ছবি: বাংলাবার্তা
মাতৃভাষা মহান আল্লাহর সেরা দান। মানুষ মনের ভাব প্রকাশ করার জন্য যে ধ্বনি ব্যবহার করে তা হলো ভাষা। মানুষ জন্মের পর থেকে মায়ের মুখের ভাষা শুনে যে ভাষা বলতে শিখে তাই মাতৃভাষা। মা ও মাতৃভাষার সম্পর্ক নিবিড়।
একমাত্র মাতৃভাষায়ই মানুষ তৃপ্ত হয়ে মনের ভাব প্রকাশ করতে পারে। মহান আল্লাহ সকল নবী ও রাসুল মাতৃভাষায় প্রেরণ করেছেন। মাতৃভাষা চর্চা বা বিশুদ্ধভাবে কথা বলা মহানবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুপম আদর্শ।
প্রত্যেক নবী স্বজাতির ভাষায় প্রেরিত হয়েছেন
মহান আল্লাহ সমগ্র মানবজাতিকে সঠিক পথ দেখানোর জন্য যুগে যুগে অসংখ্য নবী-রাসুল পাঠিয়েছেন। তাঁদের ওপর যেসব আসমানি কিতাব নাজিল হয়েছিল সেগুলোর ভাষা ছিল ওই নবী-রাসুলদের স্বজাতির ভাষা। মাতৃভাষার সঙ্গে প্রত্যেক জনগোষ্ঠীর সভ্যতা ও সংস্কৃতি জড়িত। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমি প্রত্যেক রাসুলকেই তাঁর স্বজাতির ভাষাভাষী করে পাঠিয়েছি, তাদের কাছে পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা করার জন্য...।’ (সুরা ইবরাহিম, আয়াত : ০৪)
বিখ্যাত সাহাবি হজরত আবু জর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘মহান আল্লাহ প্রত্যেক নবীকে তাঁর স্বজাতির ভাষায় প্রেরণ করেছেন।’ (মুসনাদে আহমাদ)
আমরা দেখি, হজরত ঈসা (আ.)-এর জাতির মাতৃভাষা ছিল সুরিয়ানি, তাই সুরিয়ানি ভাষায় তাঁর প্রতি ইনজিল অবতীর্ণ হয়। হজরত মুসা (আ.)-এর জাতির ভাষা ছিল ইবরানি, তাই ইবরানি ভাষায় তাওরাত অবতীর্ণ হয়। হজরত দাউদ (আ.)-এর জাতির ভাষা ছিল ইউনানি, তাই ইউনানি বা আরামাইক ভাষায় জাবুর অবতীর্ণ হয়। আর সর্বশ্রেষ্ঠ রাসুল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর আগমনাঞ্চলের ভাষা ছিল আরবি, তাঁর প্রথম ও প্রত্যক্ষ শ্রোতা ছিলেন আরবরা, তাই সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্থ পবিত্র কুরআন আরবি ভাষায় অবতীর্ণ হয়। আসমানি কিতাবসমূহ যদি নবী-রাসুলদের নিজ নিজ মাতৃভাষায় না হয়ে ভিন্ন ভাষায় নাজিল হতো, তাহলে নিজেদের উম্মতদেরকে দীনের আলোর দিকে আহবান করা নবী-রাসুলদের জন্য অনেক কঠিন হয়ে যেত।
সকল ভাষা মহান আল্লাহর সৃষ্টি
মহান আল্লাহ হজরত আদম (আ.)কে সৃষ্টি করে তাকে সব ভাষা শিখিয়ে দিয়েছিলেন। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন, ‘তিনিই সৃষ্টি করেছেন মানুষ, তিনিই তাকে শিক্ষা দিয়েছেন ভাব প্রকাশের উপযোগী ভাষা।’ (সুরা আর রাহমান, আয়াত : ২-৩)
হজরত মুসা (আ.) ফেরাউনের কাছে আল্লাহ তায়ালার আদেশ-নিষেধ পৌঁছে দেওয়ার পূর্বে আবেদন করেছিলেন, ‘হে আমার প্রভু! আমার জিহবা থেকে জড়তার সমাধান করে দিন, যাতে তারা আমার কথা বুঝতে পারে।’ (সুরা ত্বহা, আয়াত : ২৭-২৮)
নবীজি (সা.) আরবের মধ্যে সবচেয়ে বিশুদ্ধভাষী ছিলেন
বিখ্যাত সাহাবি হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আমাকে দান করা হয়েছে সর্বমর্মী বচন।’ হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আমি আরবের শ্রেষ্ঠ বিশুদ্ধভাষী; কুরাইশ গোত্রে আমার জন্ম।’
নবীজি (সা.) শব্দের ভুল প্রয়োগ শুধরে দিতেন
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে যেমন ভাষার প্রতি যত্নবান ছিলেন তেমনি অন্যদেরও যত্নবান হতে উদ্বুদ্ধ করতেন। তিনি কাউকে শব্দের ভুল প্রয়োগ বা ভাষার বিকৃতি করতে দেখলে তা শুধরে দিতেন। একবার এক সাহাবি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বললেন, ‘আ-আলিজু’। শব্দটির অর্থ ‘আমি কি প্রবেশ করব?’ আরবি ভাষায় এ অর্থে ব্যবহৃত হলেও তা অনুমতি প্রার্থনার জন্য যথেষ্ট নয়। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর গোলামকে বললেন, বাইরে গিয়ে তাকে একথা বলতে বলো, ‘আসসালামু আলাইকুম! আ-আদখুলু?’ কারণ সে সুন্দরভাবে অনুমতি প্রার্থনা করেনি। (আল-আদাবুল মুফরাদ)
আজ আফসোসের সাথে বলতে হয়- আমাদের মাতৃভাষা মাজলুম। ইংরেজি ভাষার আধিপত্যে বাংলা ভাষা প্রায় ম্রিয়মান। শিক্ষিত খুব কম মানুষই পাওয়া যাবে যারা দুই মিনিট বিশুদ্ধ ও খাঁটি বাংলায় কথা বলতে পারবেন। বাংলা ভাষায় ইংরেজি না মিশালে যেন তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতাই হারিয়ে যায়। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে বিশুদ্ধ মাতৃভাষায় কথা বলার তাওফিক দান করুন। আমিন ।
বাংলাবার্তা/জেডএইচ