ছবি : বাংলাবার্তা
স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক পৃথিবীতে সবচেয়ে মধুর ও আনন্দময়। জীবন চলার পথে রাগ, অভিমান, হাসি-কান্না অনেক কিছুই হবে। শুধু বিচ্ছেদ হবে না। একটি বিচ্ছেদ দুই পরিবার ও সন্তানের উপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। মা-বাবার বিচ্ছেদে সন্তান মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে।
ডিভোর্সের জরিপ
জরিপে নারী ও পুরুষরা প্রথম বিয়ে কত বছর বয়সে করেছেন, তার একটি গড় হিসেব তুলে ধরা হয়। বিবিএস বলছে, পুরুষের বিয়ের গড় বয়স ছিল ২৪ বছর। নারীর ক্ষেত্রে তা ১৮ দশমিক ৪ বছর। শহরে পুরুষ ও নারীদের প্রথম বিয়ের গড় বয়স একটু বেশি, গ্রামে কম।
এদিকে বিচ্ছেদ হওয়া মানুষের নিবিড় সাক্ষাৎকার নিয়ে জরিপ করেছে বিবিএস। এ জরিপে তালাক বা বিবাহবিচ্ছেদের দুই ধরনের হার পাওয়া পায়। একটি হলো স্থূল, অর্থাৎ মোট জনসংখ্যার অনুপাতে বিবাহবিচ্ছেদের হার। আর অন্যটি সাধারণ বিবাহবিচ্ছেদের হার, যেখানে ১৫ বছর বা তার বেশি বয়সীদের হিসাব করা হয়।
আরও পড়ুন : স্ত্রী স্বামীকে তালাক দেয়ার বিধান
বিবিএসের হিসাবে, ২০০৬ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত স্থূলবিচ্ছেদের হার শূন্য দশমিক ৬ থেকে ১ দশমিক ১ এর মধ্যে ওঠানামা করেছে। ২০২২ সালে তা বেড়ে ১ দশমিক ৪ এ দাঁড়ায়। সাধারণ বিবাহবিচ্ছেদের হারটি হিসাব করা হয়েছে নারী ও পুরুষ আলাদাভাবে। দেখা যায়, ২০২১ সালে নারীদের সাধারণ বিবাহবিচ্ছেদের হার ছিল ২–এর সামান্য কম। সেটা পরের বছর বেড়ে ৩ দশমিক ৬–এ দাঁড়ায়। একইভাবে পুরুষের ক্ষেত্রে হারটি ২০২১ সালে ছিল ২–এর সামান্য বেশি। পরের বছর তা বেড়ে ৩ দশমিক ৮–এ দাঁড়ায়।
ডিভোর্সে এগিয়ে নারীরা
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের তথ্য বলছে, বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন সাধারণত বেশি করেন নারীরা। ২০২২ সালে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে মোট বিবাহবিচ্ছেদ হয়েছে ৭ হাজার ৬৯৮টি। এর মধ্যে স্ত্রীরা আবেদন করেছিলেন ৫ হাজার ৩৮৩টি, যা মোট আবেদনের ৭০ শতাংশ। ঢাকা উত্তরের চিত্রও প্রায় একই। সেখানে বিবাহবিচ্ছেদের আবেদনের ৬৫ শতাংশ নারীর।
ইসলামি শরিয়তে তালাক হচ্ছে সবচেয়ে অপছন্দনীয় হালাল। দাম্পত্য সম্পর্কে ভাঙন ইসলাম পছন্দ করে না। প্রাথমিকভাবে যার কারণে তালাক দেয়ার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে, তাকে বুঝানো, নিজের বুঝানোর মাধ্যমে কাজ না হলে, পরিবারের মাধ্যমে বুঝানো, মুরব্বিদের মাধ্যমে বুঝানো।
মহান আল্লাহ বলেন, ‘তাদের উভয়ের মধ্যে বিরোধ আশঙ্কা করলে তার (স্বামীর) পরিবার থেকে একজন ও তার (স্ত্রী) পরিবার থেকে একজন সালিস নিযুক্ত করবে। তারা উভয়ে নিষ্পত্তি চাইলে আল্লাহ তাদের মধ্যে মিমাংসার অনুকূল অবস্থা সৃষ্টি করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সবিশেষ অবহিত।’ (সূরা নিসা, আয়াত, ৩৫)
তারপরও যদি ঠিক না হয়। তাহলে ইসলামি শরিয়ত এক তালাক দেয়ার অনুমতি প্রদান করে। এক তালাক দিলে যদি সে ঠিক হয়ে যায়, তার সঙ্গে ঘর সংসার করার অনুমতি রয়েছে। দুই তালাক দিলে, মীমাংসা করে ফের বিয়ে করতে পারবে। তবে তিন তালাক দিয়ে দিলে ফের বিয়ে করলেও হবে না। তাকে ফিরিয়ে নেয়ার আর কোনো সুযোগ নেই।
ইসলামি শরীয়তে স্ত্রী কি স্বামীকে তালাক দিতে পারে? এর উত্তর হচ্ছে- স্ত্রী কর্তৃক স্বামীকে তালাক দেয়ার জন্য জরুরি হল, স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে তালাক দেয়ার অধিকার দেয়া। যদি তালাকের অধিকার স্বামী স্ত্রীকে না দিয়ে থাকে, তাহলে স্ত্রী স্বামীকে তালাক দিতে পারবে না। অধিকার এটা বিয়ের সময় দেয়া হয়। স্বামীর পক্ষ থেকে যে তালাক দেয়া হয় সেটাকে তালাক বলা হয়। আর স্ত্রীর পক্ষ থেকে কাজি বা তার স্থলাভিষিক্ত কারো কাছে তালাক চাওয়ার ভিত্তিতে মালের বিনিময়ে যে বিবাহ বিচ্ছেদ করা হয়, তাকে খুলা তালাক বলে।
ডিভোর্সের অন্যতম কারণ পরকীয়া!
বিবাহবিচ্ছেদের ক্ষেত্রে বড় কারণ পরকীয়া! জরিপে উত্তরদাতাদের প্রায় ২৩ শতাংশ এই কারণ সামনে এনেছেন। এরপর রয়েছে দাম্পত্যজীবন পালনে অক্ষমতা ২২ শতাংশ। ভরণপোষণের ব্যয় বহন করতে অসামর্থ্য অথবা অস্বীকৃতি, পারিবারিক চাপ, শারীরিক নির্যাতন, যৌন অক্ষমতা বা অনীহা ইত্যাদিও রয়েছে বিবাহবিচ্ছেদের কারণের তালিকায়।
বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের কারণে সবচেয়ে বেশি বিচ্ছেদ হয়েছে ঢাকা বিভাগে, কম ময়মনসিংহ বিভাগে। দাম্পত্যজীবনে অক্ষমতায় বিবাহবিচ্ছেদ বেশি বরিশালে, কম সিলেটে। ভরণপোষণ দিতে অসমর্থতার কারণে বিবাহবিচ্ছেদ বেশি রাজশাহীতে, কম চট্টগ্রামে।
ইসলামি শরিয়তে পরকীয়ার পথ বন্ধ করে দিয়েছে। ইসলামের পর্দার বিধান মেনে চললে দাম্পত্য সম্পর্ক মধুর হয়ে যাবে। পর্দা স্বামী-স্ত্রী উভয়ের জন্যই। পর্দায় নারীর সম্মান, মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। বরং নারীর সম্মান, মর্যাদা ও সতীত্ব অক্ষুন্ন রাখতেই ইসলাম তাদের উপর আরোপ করেছে পর্দা পালনের বিধান। পর্দার বিধানের মাধ্যমে হৃদয়-মনের পবিত্রতা অর্জন করা সম্ভব। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন, ‘এ বিধান তোমাদের ও তাদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্রতার কারণ।’ (সূরা আহযাব, আয়াত: ৫৩)
ইসলাম পর্দা পালনের যে বিধান আরোপ করেছে তা মূলত অশ্লীলতা ও ব্যভিচার নিরসনের লক্ষ্যে এবং সামাজিক অনিষ্টতা ও ফেতনা-ফাসাদ থেকে বাঁচার নিমিত্তেই করেছে। নারীদের প্রতি কোনো প্রকার অবিচার কিংবা বৈষম্য সৃষ্টির জন্য করেনি।
পর্দা ইসলামের সার্বক্ষণিক পালনীয় অপরিহার্য বিধান। কোরআন-সুন্নাহর অকাট্য দলীল প্রমাণাদির ভিত্তিতে নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত ইত্যাদি বিধানাবলীর মতো সুস্পষ্ট এক ফরজ বিধান।
বিখ্যাত সাহাবি হজরত আলী (রা.) বর্ণনা করেন, একদা তিনি নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকটে ছিলেন। তখন নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (সাহাবীদের উদ্দেশ্যে) বললেন, মহিলাদের জন্য সর্বোত্তম বিষয় কোনটি? তারা চুপ হয়ে গেলেন। (কেউ বলতে পারলেন না) অতপর আমি ফিরে এসে ফাতেমা (রা.) কে জিজ্ঞাসা করলাম, মহিলাদের জন্য সর্বোত্তম বিষয় কোনটি? তিনি বললেন, কোনো পরপুরুষ তাকে দেখবে না (অর্থাৎ নারী পর্দাবৃত থাকবে)। তারপর আমি ঐ বিষয়টি নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট উল্লেখ করলাম। তিনি বললেন, নিশ্চয় ফাতেমা আমার অংশ, সে সত্য বলেছে)। (মুসনাদুল বাযযার: ৫২৬)
পর্দাহীনতার ফলে নানা অঘটনসহ ব্যক্তি ও পারিবারিক জীবন বিপর্যস্ত হচ্ছে। সুতারাং আমাদের সবাইকে ইসলামে ফিরে আসতেই হবে ইহকালীন শান্তি ও পরকালীন মুক্তির জন্য।
মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে কুরআন, সুন্নাহ অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
বাংলাবার্তা/জেডএইচ