ছবি: বাংলাবার্তা
প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভালোবাসার আধার। উম্মতের উপর প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুগ্রহের শেষ নেই। চৌদ্দশত বছর পূর্বে প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মতের ভালোবাসায় কান্না করেছেন। উম্মতের কল্যাণ সাধনে ছিলেন সদা ব্যাকুল ও ব্যতিব্যস্ত। প্রতিটি মুমিনও তাকে ভালোবাসে নিজের জীবনের চেয়েও বেশি। শুধু মুমিনগণেরই নয়- সৃষ্টি জগতের অন্যদেরও অগাধ ভালোবাসা ছিল প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি।
নবীজি (সা.)-কে গাছের সালাম নিবেদন
প্রখ্যাত সাহাবি হজরত ইয়ালা ইবনে মুররা (রা.) বলেন, একদা আমরা প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে সফর করছিলাম। মাঝপথে এক জায়গায় আমরা যাত্রাবিরতি করি। প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুমিয়ে পড়লে মাটি ভেদ করে একটি গাছ বের হয়ে প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ঘিরে নেয়। প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুম থেকে উঠলে আমরা তাঁকে ঘটনাটি খুলে বলি। তিনি বলেন, ‘গাছটি মহান আল্লাহর কাছে আমার প্রতি সালাম নিবেদনের অনুমতি প্রার্থনা করে। মহান আল্লাহ তাকে অনুমতি দেন।(মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ১৮০৩১)
নবীজি (সা.)-কে পাথরের সালাম নিবেদন
বিখ্যাত সাহাবি হজরত আলী (রা.) বলেন, ‘আমি প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে মক্কার কোনো এক প্রান্তের উদ্দেশে বের হই। তিনি যেকোনো পাহাড় বা বৃক্ষের কাছ দিয়ে যেতেন তারা তাঁকে ‘আস-সালামু আলাইকুম ইয়া রাসুলুল্লাহ’ বলে অভিবাদন জানাত।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৩৬২৬)
প্রখ্যাত সাহাবি হজরত জাবের ইবনে সামুরা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মক্কায় এমন একটি পাথর আছে, যেটি আমাকে নবুয়তের আগে সালাম দিত, ওই পাথরটি আমি এখনো চিনি। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৫৮৩৩)
উহুদ পাহাড় নবীজি (সা.) কে ভালোবাসে
বিখ্যাত সাহাবি হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, উহুদ পাহাড় আমাদের ভালোবাসে, আমরাও তাকে ভালোবাসি। (তিরমিজি, হাদিস : ৪৩০১)
আরও পড়ুন : সামান্য পানিতে নবীজির হাতের বরকতে ১৫শ সাহাবির অজু
প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খাদেম হজরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) বলেন, একবার প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উহুদ পাহাড়ে উঠলেন। অতঃপর আবু বকর (রা.), ওমর (রা.) ও উসমান (রা.) তাঁর অনুসরণ করেন। পাহাড় কাঁপতে থাকলে প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একে পদাঘাত করে বলেন, ‘উহুদ, স্থির হও! তোমার ওপর একজন নবী, একজন সিদ্দিক (আবু বকর) ও দুজন শহীদ (ওমর ও উসমান) আছেন। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৬৫১)
প্রখ্যাত হাদিসবেত্তা ইমাম নববী (রহ.) বলেন, প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি পাহাড়, পাথর ও গাছের সম্মান প্রদর্শন এবং সালাম নিবেদন করা আশ্চর্যের বিষয় নয়; বরং এটি প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মোজেজা। এরই মাধ্যমে জড় পদার্থের মাঝে বৈশিষ্ট্যগত পার্থক্যের বিষয়টি স্পষ্ট হয়। যেমনটি পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘পাথরের মধ্যে এমনও আছে, যা থেকে নদী-নালা প্রবাহিত হয়, তার মধ্যে কিছু এমন আছে, যা বিদীর্ণ হয়, অতঃপর তা থেকে পানি নির্গত হয়। আবার এমন কিছু পাথর আছে, যা আল্লাহর ভয়ে খসে পড়তে থাকে! আল্লাহ তোমাদের কাজকর্ম সম্পর্কে জ্ঞানহীন নন।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ৭৪)
মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভালোবাসা দান করুন। আমিন।
বাংলাবার্তা/জেডএইচ