ছবি : বাংলা বার্তা
চৌদ্দশত বছর পূর্বে প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মতের ভালোবাসায় কান্না করেছেন। ভালোবাসা পবিত্র ও সুন্দর। ভালোবাসা তো এমনই হওয়া উচিত যা ইহকাল ও পরকালে ফলপ্রসূ হয়। নবীজি (সা.)-এর ভালোবাসা ইহকাল ও পরকালে লাভবান হওয়ার অনন্য মাধ্যম। আর এ উম্মতকে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সীমাহীন ভালোবেসেছেন।
প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ছিল উম্মতের প্রতি সীমাহীন মমতা ও ভালোবাসা। উম্মতের কল্যাণ সাধনে ছিলেন সদা ব্যাকুল ও ব্যতিব্যস্ত। তিনি উম্মতের থেকে না এর কোনো প্রতিদান চাইতেন, আর না কৃতজ্ঞতা কামনা করতেন। চাইতেন শুধু তাদের নাজাত ও সফলতা। চাইতেন যেন উম্মত হেদায়েতের পথ হারিয়ে না ফেলে, আল্লাহর পক্ষ থেকে কোনো শাস্তি তাদেরকে আক্রান্ত না করে।
বিখ্যাত সাহাবি হজরত আব্দুল্লাহ বিন আমর ইবনুল আস (রা.) বলেছেন,নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই আয়াত পাঠ করলেন, যাতে ইবরাহীম (আ.)-এর কথা উল্লেখ আছে : ‘হে আমার রব! এসব প্রতীমা বহু মানুষকে বিভ্রান্ত করেছে। সুতরাং যে আমার অনুসরণ করবে সে আমার দলভুক্ত হবে।’ (আর সেই আয়াতও পড়লেন যেখানে আছে) ‘এবং ঈসা (আ.) বললেন, যদি আপনি তাদেরকে শাস্তি দেন তবে তারা তো আপনারই বান্দা। আর যদি তাদেরকে ক্ষমা করেন তবে নিশ্চয়ই আপনার ক্ষমতাও পরিপূর্ণ এবং হিকমতও পরিপূর্ণ।’ অতপর নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুহাত তুলে কেঁদে কেঁদে বললেন,‘হে আল্লাহ, আমার উম্মত! আমার উম্মত!!’ তখন মহান আল্লাহ বললেন, হে জিবরাঈল! মুহাম্মাদকে গিয়ে জিজ্ঞাসা কর সে কেন কাঁদে? যদিও তোমার রবই ভালো জানেন। অতপর জিবরাঈল (আ.) নবীজীর কাছে এসে তা জিজ্ঞাসা করলেন। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সব খুলে বললেন। যদিও মহান আল্লাহ সব জানেন। অতপর মহান আল্লাহ বললেন, হে জিবরাঈল! প্রিয় মুহাম্মাদকে বলো, আমি অচিরেই তোমার উম্মতের ব্যাপারে তোমাকে সন্তুষ্ট করব, ব্যথিত করব না। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২০২)
অপর এক হাদিসে উদাহরণ টেনে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মতের প্রতি তাঁর সীমাহীন ভালোবাসা এভাবে বুঝিয়েছেন, ‘আমার ও তোমাদের দৃষ্টান্ত সে ব্যক্তির দৃষ্টান্তের মত, যে আগুন জ্বালালো, ফলে ফড়িংদল পতঙ্গরাজি তাতে পড়তে লাগল। আর সে ব্যক্তি তাদের তা থেকে তাড়াতে লাগল। অনুরূপ আমিও আগুন থেকে রক্ষার জন্য তোমাদের কোমর ধরে টানছি, আর তোমরা আমার হাত থেকে ছুটে যাচ্ছ।’(সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২২৮৫)
পুরো উম্মতের হেদায়েত ও সঠিক পথের দিশায় তাঁর আত্মত্যাগের মাত্রা বুঝবার জন্য পবিত্র কুরআনের একটি আয়াতই যথেষ্ট, ‘মনে হয় যেন আপনি ওদের পিছনে পরিতাপ করতে করতে স্বীয় প্রাণ নাশ করে ফেলবেন, যদি ওরা এই বাণীর প্রতি ঈমান না আনে।’ (সূরা কাহ্ফ, আয়াত : ০৬)
আরও পড়ুন : নবীজি (সা.)-এর ভালোবাসায় আবু বকর (রা.)
এমনকি অকৃতজ্ঞ উম্মতের ধৃষ্টতার সামনেও তাঁর দয়ার বাঁধ ছিল অটল। তায়েফবাসীর কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন তাওহীদের বাণী, হেদায়েতের পয়গাম। তাদেরকে দেখাতে চেয়েছিলেন মুক্তির পথ। কিন্তু তাদের অজ্ঞতা তাদের উপর চেপে বসল। চরম ধৃষ্টতা দেখিয়ে তারা নবীজীর উপর চড়াও হল। পাথরের আঘাতে তাঁকে জর্জরিত করল। আঘাতে আঘাতে তাঁকে রক্তাক্ত করে ফেলল। কেঁপে উঠল আল্লাহর আরশ। পাঠালেন জিবরীল আমীনকে। জিবরীল বললেন,
‘আপনার কওম আপনার উদ্দেশে যা বলেছে এবং আপনার সাথে যে আচরণ করেছে আল্লাহ তা দেখেছেন। আপনার আদেশ পালনে পাহাড়ের দায়িত্বে নিয়োজিত ফিরিশতাকে পাঠিয়েছেন। তখন পাহাড়ের ফিরিশতা আমাকে সম্বোধন করে সালাম দিল এবং বলল, আমি পাহাড়ের দায়িত্বে নিয়োজিত ফিরিশতা। হে মুহাম্মাদ! আপনার কওমের বক্তব্য আল্লাহ শুনেছেন। আমাকে পাঠিয়েছেন আপনার আদেশ পালন করতে। আপনি আমাকে কী আদেশ করবেন করুন। আপনি যদি আদেশ করেন তাহলে আমি দুই পাহাড়ের মাঝে এদেরকে পিষে ফেলব। কিন্তু দয়ার সাগর নবীজী জবাব দিলেন, (আমি এটা চাই না;) বরং আমি আশা রাখি, মহান আল্লাহ এদের বংশধরদের মাঝে এমন মানুষ বের করবেন, যারা এক আল্লাহর ইবাদত করবে, তাঁর সাথে কাউকে শরীক করবে না।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১৭৯৫)
সুবহানাল্লাহ! কল্পনা করা যায়! শত কষ্টের মাঝেও উম্মতের কল্যাণ চিন্তায় মগ্ন। আজ উম্মত বেমালুম ভুলে গেছে, প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শ ও ত্যাগ। মেকি ভালোবাসায় গাঁ ভাসাচ্ছে। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরিপূর্ণ অনুসরণ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।