ছবি: বাংলাবার্তা
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। উম্মতের প্রতি তাঁর ভালোবাসা ছিল সীমাহীন। সর্বাবস্থায় উম্মতের চিন্তায় বিভোর থাকতেন। উম্মত কীভাবে জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেয়ে জান্নাতে যেতে পারে সে চিন্তায় সর্বদা বুঁদ হয়ে থাকতেন।
বিখ্যাত সাহাবি জাবের (রা.) বলেন, খন্দকের যুদ্ধের প্রাক্কালে আমরা পরিখা খনন করছিলাম। এমন সময় একটা শক্ত পাথর দেখা দিল। তখন লোকেরা নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে বলল, পরিখা খননকালে একটি শক্ত পাথর পাওয়া গেছে। তিনি বললেন, ‘আচ্ছা আমি নিজেই খন্দকের মধ্যে নামবো। অতঃপর তিনি দাঁড়ালেন, সে সময় তাঁর পেটে পাথর বাঁধা ছিল।আর আমরাও তখন তিনদিন পর্যন্ত কিছু খেতে পায়নি। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোঁদাল হাতে নিয়ে পাথরটির উপর আঘাত করলে তা চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে বালুকণায় পরিণত হয়।
জাবের (রা.) বলেন, আমি আমার স্ত্রীর নিকটে এসে বললাম, ‘তোমার কাছে খাওয়ার কিছু আছে কি? আমি নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ভীষণ ক্ষুধার্ত অবস্থায় দেখলাম। তখন সে একটি চামড়ার পাত্র হতে এক ছা পরিমাণ যব বের করল। আমাদের একটি মোটাতাজা বকরীর বাচ্চা ছিল। তা আমি জবাই করলাম আর আমার স্ত্রী যব পিষল। অবশেষে আমরা হাঁড়িতে গোস্ত রান্নার জন্য বসালাম।
আরও পড়ুন : রমজানে যাদের জন্য রোযা না রাখার অনুমতি আছে
অতঃপর আমি নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে চুপে চুপে বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আমরা একটি বকরীর বাচ্চা জবাই করেছি। আর এক ছা যব ছিল, আমার স্ত্রী তা পিষেছে। সুতরাং আপনি আরও কয়েকজন সঙ্গে নিয়ে চলুন।
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উচৈচঃস্বরে সবাইকে বললেন, ‘হে পরিখা খননকারীগণ! এসো তোমরা তাড়াতাড়ি চল, জাবের তোমাদের জন্য খাবার তৈরী করেছে। অতঃপর নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, ‘তুমি বাড়ি ফিরে যাও। আমি না আসা পর্যন্ত গোশতের ডেকচি নামাবে না এবং খামির থেকে রুটিও বানাবে না। এরপর তিনি লোকজনসহ উপস্থিত হলেন। তখন আমার স্ত্রী খামিরগুলি নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে দিলে তিনি তাতে লালা মিশিয়ে দিয়ে বরকতের জন্য দোয়া করলেন।
অতঃপর ডেকচির নিকট অগ্রসর হয়ে তাতেও লালা মিশিয়ে বরকতের জন্য দোয়া করলেন। এরপর বললেন, ‘তুমি আরও রুটি প্রস্তুতকারিণীদের ডাক, যারা তোমার সাথে রুটি বানাবে। আর চুলার উপর থেকে ডেকচি না নামিয়ে তুমি তা থেকে তরকারী নিয়ে পরিবেশন করো।’
জাবের (রা.) বলেন, ‘সাহাবিদের সংখ্যা ছিল ১হাজার। আমি আল্লাহর কসম করে বলছি, সকলে তৃপ্তি সহকারে খেয়ে চলে যাওয়ার পরও ডেকচি ভর্তি তরকারী ফুটছিল এবং প্রথম অবস্থার ন্যায় আটার খামির হতে রুটি প্রস্তুত হচ্ছিল।’
সুবহানাল্লাহ! ভাবা যায় মাত্র ১০জনের খাবার ১হাজার সাহাবি তৃপ্তিসহ খেয়েও খাবার যা ছিল তাই । একটুও কমেনি। এটা শুধুমাত্র নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বরকত! মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শ অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
বাংলাবার্তা/জেডএইচ