ছবি : বাংলা বার্তা
পবিত্র রমজান মুমিনের ইবাদতের বসন্তকাল। মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের ভরা মৌসুম। গুনাহ থেকে পবিত্র হওয়ার অনন্য সুযোগ রয়েছে পবিত্র এ মাসে। প্রতিটি সফল ও ভালো কাজের জন্য প্রস্তুতি প্রয়োজন। প্রস্তুতি ছাড়া বড় ও ভালো কাজ সম্পাদন করা কঠিন। তাই আমাদের পবিত্র রমজান মাস যথাযথভাবে কাজে লাগানোর জন্য প্রস্তুতি প্রয়োজন। আজকে আমরা জানবো পবিত্র রমজানের ৫ প্রস্তুতি সম্পর্কে
১. তওবা করা।
প্রতিটি মানুষ গুনাগার। কম বেশি গুনাহ সবারই রয়েছে। একমাত্র নবী ও রাসুলগণ নিষ্পাপ ও নিরপরাধ। আর মানুষ শয়তানের ধোকায় গুনাহের কাজে লিপ্ত হয়। কিন্তু মহান আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়ালু। তাই কোনো মুমিন বান্দা যখন নিজের গুনাহের জন্য লজ্জিত ও অনুতপ্ত হয়ে ভবিষ্যতে এ মন্দ কাজ না করার দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়ে মহান আল্লাহর কাছে কায়মনোবাক্যে তওবা ও ইস্তেগফার পাঠ করে; মহান আল্লাহ সাথে সাথে পাপী বান্দার গুনাহ ক্ষমা করে দেন। মহান আল্লাহ তওবাকারীকে ভালোবাসেন। বিখ্যাত সাহাবি হজরত আনাস (রা.) বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, প্রত্যেক আদম সন্তানই পাপী। আর উত্তম পাপী হলো সে ব্যক্তি যে (গুনাহ করে) তওবা করে। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ২৪৯৯)
২. বিগত রমজানের ত্রুটি-বিচ্যুতি ও অসমাপ্ত কাজ চিহ্নিত করা
ফলপ্রসূ পবিত্র রমজান মাস কাটানোর জন্য বিগত রমজানের ত্রুটি-বিচ্যুতি ও অসমাপ্ত কাজ চিহ্নিত করা আবশ্যক। কেন নিয়মিত কুরআন পাঠ করা হয়নি? কেন তারাবিহ পড়া হয়নি? কেন দান-সদকা করা হয়নি? কেন ইতেকাফ করা হয়নি? কেন রোজাদারকে ইফতার করানো হয়নি? কেন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করা সম্ভব হয়নি? কেন কুরআন-সুন্নাহর আলোচনায় বসা হয়নি? কেন রমজানে পরিবারের লোকদের হক আদায় করা হয়নি? কেন পাড়া-প্রতিবেশী ও আত্মীয়-স্বজনদের হক আদায় করা হয়নি? এ বিষয়গুলো চিহ্নিত করে নেওয়া। এ বছর রমজান আসার আগে আগে চিহ্নিত কারণগুলো থেকে নিজেকে হেফাজত রেখে- প্রস্তুতি গ্রহণ করা। এ বছর রমজান মাস যেন পরিপূর্ণভাবে কাজে লাগানো যায়।
৩. রোজার বিধি-বিধান জেনে নেওয়া।
পবিত্র রমজান মাস আসার আগে রোজা পালনের বিধি-বিধান তথা নিয়ম-কানুনগুলো ভালোভাবে জেনে নেওয়া আবশ্যক। বিধি-বিধান জানা ছাড়া অনেক পুণ্যের কাজও গুনাহে পরিণত হয়। যেমন রোজা রাখা অবশ্যই সাওয়াব ও পুণ্যের কাজ। কিন্তু রোজা রেখে কেউ যদি গীবত করে তাহলে তার রোজা হালকা হয়ে যাবে। তাই রোজার বিধি-বিধান ভালোভাবে জেনে নেওয়া জরুরি। যেমন, কোন কারণে রোজা ভেঙে যায়, কোন কারণে রোজা মাকরুহ হয়ে যায়, কীভাবে রোজা রাখলে রোজার পূর্ণ হক আদায় হয় ইত্যাদি।
আরও পড়ুন : উচ্চ আওয়াজে মাইক বাজানো সম্পর্কে ইসলাম যা বলে
৪. রোজা রাখা।
পবিত্র রমজান মাসের রোজা রাখা ফরজ। প্রতিটি প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থ নারী-পুরুষের ওপর রোজা রাখা ফরজ। হিজরতের দ্বিতীয় বর্ষে পবিত্র রমজানের রোজা ফরজ হয়। মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ, তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের ওপর, যেনো তোমরা পরহেযগারী অর্জন করতে পারো।’ (সূরা বাকারা, আয়াত :১৮৩)
৫.কুরআন তেলাওয়াত ও বেশি বেশি দান-সদকা করা।
পবিত্র রমজান কুরআন নাজিলের মাস। অতএব এ মাসে বেশি বেশি কুরআন তেলাওয়াত করতে হবে। পবিত্র কুরআন তেলাওয়াতের পাশাপাশি বুঝে তেলাওয়াত করার চেষ্টা করা। বুঝে তেলাওয়াত বেশি না পারলেও প্রতিদিন কমপক্ষে এক আয়াত হলেও বুঝে পড়ার চেষ্টা করা। কোনোভাবেই যেন কুরআন তেলাওয়াত ছুটে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখা।
ইসলাম ধর্মে ধনী-গরীবের ব্যবধান নেই। বরং ধনীদের পাঁচশ বছর পূর্বে গরীবরা জান্নাতে প্রবেশ করবে। তাই পবিত্র রমজান মাসে বেশি বেশি দান-সদকা করার চেষ্টা করা। প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও বেশি বেশি দান-সদকা করতেন। আর পবিত্র রমজানে তাঁর দান প্রবাহিত বাতাসের চেয়েও বেশি হত।
মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে পবিত্র রমজানের প্রস্তুতি ভালোভাবে গ্রহণের তাওফিক দান করুন। আমিন।
বাংলাবার্তা/জেডএইচ