ছবি : বাংলাবার্তা
প্রেম ভালোবাসা মানুষের অন্তরের একটি বিশেষ অবস্থা। প্রেম ভালোবাসা পবিত্র ও সুন্দর। প্রকৃত ও সত্যিকার প্রেম ভালোবাসা হচ্ছে মহান আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের জন্য। পৃথিবীতে কেউ কাউকে ভালোবাসলে একমাত্র মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই ভালোবাসবে। আর মহান আল্লাহর জন্য কেউ কাউকে ভালোবাসলে তা ইবাদত হিসেবে গণ্য হবে।
ভালোবাসা দিবসের ইতিবৃত্ত!
১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবস হিসেবে পালিত হয়। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায় যে, ২৭০ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি। তখন রোমের সম্রাট ছিলেন কর্ডিয়াস। সেই সময় ভ্যালেন্টাইন নামে একজন সাধু, তরুণ প্রেমিকদের গোপন পরিণয়-মন্ত্রে দীক্ষা দিত। এ অপরাধে সম্রাট কর্ডিয়াস সাধু ভ্যালেন্টাইনের শিরশ্ছেদ করেন। তার এ ভ্যালেন্টাইন নাম থেকেই এ দিনটির নামকরণ করা হয়। ‘ভ্যালেন্টাইন ডে’ যা আজকের ‘বিশ্ব ভালোবাসা দিবস’। বাংলাদেশে এ দিবসটি পালন করা শুরু হয় ১৯৯৯ সালে। অপরিণামদর্শী কতিপয় লোক এর ব্যাপক কভারেজ দেয়।
ভালোবাসা দিবসের ফলাফল কী?
ভালোবাসা দিবসের ফলাফল অত্যন্ত ভয়াবহ। অনেক স্বামী-স্ত্রীর মাঝেও বিচ্ছেদ ঘটে। কথিত এ দিবস এলেই দেখা যায়, দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন স্তরের শিক্ষার্থীরা, বিশেষ করে যুবক-যুবতীরা প্রেমের জোয়ারে উন্মাদ হয়ে ওঠে। নিজেদের রূপ-সৌন্দর্য উজাড় করে প্রদর্শনের জন্য রাস্তায় নেমে আসে। শুধু তাই নয়, অঙ্কন শিল্পীরা উল্কি আঁকার জন্য পসরা সাজিয়ে বসে থাকেন রাস্তার পাশে। তাদের সামনে তরুণীরা পিঠ, বাহু আর হস্তদ্বয় মেলে ধরে পছন্দের উল্কিটি এঁকে দেয়ার জন্য। তারপর গভীর রাত পর্যন্ত নীরবে-নিভৃতে প্রেমিক-প্রেমিকার খোশগল্প, অসামাজিকতা, অনৈতিকতা, অশ্লীলতা, বেহায়াপনা, নগ্নতা, সবশেষে কখনও কখনও অবৈধ শারীরিক সম্পর্ক ও ধর্ষণ। এটিই হলো বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের চূড়ান্ত ফলাফল ও বাস্তব চিত্র!
ইসলামে ভালোবাসা
মহান আল্লাহর জন্য কাউকে ভালোবাসা প্রকৃত ঈমানদারের অন্যতম গুণ। প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, মহাসম্মানিত পরাক্রমশালী আল্লাহ বলেন, ‘আমার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে যারা পরস্পরকে ভালোবাসে, তাদের জন্য (পরকালে) থাকবে নূরের মিম্বার, যা দেখে নবী ও শহীদরা ঈর্ষা করবেন।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৩৯০)
আরও পড়ুন : ইসলামে স্বামী-স্ত্রীর বিচ্ছেদে সন্তান যার সাথে থাকবে
মহান আল্লাহর জন্য পরস্পর পরস্পরকে ভালোবাসা মুমিন হওয়ার জন্য আবশ্যক করেছেন। বিখ্যাত সাহাবি হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কসম সেই সত্তার যাঁর হাতে আমার প্রাণ! তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না যতক্ষণ না মুমিন হও। আর তোমরা মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না পরস্পর পরস্পরকে ভালোবাসবে। আমি কি তোমাদেরকে এমন বিষয় অবহিত করব না, যা করলে তোমাদের পরস্পরের মধ্যে ভালোবাসা সৃষ্টি হবে? তা হলো, তোমরা নিজেদের মধ্যে সালামের প্রসার ঘটাও। (আবু দাউদ, হাদিস : ৫১৯৩)
প্রেম ভালোবাসা মানেই খারাপ কিছু নয়। প্রেম ভালোবাসা মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে রহমত। যদি প্রেম ভালোবাসা আল্লাহ না দিতেন তাহলে শত কষ্ট করে কোনো মা তার সন্তানকে লালন-পালন করত না। বাবা হাড়ভাঙা পরিশ্রম করত না। প্রেম ভালোবাসার প্রকারভেদ রয়েছে।
এক. বৈধ বা হালাল ভালোবাসা
বৈধ বা হালাল ভালোবাসা হচ্ছে, স্বামী-স্ত্রীর ভালোবাসা। স্বামী-স্ত্রীর মাঝে ভালোবাসা হচ্ছে পবিত্র ও কাঙ্ক্ষিত। ইসলাম এই ভালোবাসার প্রতি খুবই গুরুত্ব দিয়েছে। প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর স্ত্রীদের ভালোবাসতেন। তাদের প্রতি দয়া প্রদর্শন করতেন। তাদের মন জয় করার চেষ্টা করতেন।
প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আয়েশা (রা.)-এর সাথে দৌঁড় প্রতিযোগিতা করেছেন।’ আয়েশাকে নিয়ে মসজিদে তিনি আবিসিনীয়দের খেলা দেখিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘সে ব্যক্তি পূর্ণ মুমিন, যার চরিত্র সুন্দর, তোমাদের মধ্যে সেই উত্তম যে তার স্ত্রীর কাছে উত্তম।’ (রিয়াদুস সালিহিন, হাদিস : ১/১৯৭)
দুই. অবৈধ বা হারাম ভালোবাসা
বর্তমান সময়ে যুবক-যুবতীদের মাঝে বিবাহবহির্ভূত অনৈতিক সম্পর্ক সৃষ্টি হচ্ছে। বিবাহবহির্ভূত সব ধরনের সম্পর্ক ইসলামে হারাম। এখন এ প্রেম-ভালোবাসা যদি বিয়ের উদেশ্যেও করে তবুও হারাম। বৈধ প্রেম-ভালোবাসার একমাত্র পদ্ধতি হচ্ছে বিয়ে। প্রেম ভালোবাসা তো পরের বিষয়, ইসলামে বেগানা নারীর দিকে তাকানোই জায়েয নেই।
বিখ্যাত সাহাবী হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, চোখের ব্যভিচার হলো (বেগানা নারীকে) দেখা, জিহ্বার ব্যভিচার হলো (তার সঙ্গে) কথা বলা (যৌন উদ্দীপ্ত কথা বলা)। (বুখারি, হাদিস : ৬২৪৩)
মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে হারাম সম্পর্ক থেকে হেফাজত করুন। হালাল সম্পর্কে গভীরতা দান করুন। আমিন।
বাংলাবার্তা/জেডএইচ