
ছবি: সংগৃহীত
ইসলামের ইতিহাসে বায়তুল মুকাদ্দাস তথা আল-আকসা মসজিদের গুরুত্ব অবর্ণনীয়। এটি শুধু স্থাপত্য বা ধর্মীয় নিদর্শন নয়, বরং মুসলিম উম্মাহর হৃদয়ের স্পন্দন, ইতিহাস ও ঈমানের একটি জীবন্ত অধ্যায়। আল-কুদস বা জেরুজালেমে অবস্থিত এই মসজিদটি ছিল মুসলমানদের প্রথম কিবলা। হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর নবুয়তের শুরুর দিকে, প্রায় দশ বছর মুসলিমরা এই দিকেই মুখ করে সালাত আদায় করেছেন।
পবিত্র কুরআনের সূরা বনি ইসরাইলের প্রথম আয়াতে আল্লাহ তায়ালা উল্লেখ করেন, “পবিত্র ও মহান তিনি, যিনি তাঁর বান্দাহকে রাত্রে ভ্রমণ করিয়েছিলেন মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যন্ত, যার পরিবেশ আমি করেছিলাম বরকতময়...”। এই আয়াত ‘ইসরা’ বা মিরাজের রাতের ঐশী সফরের একটি জীবন্ত দলিল। ইসলামি মতে, এই মসজিদে নবীজি (সা.) সকল নবী-রসূলদের ইমাম হিসেবে সালাত আদায় করেন, যা আল-আকসার পবিত্রতাকে চূড়ান্ত মর্যাদায় উন্নীত করে।
আল-আকসা মসজিদ শুধু ধর্মীয় স্থান নয়, এটি একটি প্রতীক— মুসলিম ঐক্য, আত্মত্যাগ এবং ঐতিহাসিক শিকড়ের। মসজিদটির পবিত্রতা ও গুরুত্ব এতটাই বিশাল যে রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, “তিনটি মসজিদ ছাড়া অন্য কোথাও সফর করা উচিত নয়— মসজিদে হারাম, মসজিদে নববি এবং মসজিদে আকসা” (সহিহ মুসলিম ৮২৭)। এ হাদিস মুসলিমদের জন্য স্পষ্ট বার্তা দেয়— এই তিনটি স্থান ইসলামি দৃষ্টিতে অপরিসীম তাৎপর্যপূর্ণ।
আল-আকসায় নামাজ আদায়ের সাওয়াবও অন্য মসজিদগুলোর তুলনায় ব্যতিক্রম। হাদিসে এসেছে, সেখানে এক রাকাত নামাজের সাওয়াব ৫০০ রাকাত নামাজের সমান (মাজমাউয যাওয়াইদ ৪/১১)। শুধু তাই নয়, যারা সেখানে যেতে না পারেন, তাদেরকে তেল (বিশেষত জলপাই তেল) হাদিয়া দেওয়ার মাধ্যমে আল-আকসার আলো জ্বালিয়ে রাখার আহ্বান জানিয়েছেন রাসূলুল্লাহ (সা.)।
সুতরাং আল-আকসা একটি মসজিদ নয়, এটি একটি উম্মাহর সম্মান, আধ্যাত্মিক শিকড় এবং ঈমানের অংশ। এই মসজিদ ও ভূমিকে ঘিরে ইহুদি সম্প্রদায়ের আগ্রাসন ও ধ্বংসযজ্ঞ শুধু এক একটি রাজনৈতিক দখল নয়, বরং একটি ধর্ম ও জাতির অস্তিত্ব মুছে ফেলার চেষ্টার প্রতিফলন।
বাংলাবার্তা/এমএইচ