ছবি : বাংলাবার্তা
আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে আলমি শুরার ইজতেমা। আগামী ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে অনুষ্ঠিত হবে দিল্লির নিজামুদ্দীন মারকাজের মাওলানা সাদ কান্ধলভি অনুসারীদের ইজতেমা। ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে ১১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে এ ইজতেমা।
এরইমধ্যে ইজতেমা ময়দানে আসতে শুরু করেছেন আয়োজক কর্তৃপক্ষের শীর্ষ মুরব্বিরা। ময়দানের প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম শুরু করে দিয়েছেন তারা। মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সাদ পন্থীদের অনুসারীরা আনুষ্ঠানিকভাবে ইজতেমার ময়দান বুঝে নেন।
গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম প্রথমে মাওলানা জুবায়েরের অনুসারীদের কাছ থেকে ইজতেমা ময়দান বুঝে নেন। পরে সাদপন্থীরা প্রশাসনের সহযোগিতায় ইজতেমা ময়দানের বিদেশি নিবাসে মাইক, বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি, টয়লেট, রান্নার স্থান, বিদেশি মেহমানখানাসহ বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখেন। পরে সব ঠিকঠাক আছে মর্মে জেলা প্রশাসককে জানালে দুপুর আড়াইটার দিকে ইজতেমার ময়দান দ্বিতীয় পর্বের মাওলানা সাদ অনুসারী শীর্ষ মুরব্বিদের কাছে বুঝিয়ে দেন ডিসি।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম বলেন, প্রথম পর্বের মতো দ্বিতীয় পর্বের বিশ্ব ইজতেমায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা থাকবে। ইজতেমার আয়োজকদের যেন কোনো ধরনের অসুবিধা না হয় সেজন্য প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। আশা করছি, সবার সহযোগিতায় ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বও সুষ্ঠু-সুন্দরভাবে সম্পন্ন হবে।
ভারতের মাওলান সাদ কান্ধলভির কিছু বক্তব্য ও নেতৃত্বকে কেন্দ্র করে আলাদা হয়ে যায় তাবলিগ জামাতের কার্যক্রম। এর জেরে ২০১৮ সাল থেকে আলাদাভাবে অনুষ্ঠিত হচ্ছে বিশ্ব ইজতেমা। মাওলানা সাদকে ঘিরে বিভক্তির জেরে আলাদা হয়ে যাওয়ার পর থেকেই বাংলাদেশের বিশ্ব ইজতেমায় অংশগ্রহণ করেন না তিনি।
মাওলানা সাদকে বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে অংশ নিতে সুযোগ দেয়ার জন্য বাংলাদেশ মুসল্লি পরিষদ দাবি জানিয়েছেন। বুধবার (৭ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিশ্ব ইজতেমা ময়দানের প্রধান ফটকের সামনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান।
আরও পড়ুন : তাবলিগের উভয়পক্ষের সাথে দেওবন্দের সুসর্ম্পক রয়েছে : আরশাদ
সম্মেলনে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ মুসল্লি পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক মাওলানা মুফতি মুয়াজ বিন নূর। এ সময় মুফতি আজিম উদ্দিন, মুফতি মিজানুর রহমান, মুফতি আরিফ হোসেন, মাওলানা আনাস, সৈয়দ মাসুম, আতাউর রহমান ও আতাউল্লাহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
নাম প্রকাশ না করে সাদ পন্থীদের এক দায়িত্বশীল বাংলাবার্তাকে বলেন, ‘মাওলানা সাদ দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমায় অংশগ্রহণের বিষয়টি নিশ্চিত না হলেও শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত আমরা তার অংশগ্রহণের ব্যাপারে আশা রাখছি, তবে তিনি না এলেও তার ছেলে বা তিনি যাকে আমির বানিয়ে দেবেন তার অধীনে চলবে কার্যক্রম।’
অপর দিকে তাবলিগের মাওলানা সাদ কান্ধলভিকে বাংলাদেশে স্হায়ীভাবে নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। মাওলানা সাদ না আসার বিষয়ে অনড় অবস্থানে আছেন তারা।
উল্লেখ্য, মাওলানা সাদ কান্ধলভির বেশকিছু বক্তব্য নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়। এরপর নানা অসন্তোষের সত্ত্বেও ২০১৮ সালের বিশ্ব ইজতেমায় অংশগ্রহণের জন্য বাংলাদেশে আসেন তিনি। তখন এ নিয়ে বাংলাদেশে নানা তর্ক-বিতর্ক তৈরি হয়। মাওলানা সাদকে কোনোভাবেই ইজতেমায় অংশগ্রহনের সুযোগ দেয়া যাবে না বলে দাবি জানান ওলামায়ে কেরাম। এসব দাবির মুখে ইজতেমায় অংশগ্রহণ না করেই কাকরাইল মসজিদ থেকে ভারতে চলে যান তিনি। এরপর থেকে তাকে আর বিশ্ব ইজতেমায় উপস্থিত হতে দেখা যায়নি। যদিও প্রতিবার তাকে ইজতেমায় উপস্থিত করতে চেষ্টার কমতি রাখেন না তার অনুসারীরা। মাওলানা সাদকে ঘিরে বিরোধের কারণে ২০১৮ সাল থেকে আলাদাভাবে দুই পক্ষ তিন দিন করে ইজতেমার আয়োজন করা শুরু করে।
বাংলাবার্তা/জেডএইচ