
ফাইল ছবি
মাসব্যাপী সিয়াম সাধনার মাধ্যমে আল্লাহর প্রিয় হওয়ার সুবর্ণ সুযোগ নিয়ে আসে রমজান। এ মাসে রোজা পালনের মধ্য দিয়ে মুমিন হৃদয়ে মহান আল্লাহর প্রতি যেমন অসামান্য ভালোবাসা সৃষ্টি হয়, তেমনি আল্লাহতায়ালাও মুমিনদের ভালোবাসেন এবং তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে নানা পুরস্কারে ভূষিত করেন।
আল্লাহর ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে তার প্রিয় বান্দা হওয়ার পদ্ধতি পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে এভাবে-‘যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাস, তবে আমার নবি (সা.)-এর অনুসরণ করো; তাহলে আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের পাপগুলো মার্জনা করবেন।’ (আলে ইমরান : ৩১)। যারা আল্লাহর হুকুম ও নবিয়ে কারিম (সা.)-এর সুন্নত অনুযায়ী জীবন পরিচালনায় অভ্যস্ত হতে পারেন তারাই হন খোদার মাহবুব বান্দা। পবিত্র কুরআনে যাদের ‘দয়াময়ের প্রকৃত বান্দা’ নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাঁর প্রিয় বান্দাদের পরিচয় উল্লেখ করে বলেন, ‘দয়াময় আল্লাহর প্রকৃত বান্দা তারাই যারা পৃথিবীতে নম্রভাবে চলাফেরা করে এবং তাদের যখন অজ্ঞ লোকে মূর্খতাসুলভ সম্বোধন করে তখনো তারা সালাম ও শান্তির বাণী বলে। তারা রাত্রি যাপন করে তাদের প্রতিপালকের উদ্দেশে সেজদায় অবনত হয়ে ও দাঁড়িয়ে ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে এবং তারা বলে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক!
আমাদের থেকে জাহান্নামের শাস্তি বিদূরিত করুন; উহার শাস্তি তো নিশ্চিত বিনাশ! নিশ্চয়ই তা অস্থায়ী ও স্থায়ী আবাস হিসাবে নিকৃষ্ট!’ আর যখন তারা ব্যয় করে তখন অপচয় করে না এবং কার্পণ্যও করে না; বরং তারা মধ্যপন্থায় থাকে। তারা আল্লাহর সঙ্গে অন্য কোনো ইলাহ বা মাবুদকে ডাকে না। আল্লাহ যার হত্যা নিষেধ করেছেন যথার্থ কারণ ছাড়া তাকে হত্যা করে না এবং ব্যভিচার করে না। যারা এসব করে তারা শাস্তি ভোগ করবে, কিয়ামতের দিন তাদের শাস্তি দ্বিগুণ করা হবে এবং সেখানে তারা হীনাবস্থায় স্থিত হবে। তবে তারা নয়, যারা তওবা করে ইমান আনে ও সৎকর্ম করে। আল্লাহ এদের পাপ-পুণ্যের দ্বারা পরিবর্তন করে দেবেন; আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
যারা তওবা করে ও সৎকর্ম করে, তারা সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর অভিমুখী হয়। আর যারা মিথ্যা সাক্ষ্য দেয় না এবং অসার ক্রিয়াকলাপের সম্মুখীন হলে স্বীয় মর্যাদার সহিত তা উপেক্ষা করে চলে। আর যারা তাদের প্রতিপালকের নিদর্শন স্মরণ করিয়ে দিলে তার প্রতি অন্ধ ও বধিরের মতো আচরণ করে না এবং যারা প্রার্থনা করে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের জন্য এমন স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততি দান করুন যারা আমাদের জন্য নয়ন প্রীতিকর হবে এবং আমাদের মুত্তাকিদের ইমাম বানিয়ে দিন।’
এদের প্রতিদান হিসাবে দেওয়া হবে জান্নাতের সুউচ্চ স্থান, যেহেতু তারা ছিল ধৈর্যশীল। তাদের সেখানে অভ্যর্থনা জানানো হবে অভিবাদন ও সালাম সম্ভাষণসহকারে; সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে। আশ্রয়স্থল ও আবাসন হিসাবে তা কতই উৎকৃষ্ট!’ (সুরা ফুরকান, আয়াত : ৬৩-৭৬)।
ওই আয়াতে আল্লাহর প্রিয় বান্দা হওয়ার জন্য সর্বমোট ১১টি গুণাবলি বর্ণনা করা হয়েছ-১. বিনয় ২. ধৈর্য্য ও সহনশীলতা ৩. তাহাজ্জুদ আদায় ৪. জাহান্নামের ভয় ও তা থেকে বাঁচার জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা ৫. অপব্যয় ও কৃপণতা না করা ৬. শিরকমুক্ত থাকা ৭. যেনা ব্যভিচার ও হত্যার সঙ্গে জড়িত না হওয়া ৮. তাওবা করা ৯. মিথ্যা থেকে বেঁচে থাকা ও অর্থহীন কাজকে এড়িয়ে চলা, ১০. কুরআনের আয়াত অনুধাবন করা ও তা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা। ১১. স্ত্রী ও সন্তান যেন আল্লাহর অনুগত হয়-এজন্য তার কাছে প্রার্থনা করা।
বিশেষজ্ঞ আলেমরা বলেন, ওপরের ১১টি গুণ রমজানের মাসব্যাপী কর্মশালার সংক্ষিপ্ত সিলেবাস। এ মাস যেহেতু শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মাস, তাই পবিত্র এ মাসে প্রত্যেক রোজাদারকে বর্ণিত গুণাবলির আলোকে আত্মগঠন, আত্মশুদ্ধি ও আত্ম-উন্নয়নের জন্য আপ্রাণ প্রচেষ্টা করা উচিত। আল্লাহতায়ালা আমাদের তাওফিক দান করুন। আমিন!!
বাংলাবার্তা/এমএইচ