ছবি: বাংলাবার্তা
আয়েশা (রা.) ছিলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একমাত্র কুমারী স্ত্রী। যার চরিত্রের পবিত্রতায় পবিত্র কুরআনে ১০টি আয়াত নাজিল হয়েছে। মহান আল্লাহ যার চরিত্রের সার্টিফিকেট দিয়েছেন। তাঁর চরিত্রে কালিমা লেপনের চেষ্টা করেছে মুনাফিকেরা।
রাসুলুল্লাহ (সা.) স্ত্রীসহ সফরে যেতেন
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিয়ম ছিল কোনো যুদ্ধে যাওয়ার আগে স্ত্রীদের নামে লটারি করতেন। লটারিতে যার নাম উঠতো, তাকে সঙ্গে নিতেন। সে হিসাবে বনু মুছত্বালিক্ব যুদ্ধে হযরত আয়েশা (রা.) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সফরসঙ্গিনী হন।
আয়েশা (রা.)-এর স্বর্ণের হার হারিয়ে যায়
আয়েশা (রা.) যাত্রাকালে প্রিয় ভগ্নী আসমা (রা.)-এর একটি হার ধার নেন। হারটির আংটা এতো দুর্বল ছিলো যে বারবার খুলে যাচ্ছিলো। যুদ্ধ শেষে ফেরার পথে মদীনার নিকটবর্তী বিশ্রামস্থলে তাঁর গলার স্বর্ণহারটি হারিয়ে যায়। যা তিনি তাঁর বোন আসমার নিকট থেকে ধার হিসাবে এনেছিলেন। হাজত সারতে তিনি বাইরে গিয়েছিলেন। ফলে সেখানেই হারটি পড়ে গেছে মনে করে তিনি পুনরায় সেখানে গমন করেন ও হারটি সেখানে পেয়ে যান।
আয়েশা (রা.) কাফেলার পিছনে থেকে যান
সফরে আয়েশা(রা.) নিজ হাওদাতে আরোহণ করতেন। এরপর হাওদার দায়িত্বে থাকা সাহাবিগণ হাউদা উঠের পিঠে উঠতেন। তখন আয়েশা (রা.)-এর বয়স ছিল কেবল চৌদ্দ বছর। তিনি এতো হালকা গড়নের ছিলেন যে, হাওদা-বাহক সাহাবিগণ সাধারণত বুঝতে পারতেন না যে, ভিতরে কেউ আছে কি নেই!
ইতিমধ্যে কাফেলা যাত্রা শুরু করে এবং লোকেরা তাঁর হাওদা উঠিয়ে নিয়ে যায়। দায়িত্বশীল ব্যক্তি ভেবেছিলেন যে, তিনি হাওদার মধ্যেই আছেন। তিনি ছিলেন হালকা-পাতলা গড়নের। ফলে ঐ ব্যক্তির মনে কোনরূপ সন্দেহের উদ্রেক হয়নি যে, তিনি হাওদার মধ্যে নেই। হযরত আয়েশা (রা.) দ্রুত নিজের বিশ্রামস্থলে ফিরে এসে দেখেন যে, সব ফাঁকা। ‘সেখানে নেই কোন আহবানকারী, নেই কোন জবাবদাতা’(مَا فِيهِ مِنْ دَاعٍ وَلاَ مُجِيبٍ)। তখন তিনি নিজের স্থানে চাদর মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়লেন এই ভেবে যে, নিশ্চয়ই তাঁর খোঁজে এখুনি লোকেরা এসে যাবে।
এক সাহাবি আয়েশা (রা.) কে নিয়ে আসে
ছাফওয়ান বিন মু‘আত্ত্বাল(صَفْوَانُ بنُ الْمُعَطَّلِ السُّلَمِيُّ) যিনি কোন কাজে পিছনে পড়েছিলেন, তিনি ত্রস্তপদে যেতে গিয়ে হঠাৎ মা আয়েশার প্রতি নযর পড়ায় জোরে ‘ইন্না লিল্লাহ’ পাঠ করেন ও নিজের উটটি এনে তাঁর পাশে বসিয়ে দেন। আয়েশা (রা.) তার শব্দে সজাগ হন ও কোন কথা না বলে উটের পিঠে হাওদায় গিয়ে বসেন। অতঃপর ছাফওয়ান উটের লাগাম ধরে দ্রুত হাঁটতে থাকেন কাফেলা ধরার জন্য। পর্দার হুকুম নাযিলের আগে তিনি আয়েশা (রা.)কে দেখেছিলেন বলেই তাঁকে সহজে চিনতে পেরেছিলেন। দুজনের মধ্যে কোনো কথাই হয়নি। তিনি বলেন, অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সেনাদল যেখানে বিশ্রাম করছিল, পথপ্রদর্শক ব্যক্তি আমাকে নিয়ে সেখানে তাদের মধ্যে উপস্থিত হল। (ইবনু হিশাম ২/২৯৮; সনদ ছহীহ; সহিহ বুখারি, হাদিস : ৪১৪১, ৪৭৫০ ইফকের কাহিনী অনুচ্ছেদ’ (باب حَدِيثُ الْإِفْكِ) সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২৭৭০)
অন্য বর্ণনায় এসেছে, অন্য একটি সফর থেকে ফেরার পথে মদীনার নিকটবর্তী ‘বায়দা’ (الْبَيْداء) নামক বিশ্রামস্থলে পৌঁছলে আয়েশা (রা.)-এর গলার হার ছিঁড়ে পড়ে যায়। ফলে তা খুঁজতে কাফেলা দেরী হওয়ায় ফজরের ছালাতের ওয়াক্ত হয়ে যায়। কিন্তু সেখানে পানি না থাকায় তায়াম্মুমের আয়াত নাযিল হয় (মায়েদাহ ৬)। ইতিমধ্যে উটের পেটের নীচ থেকে হার খুঁজে পাওয়া যায়। এ ঘটনায় উসায়েদ বিন হুযায়ের (রা.) হযরত আবুবকর (রা.)-কে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন,مَا هِىَ بِأَوَّلِ بَرَكَتِكُمْ يَا آلَ أَبِى بَكْرٍ ‘হে আবুবকর-পরিবার! এটি উম্মতের জন্য আপনাদের প্রথম অবদান নয়।’(সহিহ বুখারি, ফাতহুল বারী হা/৩৩৪ ‘তায়াম্মুম’ অধ্যায়-৭, হা/৪৬০৭ ‘তাফসীর’ অধ্যায়-৬৫, অনুচ্ছেদ-৩; মুসলিম হা/৮৪২ ‘তায়াম্মুম’ অনুচ্ছেদ-২৮।)
আরও পড়ুন : বিয়েতে পাত্রীরও রয়েছে পছন্দের অধিকার
মুনাফিকদের ষড়যন্ত্র
সৎ ও সরল প্রকৃতির লোকেরা বিষয়টিকে সহজভাবে গ্রহণ করলেন। কিন্তু বাঁকা অন্তরের লোকেরা এবং বিশেষ করে মুনাফিক নেতা আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই এটাকে কুৎসা রটনার একটি মোক্ষম হাতিয়ার হিসাবে গ্রহণ করল। মদীনায় ফিরে এসে তারা এই সামান্য ঘটনাকে নানা রঙ চড়িয়ে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে জোটবদ্ধভাবে প্রচার করতে লাগল। তাতে হুজুগে লোকেরা তাদের ধোঁকার জালে আবদ্ধ হল।
সাহাবিদের সাথে নবীজির পরামর্শ
এই অপবাদ ও অপপ্রচারের জবাব ওহির মাধ্যমে পাবার আশায় আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পূর্ণ চুপ রইলেন। কিন্তু দীর্ঘ দিন অপেক্ষার পরেও এবিষয়ে কোনরূপ ওহি নাজিল না হওয়ায় তিনি একদিন কয়েকজন সাহাবিকে ডেকে পরামর্শ চাইলেন। তাতে হযরত আলী (রা.) ইশারা-ইঙ্গিতে তাঁকে পরামর্শ দিলেন আয়েশাকে তালাক দেবার জন্য। অপরপক্ষে উসামা ও অন্যান্যগণ তাঁকে রাখার এবং শত্রুদের কথায় কর্ণপাত না করার পরামর্শ দেন। এরপর তিনি আব্দুল্লাহ ইবনে উবাইয়ের অব্যাহত কুৎসা রটনার মনোকষ্ট হতে রেহাই পাবার জন্য একদিন মিম্বরে দাঁড়িয়ে সকলের সহযোগিতা কামনা করলেন। তখন আউস গোত্রের পক্ষে উসায়েদ বিন হুযায়ের (রা.) তাকে হত্যা করার অভিমত ব্যক্ত করেন। একথা শুনে খাযরাজ নেতা সাদ বিন ওবাদাহর মধ্যে গোত্রীয় উত্তেজনা জেগে ওঠে এবং তিনি এ প্রস্তাবের প্রতিবাদ করেন। কেননা আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই ছিল খাযরাজ গোত্রের লোক। এর ফলে মসজিদে উপস্থিত উভয় গোত্রের লোকদের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় শুরু হয়ে যায়। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে থামিয়ে দেন।
আয়েশা (রা.) অসুস্থ হয়ে পড়েন
এদিকে যুদ্ধ থেকে ফিরে আসার পর আয়েশা (রা.) অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং মাসব্যাপী একটানা পীড়িত থাকেন। বাইরের এতসব অপবাদ ও কুৎসা রটনা সম্পর্কে তিনি কিছুই জানতে পারেননি। তবে অসুস্থ অবস্থায় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছ থেকে যে আদর-যত্ন ও সেবা-শুশ্রূষা পাওয়ার কথা ছিল, তা না পেয়ে তিনি মনে মনে কিছুটা অশান্তি বোধ করতে থাকেন।
আয়েশা (রা.) ঘটনা সম্পর্কে অবগত হয়ে বাবার বাড়ি চলে আসেন
দীর্ঘ রোগভোগের পর কিছুটা সুস্থতা লাভ করে হাজত সারার উদ্দেশ্যে একরাতে তিনি পিতা আবু বকরের খালা উম্মে মিসতাহর সাথে বাইরে গমন করেন। এ সময় উম্মে মিসতাহ নিজের চাদরে পা জড়িয়ে পড়ে যান এবং নিজের ছেলেকে বদ দোয়ো করেন। আয়েশা (রা.) এটাকে অপছন্দ করলে উম্মে মিসতাহ তাকে সব খবর বলে দেন (কেননা তার ছেলে মিসতাহ উক্ত কুৎসা রটনায় অগ্রণী ভূমিকায় ছিল)। আয়েশা (রা.) ফিরে এসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকটে পিতৃগৃহে যাবার অনুমতি চাইলেন। অতঃপর অনুমতি পেয়ে তিনি পিতৃগৃহে চলে যান।
আয়েশা (রা.)-এর কাছে রাসুল (সা.)-এর আহবান
সেখানে সব কথা জানতে পেরে তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। দুই রাত ও একদিন নির্ঘুম কাটান ও অবিরতধারে কাঁদতে থাকেন। এমতাবস্থায় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কাছে এসে তাশাহহুদ পাঠের পর বললেন, ‘হে আয়েশা! তোমার সম্পর্কে কিছু বাজে কথা আমার কানে এসেছে। যদি তুমি নির্দোষ হও, তবে সত্বর আল্লাহ তোমাকে দোষমুক্ত করবেন। আর যদি তুমি কোনো পাপকর্মে জড়িয়ে থাক, তাহলে আল্লাহর নিকটে ক্ষমা প্রার্থনা করো ও তওবা করো। কেননা বান্দা যখন দোষ স্বীকার করে ও আল্লাহর নিকটে তওবা করে, তখন আল্লাহ তার তওবা কবুল করে থাকেন।’
আয়েশা (রা.)-এর উত্তর
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ বক্তব্য শুনে আয়েশার অশ্রু শুকিয়ে গেল। তিনি তার পিতা-মাতাকে এর জবাব দিতে বললেন। কিন্তু তাঁরা এর জবাব খুঁজে পেলেন না। তখন আয়েশা (রা.) বললেন, আল্লাহর কসম! যে কথা আপনারা শুনেছেন ও যা আপনাদের অন্তরকে প্রভাবিত করেছে এবং যাকে আপনারা সত্য বলে মেনে নিয়েছেন- এক্ষণে ‘আমি যদি বলি যে, আমি নির্দোষ এবং আল্লাহ জানেন যে, আমি নির্দোষ’- তবুও আপনারা আমাকে বিশ্বাস করবেন না। পক্ষান্তরে আমি যদি বিষয়টি স্বীকার করে নিই, অথচ আল্লাহ জানেন যে, আমি এ ব্যাপারে নির্দোষ- তাহলে আপনারা সেটাকে বিশ্বাস করে নিবেন। এমতাবস্থায় আমার ও আপনার মধ্যে ঐ উদাহরণটাই প্রযোজ্য হবে যা হযরত ইউসুফের পিতা (হযরত ইয়াকূব) বলেছিলেন,فَصَبْرٌ جَمِيْلٌ وَاللهُ الْمُسْتَعَانُ عَلَى مَا تَصِفُوْنَ ‘অতএব ধৈর্য ধারণ করাই উত্তম এবং আল্লাহর নিকটেই সাহায্য কাম্য, যেসব বিষয়ে তোমরা বলছ’ (ইউসুফ ১২/১৮)।
আয়েশা (রা.)-এর পবিত্রতায় ওহি নাজিল হয়
একথাগুলো বলেই আয়েশা (রা.) অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে শুয়ে পড়লেন। তিনি বলেন, আমি ভাবছিলাম যে, আল্লাহ তাঁর রাসূলকে এ বিষয়ে স্বপ্ন দেখাবেন। ‘আমি কখনোই ভাবিনি যে,وَاللهِ مَا كُنْتُ أَظُنُّ أَنَّ اللهَ مُنْزِلٌ فِى شَأْنِى وَحْيًا يُتْلَى ‘আমার নির্দোষিতার ব্যাপারে আল্লাহ এমন অহী নাযিল করবেন, যা তেলাওয়াত করা হবে’। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বা ঘরের কেউ বের হননি, এরি মধ্যে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপরে অহী নাযিল শুরু হয়ে গেল।
ওহি অবতরণ শেষ হলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসিমুখে আয়েশাকে উদ্দেশ্য করে বললেন,أَبْشِرِىْ يَا عَائِشَةُ! أَمَّا اللهُ فَقَدْ بَرَّأَكِ ‘সুসংবাদ গ্রহণ কর হে আয়েশা! আল্লাহ তোমাকে অপবাদ মুক্ত করেছেন’। এতে খুশী হয়ে তার মা তাকে বললেন, আয়েশা ওঠো, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে যাও। কিন্তু আয়েশা (রা.) অভিমান ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলে উঠলেন,هُوَ الَّذِى أَنْزَلَ بَرَاءَتِى وَاللهِ، لاَ أَقُومُ إِلَيْهِ، وَلاَ أَحْمَدُ إِلاَّ اللهَ ‘না আমি তাঁর কাছে যাব না এবং আমি কারো প্রশংসা করব না আল্লাহ ব্যতীত। যিনি আমার নির্দোষিতার ব্যাপারে আয়াত নাযিল করেছেন’। এটা ছিল নিঃসন্দেহে তাঁর সতীত্বের তেজ এবং তার প্রতি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রগাঢ় ভালোবাসার উপরে গভীর আস্থার বহিঃপ্রকাশ। উল্লেখ্য যে, এই সময় সূরা নূরের ১১ হতে ২০ পর্যন্ত ১০টি আয়াত নাযিল হয়।
অপবাদদানকারীর শাস্তি কার্যকর
এরপর মিথ্যা অপবাদের দায়ে মিসত্বাহ বিন উছাছাহ(مِسْطَحُ بنُ أُثَاثَة) কবি হাসসান বিন ছাবেত ও হামনা বিনতে জাহশের উপরে ৮০টি করে দোররা মারার শাস্তি কার্যকর করা হয়। কেননা ইসলামী শরী‘আতের বিধান অনুযায়ী কেউ যদি কাউকে ব্যভিচারের মিথ্যা অপবাদ দেয়, অতঃপর তা প্রমাণে ব্যর্থ হয়, তাহলে শাস্তি স্বরূপ তাকে আশি দোররা বা বেত্রাঘাতের শাস্তি প্রদান করা হয় (নূর ২৪/৪)।[9] কিন্তু অজ্ঞাত কারণে ইফকের ঘটনার মূল নায়ক(رَأْسُ أَهْلِ الْإِفْكِ) মুনাফিক নেতা আব্দুল্লাহ ইবনে উবাইকে দন্ড হতে মুক্ত রাখা হয়। ইবনুল ক্বাইয়িম বলেন, এর কারণ এটা হতে পারে যে, আল্লাহ তাকে পরকালে কঠিন শাস্তি দানের ঘোষণা আগেই দিয়েছিলেন (মুনাফিকূন ৬৩/৫-৬)। অতএব এখন শাস্তি দিলে পরকালের শাস্তি হালকা হয়ে যেতে পারে। অথবা অন্য কোন বিবেচনায় তাকে শাস্তি প্রদান করা হয়নি। যেমন ইতিপূর্বে হত্যাযোগ্য অপরাধ করা সত্ত্বেও অনেকবার তাকে হত্যা করা হয়নি।’ (যাদুল মা‘আদ ৩/২৩৫-৩৬)। তাছাড়া মুনাফিকরা কখনো তাদের অপরাধ স্বীকার করে না। অতঃপর অন্য যাদের শাস্তি দেওয়া হয়, সেটা ছিল তাদের পাপের প্রায়শ্চিত্ত স্বরূপ। এর ফলে এবং তাদের তওবার কারণে তারা পরকালের শাস্তি হতে আল্লাহর রহমতে বেঁচে যাবেন ইনশাআল্লাহ। (বুখারী হা/৭২১৩; মুসলিম হা/১৭০৯; মিশকাত হা/১৮)
ইফকের ঘটনায় কুরআন নাযিলের ফলে সমাজে শান্তির সুবাতাস বইতে শুরু হয়। সর্বত্র হযরত আয়েশা (রা.)-এর পবিত্রতা ঘোষিত হতে থাকে। অন্যদিকে আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই সর্বত্র অপমানিত ও লাঞ্ছিত হতে থাকে। কোন জায়গায় সে কথা বলতে গেলেই লোকেরা ধরে জোর করে তাকে বসিয়ে দিত। (আর-রাহীক্ব ৩৩৩)
মুনাফিকরা বুঝেছিল যে, মুসলমানদের বিজয়ের মূল উৎস ছিল তাদের দৃঢ় ঈমান ও পাহাড়সম চারিত্রিক শক্তি। প্রতিটি খাঁটি মুসলিম ছিলেন আল্লাহর দাসত্বে ও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি আনুগত্যে নিবেদিতপ্রাণ। তাই সংখ্যায় অল্প হওয়া সত্ত্বেও শত চক্রান্ত, ষড়যন্ত্র ও যুদ্ধসম্ভার দিয়েও তাদেরকে টলানো বা পরাজিত করা যায়নি। সেকারণ তারা নেতৃত্বের মূল কেন্দ্র রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর পরিবারের চরিত্র হননের মত নোংরা কাজের দিকে মনোনিবেশ করে। কিন্তু আল্লাহর মেহেরবানীতে সেখানেও তারা চূড়ান্তভাবে ব্যর্থ ও পর্যুদস্ত হল। অথচ ঐসব মুনাফিকদের পুচ্ছধারী বর্তমান যুগের মুসলিম নামধারী বহু কবি-সাহিত্যিক ও দার্শনিক ঐসব বাজে কথার ভিত্তিতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর পরিবারের কুৎসা রটনা করে চলেছেন। সেই সাথে ইসলামের শত্রুতায় তারা অমুসলিমদের চাইতে এগিয়ে রয়েছেন।
বাংলাবার্তা/জেডএইচ