ছবি: বাংলাবার্তা
ইসলামের জন্য নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পর সবচেয়ে বেশি ত্যাগ স্বীকার করেছেন সাহাবায়ে কেরাম। মহান আল্লাহ ও তাঁর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের উপর সন্তুষ্ট হয়েছেন। তাই তো মহান আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট তারাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট।’ (সুরা বায়্যিনা, আয়াত : ০৮)
সাহাবি আরবি শব্দ। অর্থ সঙ্গী, সাথী। ইসলামি শরিয়তের পরিভাষায় সাহাবি বলা হয়, যারা ঈমান অবস্থায় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাক্ষাৎ লাভ করেছেন এবং মুমিন অবস্থাতেই ইন্তেকাল করেছেন। (কাওয়াইদুল ফিকহ, পৃষ্ঠা-৩৪৬)
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রিয় সহচরবৃন্দ সাহাবিগণ। দ্বীন ইসলামের জ্ঞান আহরণ ও প্রচার-প্রসারে যারা জীবন বাজি রেখে আমৃত্যু কাজ করেছেন। সেই সাহাবিগণ আমাদের সাধারণ উম্মতের মতো নন। তাঁরা নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর উম্মতের মাঝে আল্লাহর তৈরি সেতুবন্ধনের মতো। তাঁদের মাধ্যম ব্যতীত উম্মতের কাছে কুরআন, সুন্নাহর শিক্ষা পৌঁছার ভিন্ন কোনো পথ নেই। তাই ইসলামে তাঁদের বিশেষ মর্যাদা রয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তারাই মুমিন, যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি ঈমান আনার পর সন্দেহ পোষণ করে না এবং আল্লাহর পথে জান ও মাল দ্বারা জিহাদ করে। তারাই (সাহাবিগণ) সত্যনিষ্ঠ (বা সত্যবাদী)।’ (সুরা হুজুরাত, আয়াত : ১৫)
অপর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন,‘কিন্তু আল্লাহ তায়ালা তোমাদের অন্তরে ঈমানের মহব্বত সৃষ্টি করে দিয়েছেন। পক্ষান্তরে কুফর, শিরক, পাপাচার ও নাফরমানির প্রতি ঘৃণা সৃষ্টি করে দিয়েছেন। তারাই (সাহাবিগণ) সৎপথ অবলম্বনকারী।’ (সুরা হুজুরাত, আয়াত : ৮)
মহান আল্লাহ বলেন,‘আল্লাহ তাদের জন্য কালিমায়ে তাকওয়া তথা সংযমের দায়িত্ব অপরিহার্য করে দিলেন। বস্তুতঃ তারাই ছিল এর অধিকতর যোগ্য ও উপযুক্ত।’ (সুরা ফাতাহ, আয়াত : ২৬)
‘কালিমায়ে তাকওয়া’ মানে তাওহীদ ও রিসালতের কালিমা। সাহাবায়ে কেরাম এই কালিমার অধিকতর যোগ্য ও উপযুক্ত আখ্যা দিয়ে সেসব লোকের লাঞ্ছনা প্রকাশ করে দিয়েছেন, যারা তাঁদের প্রতি কুফর ও নিফাকের দোষ আরোপ করে।
তিনি আরও বলেন- ‘এমন সব লোকই (সাহাবিরা) সত্যিকারের মুমিন (যাদের ভেতর ও বাহির এক রকম এবং মুখ ও অন্তর ঐক্যবদ্ধ)। তাদের জন্য রয়েছে স্বীয় পরওয়ারদিগারের নিকট সুউচ্চ মর্যাদা ও মাগফিরাত এবং সম্মানজনক রিজিক।' (সুরা আনফাল, আয়াত : ০৪)
বিখ্যাত সাহাবি হজরত আবু সাঈদ খুদরী (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমরা আমার সাহাবিগণকে গাল-মন্দ করো না। কেননা (তারা এমন শক্তিশালী ঈমান ও সুউচ্চ মর্যাদার অধিকারী তোমাদের কেউ যদি ওহুদ পাহাড় পরিমাণ সোনাও আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করে, তবুও তাদের এক মুদ (৩ ছটাক প্রায়) কিংবা অর্ধমুদ (যব খরচ) এর সমান সওয়াবে পৌঁছতে পারে না। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩৩৯৭)
আরও পড়ুন : সুরা ইখলাস পাঠের অনন্য ফজিলত
প্রখ্যাত সাহাবি আব্দুল্লাহ ইবনে মুগাফ্ফাল (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,‘যে আমার সাহাবীদেরকে কষ্ট দিল সে যেন আমাকে কষ্ট দিল; যে আমাকে কষ্ট দিল সে যেন আল্লাহকে কষ্ট দিল; যে আল্লাহকে কষ্ট দিল অচিরেই আল্লাহ তাকে পাকড়াও করবেন।' (তিরমিযী, হাদিস : ৩৭৯৭)
সাহাবায়ে কেরাম ঈমান যাচায়ের কষ্টিপাথর। সাহাবায়ে কেরাম প্রিয় নবী মুহাম্মদ সা.-এর সংস্রব ও সাহচর্যের মাধ্যমে বিশ্বজনীন খ্যাতনামা ও মানবতাবোধ সম্পন্ন উন্নত জাতিতে পরিণত হলেন। শুধু তাই নয়; বরং বিশ্বমানবতার জন্য চির অনুসরণযোগ্য এবং উম্মতের ঈমান-আমলের সত্যতা ও শুদ্ধাশুদ্ধি যাচাইয়ের জন্য মাপকাঠির সনদ লাভ করেছেন মহান আল্লাহর পাক থেকে।
সাহাবায়ে কেরামের ঈমানকে অন্যদের ঈমান যাচায়ের কষ্টিপাথর সাব্যস্ত করে মহান আল্লাহ তাঁদেরকে সম্বোধন করে ইরশাদ করেন, ‘যদি তারা ঈমান আনে, যেরূপ তোমরা ঈমান এনেছ, তবে তারা হেদায়াতপ্রাপ্ত হবে। আর যদি তারা (এত্থেকে) মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে তারা হঠকারিতায় রয়েছে।’ (সূরা বাক্বারা, আয়াত : ১৩৭)
এই আয়াতে সাহাবীদের ঈমানকে আদর্শ ঈমানের মাপকাঠি সাব্যস্ত করে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে, মহান আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য ও স্বীকৃত ঈমান সেরকম ঈমান, যা রাসূলের সাহাবীগণ অবলম্বন করেছেন। যে ঈমান ও বিশ্বাস এত্থেকে চুল পরিমাণও ভিন্ন, তা আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য নয়।
মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে সাহাবিগণের পদাঙ্ক অনুসরণ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
বাংলাবার্তা/জেডএইচ