ছবি : বাংলাবার্তা
পৃথিবীতে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক সবচেয়ে মধুর। আদর্শ দাম্পত্য জীবন জান্নাতের এক টুকরো। আর মনোমালিন্য, ঝগড়ার দাম্পত্য জীবন জাহান্নামের এক টুকরো। দাম্পত্য জীবন মধুর ও ভালোবাসায় ভরে উঠে স্বামী-স্ত্রীর পরস্পরের মানিয়ে নেয়ায়। অনেক সময় মধুর এ সম্পর্ক রূপ নেয় তিক্ততায়। পরস্পরের বিচ্ছেদ পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছে। ইদানীং স্ত্রী স্বামীকে তালাক দেয়া খুব সহজ বিষয়ে পরিণত হয়েছে।
ইসলামে সবচেয়ে অপছন্দনীয় হালাল তালাক!
দাম্পত্য সম্পর্কে ভাঙন ইসলাম পছন্দ করে না। ইসলামে সবচেয়ে অপছন্দনীয় হালাল তালাক। স্বাভাবিক অবস্থায় তালাক দেয়া যাবে না। তবে অনন্যপায় হলে ইসলামে তালাক দেয়ার অনুমতি দিয়েছে। এক তালাক দিলে যদি সে ঠিক হয়ে যায়, তার সঙ্গে ঘর সংসার করার অনুমতি রয়েছে। প্রাথমিকভাবে যার কারণে তালাক দেয়ার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে, তাকে বুঝানো, নিজের বুঝানোর মাধ্যমে কাজ না হলে, পরিবারের মাধ্যমে বুঝানো, মুরব্বিদের মাধ্যমে বুঝানো।
মহান আল্লাহ বলেন, ‘তাদের উভয়ের মধ্যে বিরোধ আশঙ্কা করলে তার (স্বামীর) পরিবার থেকে একজন ও তার (স্ত্রী) পরিবার থেকে একজন সালিস নিযুক্ত করবে। তারা উভয়ে নিষ্পত্তি চাইলে আল্লাহ তাদের মধ্যে মিমাংসার অনুকূল অবস্থা সৃষ্টি করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সবিশেষ অবহিত।’ (সূরা নিসা, আয়াত, ৩৫)
তারপরও যদি ঠিক না হয়। তাহলে ইসলামি শরিয়ত এক তালাক দেয়ার অনুমতি প্রদান করে। এক তালাক দিলে যদি সে ঠিক হয়ে যায়, তার সঙ্গে ঘর সংসার করার অনুমতি রয়েছে। দুই তালাক দিলে, মীমাংসা করে ফের বিয়ে করতে পারবে। তবে তিন তালাক দিয়ে দিলে ফের বিয়ে করলেও হবে না। তাকে ফিরিয়ে নেয়ার আর কোনো সুযোগ নেই।
স্ত্রী কি স্বামীকে তালাক দিতে পারে?
স্ত্রী কি স্বামীকে তালাক দিতে পারে? এর উত্তর হচ্ছে- স্ত্রী কর্তৃক স্বামীকে তালাক দেয়ার জন্য জরুরি হল, স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে তালাক দেয়ার অধিকার দেয়া। যদি তালাকের অধিকার স্বামী স্ত্রীকে না দিয়ে থাকে, তাহলে স্ত্রী স্বামীকে তালাক দিতে পারবে না। অধিকার এটা বিয়ের সময় দেয়া হয়। স্বামীর পক্ষ থেকে যে তালাক দেয়া হয় সেটাকে তালাক বলা হয়। আর স্ত্রীর পক্ষ থেকে কাজি বা তার স্থলাভিষিক্ত কারো কাছে তালাক চাওয়ার ভিত্তিতে মালের বিনিময়ে যে বিবাহ বিচ্ছেদ করা হয়, তাকে খুলা তালাক বলে।
আরও পড়ুন : স্বামী স্ত্রীকে ‘বোন’ বললে কি তালাক হয়ে যাবে
খুলা তালাক
স্ত্রী তার স্বামী থেকে খুলা (বা তার সমার্থক) শব্দাবলি দ্বারা মালের বিনিময়ে বিবাহ বিচ্ছেদ করাকে খুলা বলে। খুলা ‘ক্রয়-বিক্রয়’ শব্দ দ্বারাও সংগঠিত হতে পারে। কখনো ফারসি শব্দাবলি দ্বারাও সংগঠিত হবে। (যাহিরিয়্যাহ)
খুলার বিধান হলো, খুলা করার মাধ্যমে তালাকে বায়িন পতিত হয়। সাধারণত এক তালাকে বায়িনই পতিত হবে, তবে তাতে তিন তালাকের নিয়্যাত ও বিশুদ্ধ হবে। বায়িন মানে যে তালাকের পর দ্বিতীয়বার বিয়ে করতে হয় নতুন মোহরানা নির্ধারণ করে।
বিখ্যাত সাহাবি আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুলাকে এক তালাকে বায়িন সাব্যস্ত করেছেন। (সুনানে দারাকুতনি : ৪০২৫)
যদি কেউ কোনো মহিলাকে বারবার বিয়ে করে। প্রত্যেকবারই বিয়ে করার পর খুলা করে নেয়। তাহলে ঐ স্বামীর জন্য উক্ত খুলাকৃত স্ত্রীকে তিনবার খুলার পর আর বিয়ে করতে পারবে না।
তবে বিয়ে করতে পারবে। যদি তিনবার খুলা করার পর উক্ত স্ত্রী অন্য স্বামীকে গ্রহণ করে অতঃপর ঐ দ্বিতীয় স্বামীর সাথে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যায়,তাহলে ঐ মহিলার জন্য দ্বিতীয়বার প্রথম স্বামীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া জায়েজ। (ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া ১/৪৮৮)
তালাক পতিত হওয়ার জন্য কি সাক্ষী জরুরি?
আমাদের সমাজে ভ্রান্ত ধারণা প্রচলিত আছে, স্বামী তালাকের সময় কোনো সাক্ষী না রাখলে তালাক পতিত হয় না। এটাও সমাজের মনগড়া মাসয়ালা। সাক্ষীর প্রয়োজন হয় বিয়ের সময়। তালাক পতিত হওয়ার জন্য কোনো সাক্ষীরই প্রয়োজন নেই। স্বামী যদি রাতের অন্ধকারে নির্জনে বসে তালাক দেয় তাহলেও তালাক হয়ে যায়।
গর্ভাবস্থায় কি তালাক পতিত হয়?
আমাদের সমাজে আরেকটি ভ্রান্ত ধারণা প্রচলিত আছে যে, গর্ভাবস্থায় স্ত্রীকে তালাক দেওয়া হলে তা কার্যকর হয় না। এটিও সম্পূর্ণ অবাস্তব কথা। নিজেদের মনগড়া ফতোয়া। গর্ভাবস্থায় হোক বা অন্য যেকোনো অবস্থায়ই হোক তালাক দেয়া হলে তা পতিত হয়ে যায়।
মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে কুরআন, সুন্নাহ অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
বাংলাবার্তা/জেডএইচ