
সংগৃহীত
জাকাতের শাব্দিক অর্থ হলো- পবিত্রতা, প্রবৃদ্ধি, বিকাশ ও উন্নতি। যেহেতু জাকাত মানুষকে কৃপণতা, গুনাহ ও আজাব হতে পবিত্র ও মুক্ত করে এবং সার্বিক পবিত্রতা, সম্পদের উন্নতি এবং অন্তরের স্বচ্ছতা ও পবিত্রতার কারণ হয়, তাই এই হুকুমটির নামকরণ করা হয়েছে ‘জাকাত’।
কার উপর জাকাত দেওয়া ফরজ?
স্বাধীন, প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থ ও বুদ্ধিসম্পন্ন মুসলিম নর-নারী যার কাছে ঋণ, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ও প্রয়োজনীয় খাদ্য-বস্ত্রের অতিরিক্ত সোনা, রুপা, নগদ টাকা, প্রাইজবন্ড, সঞ্চয়পত্র, ডিপিএস, শেয়ার ও ব্যবসায়িক সম্পত্তির কোনো একটি বা সবকটি রয়েছে, যার সমষ্টির মূল্য উল্লিখিত নেসাব পরিমাণ হয়, তিনিই সম্পদশালী। এ পরিমাণ সম্পদ এক বছর স্থায়ী হলে বা বছরের শুরু ও শেষে থাকলে বছর শেষে জাকাত দিতে হবে।
মালে নামি অর্থাৎ বর্ধনশীল সম্পদের জাকাত দিতে হয়, যদি নেসাব পরিমাণ হয়।
ইসলামী শরিয়া মোতাবেক বর্ধনশীল সম্পদ হচ্ছে-
১. স্বর্ণ ও রুপা
২. নগদ অর্থ
৩.ব্যবসায়ী পণ্য
৪. গবাদি পশু
১. স্বর্ণের নেসাব ২০ মিসকাল অর্থাৎ সাড়ে ৭ তোলা (৪৭৮.৮৭ গ্রাম) ও রুপার নেসাব ২শত দিরহাম অর্থাৎ সাড়ে ৫২ তোলা(৬২১.৩৫ গ্রাম)।
২. নগদ অর্থের নেসাব: সাড়ে ৫২ তোলার সমমূল্য।
৩. ব্যবসায়িক পণ্যের নেসাব: সাড়ে৫২ তোলার সমমূল্য।
৪. গবাদিপশুর নেসাব: শর্তগুলো বাংলাদেশে পাওয়া যায় না।
কেউ যদি নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হন। এবং সেই মাল এক বছর হাতে থাকে ও ঋনমুক্ত থাকে, তাহলে চল্লিশ ভাগের এক ভাগ অর্থাৎ আড়াই পার্সেন্ট জাকাত দিতে হবে।
উল্লেখ্য, জমি, ঘর, বাড়ি, গাড়ি ও ফ্ল্যাট এগুলোতে জাকাত আসেনা। যদি এগুলো ব্যবসার জন্য হয়, তাহলে জাকাত আসবে।
কোন কোন সম্পদে জাকাত দেওয়া ফরজ?
ক. স্বর্ণ-রূপার জাকাত :
১. যদি কারো কাছে শুধু স্বর্ণ সাড়ে সাত তোলা বা তার বেশি পরিমাণ থাকে, তাহলে বছরান্তে সম্পূর্ণ স্বর্ণের ৪০ ভাগের ১ ভাগ বা তার মূল্য (শতকরা আড়াই টাকা হারে) জাকাত আদায় করবে।
২. যদি কারো কাছে শুধু রূপা সাড়ে বায়ান্ন তোলা বা তার বেশি পরিমাণে থাকে, তাহলে বৎসরান্তে সম্পূর্ণ রূপার ৪০ ভাগের ১ ভাগ বা তার মূল্য (শতকরা আড়াই টাকা হারে) জাকাত আদায় করবে।
উল্লেখ্য যে, স্বর্ণ ও রূপা চাই ব্যবহারের জন্য কারো কাছে থাকুক বা ধন-দৌলত সংরক্ষণ স্বরূপ ব্যবসায়ের নিয়তে থাকুক। অথবা কাউকে হাদিয়া-উপঢৌকন হিসাবে দেওয়ার জন্য গহনা-অলংকারের রূপে বিদ্যমান থাকুক বা মুদ্রার আকারে বিদ্যমান থাকুক। সর্বাবস্থায় এগুলো পূর্বোক্ত নেসাব পরিমাণ হলে এগুলোর উপর জাকাত ফরজ।
যদি কেউ সম্পদের জাকাত নগদ টাকা দ্বারা আদায় করতে চায়, তাহলে সমুদয় সম্পদের মূল্যের হিসাব করে শতকরা আড়াই টাকা করে জাকাত দিতে হবে। যদি তা নেসাব পরিমাণ হয়।
৩. যদি স্বর্ণ ও রূপা থাকে এবং এগুলোর মধ্যে থেকে একটাও নেসাব পরিমাণ হয়ে যায় তাহলে উভয়টার সমষ্টিগত মূল্যের ৪০ ভাগের ১ ভাগ জাকাত দিতে হবে।
৪. স্বর্ণ-রৌপ্যের নিসাব পরিমাণ যার মালিকানায় থাকবে সে ছাহেবে নেসাব বলে গণ্য হবে। তার উপর জাকাত ফরজ হবে।
৫. যে সব স্বর্ণ-রৌপ্যের অলংকার স্ত্রীর মালিকানায় দিয়ে দেওয়া হয় সে অলংকারগুলো স্বর্ণ-রৌপ্যের নেসাব পরিমাণ হলে স্ত্রীর উপর এগুলোর জাকাত আদায় করা জরুরি। স্বামীর উপর স্ত্রীর জাকাত দেওয়া আবশ্যক নয়। তবে স্ত্রীর আবেদনের কারণে স্বামী স্বেচ্ছায়-স্বাগ্রহে স্ত্রীর পক্ষ থেকে জাকাত আদায় করলে স্ত্রীর জাকাত আদায় হয়ে যাবে।
আর যে সব অলংকার স্ত্রীকে ব্যবহার করতে দেওয়া হয়; কিন্তু মালিক থাকে স্বামী, সেগুলোর জাকাত স্ত্রীর উপর ফরজ হবে না বরং স্বামীর উপর ফরজ হবে। আর যে অলংকার স্ত্রীকে শুধু ব্যবহার করতে দেওয়া হয় বটে, কিন্তু সেগুলোর মালিকানা স্বামীর নাকি স্ত্রীর তা অস্পষ্ট থাকে, তাহলে এসব অলংকারের মালিকানা স্পষ্ট করে নেওয়া উচিত। সুতরাং এগুলোর মধ্যে যার মালিকানা থাকবে, তার উপর এগুলোর জাকাত দেওয়া ফরজ।
৬। একান্নভূক্ত বাড়িতে একাধিক ভাইদের স্ত্রীরা থাকে এবং সে স্ত্রীদের স্বর্ণ-রৌপ্যের নেসাব পরিমাণ অলংকারাদিও থাকে, এমতাবস্থায় যে সব স্ত্রীদের মালিকানায় স্বর্ণ-রৌপ্যের নেসাব পরিমাণ অলংকার থাকবে তাদের উপর জাকাত দেওয়া ফরজ। এসব ভাইয়েরা সকল স্ত্রীর সন্তুষ্টি ছাড়া তাদের সম্মিলিত মাল থেকে জাকাত দিলে তাদের স্বামীর পক্ষ থেকে তা আদায় হবে না; বরং প্রত্যেকে তাদের স্ত্রীর পক্ষ থেকে নিজস্ব মাল থেকে জাকাত দিতে পারবে। তবে সকল স্ত্রীর সন্তুষ্টি সাপেক্ষে ভাইয়েরা তাদের সম্মিলিত মাল থেকে জাকাত দিতে পারবে।
খ. নগদ টাকা-পয়সার জাকাত
১. স্বর্ণ ও রূপার যে হুকুম, নগদ টাকা-পয়সারও একই হুকুম। সুতরাং যদি কারো কাছে প্রয়োজনের অতিরিক্ত নেসাব পরিমাণ (অর্থাৎ, সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার মূল্যের সম পরিমাণ) নগদ টাকা-পয়সা থাকে, তাহলে বৎসরান্তে তার উপর জাকাত ফরজ হবে।
এ ক্ষেত্রে নগদ টাকা-পয়সা জাকাতের নেসাব পরিমাণ কীভাবে হলো, তা নির্ণয়ের জন্য সাড়ে বায়ান্ন তোলা রৌপ্যকে মাপকাঠি বানানো হবে। কারণ, নেসাবের ন্যূনতম পরিমাণ; যাতে গরীব-মিসকীনের ফায়দা নিহিত রয়েছে এবং সম্পদশালী ব্যক্তির মাঝে ধনাঢ্যতা আসে, সে পরিমাণ হলোদুইশত দিরহাম অর্থাৎ, সাড়ে বায়ান্ন তোলা রৌপ্য। সুতরাং জাকাতের নেসাবের ন্যূনতম পরিমাণকে জাকাত ফরজ হওয়ার মাপকাঠি বানাতে হবে।
২. এমনিভাবে সঞ্চয়ের উদ্দেশ্যে লটারির টিকেট বা এ ধরনের কোনো সার্টিফিকেট খরিদ করে রাখলে বৎসরান্তে তার উপর জাকাত ফরজ হবে। বিক্রয় দরের হিসাবে জাকাত দিতে হবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ