে সুন্দর ও মানানসই হবে সেভাবেই সৃষ্টি করেছেন।
নকল চুল লাগানো
নারীর সৌন্দর্যের প্রকাশ হবে শুধুই তার স্বামীর জন্য। নারীদের চুলে বেণি বা ঝুঁটি গেঁথে মাথা বাঁধা উত্তম। চুল বেশি বা লম্বার আন্দাজ যেন পরপুরুষ না করতে পারে, সেদিকে লক্ষ রাখা নারীর কর্তব্য। কারণ নারীর সুকেশ এক সৌন্দর্য, যা পরপুরুষের সামনে প্রকাশ করা হারাম। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘শেষ জমানার আমার উম্মতের মধ্যে কিছু এমন লোক হবে, যাদের নারীরা হবে অর্ধনগ্ন। তাদের মাথা কৃশ (খোঁপা) উটের কুঁজের মতো হবে। তোমরা তাদের অভিশাপ করো, কারণ তারা অভিশপ্ত।’
চুল বেশি দেখানোর উদ্দেশ্যে কৃত্রিম চুল বা নকল চুল ব্যবহার করা হারাম। স্বামী চাইলেও তা মাথায় লাগানো যাবে না।
বিখ্যাত সাহাবি হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অভিসম্পাত করেছেন ওই সব নারীর ওপর, যারা নকল চুল লাগিয়ে দেয় এবং যে নকল চুল লাগাতে বলে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫৯৩৭)
চুল রং করার বিধান
প্রত্যেক মানুষের জীবনে বার্ধক্য এক অনিবার্য বাস্তবতা। হায়াত থাকলে এক সময় প্রতিটি মানুষ বৃদ্ধ হবেই। মহান আল্লাহর বিধান এটাই। কুচকুচে কালো চুল এক সময় ধবধবে সাদা হয়ে যায়। বয়সের ব্যবধানে অনেকের চুল পাকে। আবার অপরিণত বয়সে অনেকের চুল পেকে যায়। চুল কালো ও বিভিন্ন রঙের আশ্রয় নেয় অনেকে।
নারীদের জন্যও কালো রং ছাড়া অন্য যে কোনো রং দ্বারা পাকা চুল রাঙিয়ে নেওয়া জায়েজ আছে। একজন নারীর জন্য পরপুরুষের সামনে চুল খোলা রাখার অনুমতিই তো নেই। তবে স্বামীকে খুশি করার জন্য চুলে মেহেদী দেয়া বা কালো ছাড়া অন্য রং করা মহিলাদের জন্য জায়েজ আছে। কোন সমস্যা নেই। তবে যদি পরপুরুষকে দেখানোর জন্য হয়,তাহলে জায়েজ নেই।
আরও পড়ুন : পুরুষদের বিয়ে করা কি ফরজ
এ সাদা চুল কালো ছাড়া যে কোনো রঙের কলপ ব্যবহার করা জায়েয। তবে কালো রঙের কলপ ব্যবহার করা যাবে না। প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মেহেদি বা এ ধরণের রঙের কোনো জিনিস দ্বারা চুল-দাড়ি রাঙাতে উৎসাহ দিয়েছেন। রাসুলের বিখ্যাত সাহাবি হজরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, মক্কা বিজয়ের দিন প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজরত আবু বকরের পিতা আবু কুহাফা (রা.)-এর চুল-দাড়ি পাকা দেখে তাকে বললেন, ‘এটাকে কোনো কিছু দ্বারা পরিবর্তন করো। তবে কালো থেকে বিরত থাকো। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৫৪৬৬)।
উপর্যুক্ত এ হাদিসে চুল-দাড়িতে কালো ছাড়া মেহেদি রঙ বা অন্য কলপ ব্যবহারের উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। তবে কালো রঙের কলপ ব্যবহার করতে নিষেধ করা হয়েছে।
সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য নারীরা কালো রং ছাড়া অন্যান্য রং দিয়ে চুল রাঙাতে পারে। ফ্যাশনের জন্য চুল ছোট ছোট করে কাটা বৈধ নয়। তবে চুলের অগ্রভাগ এলোমেলো হলে সামান্য কাটতে পারে। তবে না কাটাই উত্তম। কেননা নারীর বেশি চুল তার সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে।
ভ্রু প্লাক ও নকশা আঁকা
যদি বলা হয় আপনি কী জন্য ভ্রু প্লাক করছেন? নিশ্চয়ই মা-বাবা বা ভাই-বোনদেরকে দেখানোর জন্য ভ্রু প্লাক করছেন না? তাহলে কার জন্য? পর পুরুষদের দেখানোর জন্য? অথচ তাদের সামনে সাজ-গোজ করে যাওয়াতো দূরের কথা, আপনার জন্য নিকাব ছাড়া তাদের সামনে যাওয়াই নিষিদ্ধ।
স্বামী চাইলেও কপালের পশম চাঁছা ও ভ্রু প্লাক করা জায়েজ নেই। কেননা এর দ্বারা আল্লাহর সৃষ্টিতে পরিবর্তন করা হয়, যার অনুমতি ইসলামে নেই। এভাবে মুখে বা হাতে সুই ফুটিয়ে নকশা আঁকা বা ট্যাটু করা বৈধ নয়।
বিখ্যাত সাহাবি হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, ‘আল্লাহর অভিশাপ বর্ষিত হোক ওই নারীদের ওপর, যারা দেহাঙ্গে উল্কি উত্কীর্ণ করে এবং যারা করায়, যারা ভ্রু চেঁছে সরু (প্লাক) করে ও যারা সৌন্দর্য বৃদ্ধির মানসে দাঁতের মধ্যে ফাঁক সৃষ্টি করে এবং যারা আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে পরিবর্তন আনে।’ (বুখারি, হাদিস : ৪৮৮৬) তবে কোনো নারীর পুরুষের দাড়ি-গোঁফের মতো গালে বা ঠোঁটের ওপর পশম থাকলে তা তুলতে দোষ নেই।
মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে তাঁর নির্দেশ অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
বাংলাবার্তা/জেডএইচ