ছবি : বাংলাবার্তা
তাবলিগের একাংশের আমির মাওলানা সাদের বিতর্কিত বক্তব্যের বিষয়ে দারুল উলুম দেওবন্দের অবস্থানের পরিবর্তন হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন দেওবন্দের মুহতামমি ও শায়খুল হাদিস মুফতি আবুল কাসিম নোমানী।
গতকাল বুধবার (৭ ফেব্রুয়ারি) মাওলানা সাদের ব্যাপারে তিনি এ কথা বলেন।
মাওলানা নোমানী আরও বলেন, আমি এ কথা শুনে ভীষণ অবাক হয়েছি যে, কেউ কেউ নাকি বলে বেড়াচ্ছে যে, মাওলানা সাদের ব্যাপারে দারুল উলূম দেওবন্দের ফতোয়া ও অবস্থানের পরিবর্তন এসেছে। এই অপপ্রচার শুনে আমি যারপরনাই অবাক হয়েছি। কারণ, ফতোয়া প্রকাশিত হওয়ার পর মাওলানা সাদ দারুল উলুম দেওবন্দে আসেননি। আমাদের কারো সাথে তার কোনো সাক্ষাতও ঘটেনি। তিনি ব্যক্তিগত সফরে মাওলানা আরশাদ মাদানির সাথে সাক্ষাত করেছেন। তার সাথে সৌজন্যতামূলক নিমন্ত্রণ হয়েছে। তাদের মাঝে কী কথপোকথন হয়েছে, তা আমরা শুনিনি।
আমি আবারও বলছি যে, মাওলানা সাদ দারুল উলুম দেওবন্দে আসেননি এবং কোনো মাসয়ালায় আমাদের সামনে তিনি রুজু করেননি। তিনি বিগত কয়েক বছর যাবত যেসব গুমরাহ (ভ্রান্ত) বয়ান দিয়ে যাচ্ছেন, তার কোনোটা থেকে তিনি রুজুর ঘোষণা করেননি। আমি আমার ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ থেকে বলছি যে, তিনি এখনো অবিকল পূর্বের মতো গুমরাহ (ভ্রান্ত) বয়ান করে থাকেন।
চলতি বছর জানুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহে তার বয়ান সংকলন ‘ইরশাদাতে আকাবির’ নামে প্রকাশিত হয়েছে। বইটি এখন আমার সামনে রয়েছে। এ বইয়ের মাঝে অবিকল তার সেসব গুমরাহিপূর্ণ আপত্তিকর বয়ান রয়েছে- যা তিনি নিয়মিত বলে থাকেন।
অতএব, তার রুজুর ব্যাপারে মাওলানা আরশাদ মাদানি দা.বা. কোনো কথা বলে থাকলে এটা একান্তই তার নিজস্ব অভিমত। এর সাথে দারুল উলুম দেওবন্দের প্রাতিষ্ঠানিক অবস্থানের কোনোরূপ সম্পর্ক নেই। মাওলানা সাদ সাহেবের ব্যাপারে দারুল উলূম দেওবন্দের অবস্থানে কোনো পরিবর্তন আসেনি এবং এ জাতীয় কোনো ঘোষণা আমরা দিইনি। এ কথা আপনারা সবাইকে জানিয়ে দিন।
মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর বসুন্ধরা ইসলামিক রিসার্চ সেন্টারের দাওরায়ে হাদিসের খতমে বুখারি অনুষ্ঠানে ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দের সদরুল মুদাররিসীন ও জমিয়তে ওলামায়ে হিন্দের সভাপতি মাওলানা সাইয়েদ আরশাদ মাদানি তাবলিগের উভয়পক্ষের সাথে দারুল উলুম দেওবন্দের সুসম্পর্ক রয়েছে বলে মন্তব্য করেছিলেন।
আরও পড়ুন : তাবলিগের উভয়পক্ষের সাথে দেওবন্দের সুসর্ম্পক রয়েছে : আরশাদ
মাওলানা সাদের বক্তব্যে অভিযোগ উঠেছে তিনি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জায়গায় কুরআন, হাদিস, ইসলাম, নবি-রাসুল ও নবুয়ত এবং মাসআলা-মাসায়েল নিয়ে আপত্তিকর বয়ান করেছেন। তার দেয়া বিতর্কিত বয়ানের কিছু অংশ তুলে ধরা হলো,
১. প্রধান অভিযোগ হলো তিনি ঐতিহ্যবাহী শুরা ভেঙে আমিরতন্ত্র কায়েম করেছেন। এ বিষয়ে তাঁর একটি বক্তব্য প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেছেন, ‘আল্লাহর কসম, আমি তোমাদের আমির। যে আমাকে আমির মানবে না সে জাহান্নামে যাবে।’ এরপর কয়েকবার নিজামুদ্দিন মারকাজে মারধরের ঘটনা ঘটে। পরে ২০১৫ সালের নভেম্বরে রায়বেন্ড ইজতেমায় একত্রিত হয়ে নিজামুদ্দিনের মুরব্বিরা মারকাজের সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরেন এবং ১৩ জনের শুরা গঠন করা হয়। কিন্তু মাওলানা সাদ শুরা মানতে অস্বীকৃতি জানান। অতঃপর বিশেষ বাহিনীর মাধ্যমে তিনি নিজামুদ্দিন দখল করেন। তাঁর ওস্তাদসহ সব আলেমকে সেখান থেকে বের করে দেন, বের করতে গিয়ে আলেমদের শরীর থেকে রক্ত ঝরাতেও কসুর করেননি। (সূত্র: দাওয়াত ও তাবলিগ, ড. মুহাম্মদ আবদুল হাননান, বিশ্বসাহিত্য ভবন, নভেম্বর, ২০১৮ ভূমিকা দ্রষ্টব্য, পৃষ্ঠা-১৩)
২. মাওলানা সাদ বলেছেন, ‘মসজিদে ঈমানের আসর কায়েম করা ফরজ। মসজিদের বাইরে অন্য কোথাও হেদায়েত পাওয়া যাবে না।’ (সূত্র: দারুল উলুম দেওবন্দের ফতোয়া: ১৫)
৩. সাদ সাহেব বলেন, ‘হজরত মুসা (আ.) নিজের জাতির মধ্যে দাওয়াতের কাজ ছেড়ে আল্লাহ তাআলার সঙ্গে কথা বলার উদ্দেশ্যে নির্জনবাসে চলে গিয়েছিলেন। যার ফলে পাঁচ লাখ ৮৮ হাজার বনি ইসরাইল গোমরাহ হয়ে যায় (মুরতাদ হয়ে যায়)।’ (সূত্র: দারুল উলুম দেওবন্দের ফতোয়া: ১৮)
৪. মাওলানা সাদের মতে তাবলিগের ৬ নম্বরই প্রকৃত ইসলাম। সাদ সাহেব বলেন, ‘যে ব্যক্তি এই ৬ নম্বরকে পূর্ণ দীন মনে করে না, সে হলো ওই ব্যবসায়ীর মতো, যে নিজেই নিজের দধিকে টক বলে বেড়ায়। এমন ব্যবসায়ী কখনো সফল হতে পারে না।’ (সূত্র: দারুল উলুম দেওবন্দের ফতোয়া: ১৭)
উল্লেখ্য, মাওলানা আরশাদ মাদানি তার অবস্থান থেকে সরে এসে বলেন, দারুল উলুম দেওবন্দের ফতোয়ার সাথে আমি একমত। দেওবন্দের মতামতই আমার মতামত।
বাংলাবার্তা/জেডএইচ