
ফাইল ছবি
আজ পবিত্র লাইলাতুল কদর বা শবেকদর। এটি এমন এক রাত, যা হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ। এ রাতেই মহান আল্লাহ মানবজাতির পথনির্দেশক গ্রন্থ, পবিত্র কুরআন অবতীর্ণ করেন। এ রাতের ফজিলত ও মাহাত্ম্য বর্ণনা করতে গিয়ে মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে ‘কদর’ নামে একটি বিশেষ সূরা নাজিল করেছেন।
লাইলাতুল কদর এমন এক রাত, যেখানে ইবাদত করলে হাজার মাসের চেয়েও বেশি সওয়াব লাভ করা যায়। এই রাত সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন, “আমি একে (কুরআনকে) নাজিল করেছি লাইলাতুল কদরে। লাইলাতুল কদর সম্পর্কে আপনি কী জানেন? লাইলাতুল কদর হলো এক হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। এতে প্রত্যেক কাজের জন্য ফেরেশতারা ও রুহ অবতীর্ণ হয় তাদের পালনকর্তার নির্দেশক্রমে। এটি নিরাপত্তা, যা ফজরের উদয় পর্যন্ত অব্যাহত থাকে।” (সূরা আল কদর: ১-৫)
লাইলাতুল কদরের রাত রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের বার্তা নিয়ে আসে। এই রাতে ইবাদত করলে পূর্ববর্তী সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। হাদিসে এসেছে, “যে ব্যক্তি লাইলাতুল কদরে ঈমান ও সওয়াবের নিয়তে ইবাদত করবে, তার পূর্ববর্তী সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।” (বুখারি, মুসলিম)
এই রাতে ফেরেশতারা বিশেষভাবে দুনিয়ায় নেমে আসেন এবং আল্লাহর রহমতের বার্তা নিয়ে আসেন। এ রাতের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো, এই রাতে কদরের আমল করলে তা সত্তর গুণ বেশি সওয়াব লাভের কারণ হয়।
নবীজি (সা.) বলেছেন, “তোমরা রমজানের শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলোতে লাইলাতুল কদর তালাশ করো।” (বুখারি, মুসলিম)
এই রাতে বেশি বেশি ইবাদত-বন্দেগি করা উচিত। কিছু গুরুত্বপূর্ণ আমল হলো:
নফল নামাজ: তাহাজ্জুদ, সালাতুত তাসবিহসহ যত বেশি সম্ভব নফল নামাজ আদায় করা।
কুরআন তেলাওয়াত: পবিত্র কুরআন পাঠ ও অর্থ অনুধাবনের চেষ্টা করা।
দোয়া ও ইস্তিগফার: মহান আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করা এবং কদরের বিশেষ দোয়া পড়া:
“আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউউন তুহিব্বুল আফওয়া ফা’ফু আন্নি” (হে আল্লাহ! তুমি ক্ষমাশীল, তুমি ক্ষমা করতে ভালোবাসো, আমাকে ক্ষমা করো)।_ (তিরমিজি)
দরুদ পাঠ: নবীজি (সা.)-এর প্রতি দরুদ পাঠ করা।
সাদকাহ (দান): দান-সদকা করা, বিশেষ করে দরিদ্র ও অভাবী মানুষের পাশে দাঁড়ানো।
এ রাতে ফেরেশতারা আল্লাহর আদেশ নিয়ে পৃথিবীতে আসেন এবং বান্দাদের জন্য রহমতের দুয়ার খুলে দেওয়া হয়। তাই আমাদের উচিত, এ রাতকে যথাযথভাবে মূল্যায়ন করা এবং ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের চেষ্টা করা।
লাইলাতুল কদর মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে উম্মতে মুহাম্মদির জন্য এক বিশেষ নেয়ামত। এ রাতের যথাযথ কদর ও মর্যাদা রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব। যারা এই রাতকে ইবাদতে কাটাবে, তারা অনন্ত জীবনের জন্য অপার সওয়াব ও রহমত লাভ করবে। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে লাইলাতুল কদরের বরকত ও ক্ষমা অর্জনের তাওফিক দান করুন। আমিন।
বাংলাবার্তা/এমএইচ