
ছবি: সংগৃহীত
নামাজের শারীরিক ও মানসিক গুরুত্ব বুঝে মুসলিম উম্মাহ সাধ্যমতো চেষ্টা করে নামাজকে সঠিকভাবে আদায় করতে। কিন্তু অনেক সময় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয় যখন নামাজি মুসল্লির সামনে দিয়ে অতিক্রম করতে হয়। ইসলামে নামাজির সামনে দিয়ে অতিক্রম করার বিষয়ে কিছু স্পষ্ট বিধি-নিষেধ রয়েছে, যা মুসলিমদের অনুসরণ করা উচিত। তাই, নামাজির সামনে দিয়ে অতিক্রম করার সময় কী কী বিধি অনুসরণ করতে হবে, সে বিষয়ে কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
১. নামাজির সামনে দিয়ে অতিক্রম করার দূরত্ব
ইসলামে নামাজের সময় সামনে দিয়ে অতিক্রম করার বিষয়ে স্পষ্টভাবে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। হাদিসে এসেছে যে, "নামাজির সামনে দিয়ে অতিক্রম করা এক ধরনের বড় গুনাহ হিসেবে বিবেচিত" (সহীহ মুসলিম)। তবে, যদি মসজিদটি অনেক বড় এবং প্রশস্ত হয়, এবং নামাজির সামনে সুতরা না থাকে, তখন কিছুটা দূরত্ব দিয়ে অতিক্রম করা সম্ভব হতে পারে। বিশেষভাবে, দুটি কাতারের সামনে দিয়ে অতিক্রম করা কিছু শর্তে অনুমোদিত হতে পারে, তবে এভাবে অতিক্রম করার ক্ষেত্রে কোনও বিশেষ প্রয়োজন না থাকলে তা পরিহার করাই উত্তম (আলমাবসূত, সারাখসী ১/১৯২; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/২৮৪)।
এক্ষেত্রে যে সমস্ত পরিস্থিতিতে এই ধরনের অতিক্রম সম্ভব হতে পারে, সেখানে নামাজির জন্য ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই, কিন্তু সাধারণভাবে তা পরিহার করা উচিত। বিশেষ প্রয়োজনে অতিক্রম করতে হলে তা সুতরা না থাকার অবস্থায় অনুমোদিত হতে পারে, তবে প্রয়োজন ছাড়া এই কাজ থেকে বিরত থাকা উচিত।
২. সুতরার ব্যবস্থা করে অতিক্রমের অনুমতি
নামাজির সামনে সুতরা (প্রতিবন্ধক বস্তু) রাখার মাধ্যমে অতিক্রম করার সুযোগ রয়েছে, যেহেতু এটি নামাজির সামনে দিয়ে অতিক্রমের বিষয়টিকে বৈধতা দেয়। সুতরা সাধারণত একটি কঠিন বস্তু হিসেবে ব্যবহৃত হয়, যেমন কাঠের একটি স্ট্যান্ড বা প্লাস্টিকের বিশেষ ধরনের স্ট্যান্ড, চেয়ার অথবা টুল। সুতরা ব্যবহার করলে নামাজির সামনে দিয়ে অতিক্রম করা জায়েজ হয়। হাদিসে এসেছে যে, "যে ব্যক্তি সুতরা ব্যবহার করে নামাজির সামনে দিয়ে অতিক্রম করে, তার জন্য তা গ্রহণযোগ্য" (সহীহ মুসলিম, হাদিস ৪৯৯; সুনানে আবু দাউদ, হাদিস ৬৮৬)।
তবে, সুতরা যে কোনো দীর্ঘ বস্তু হতে পারে, যেমন এক হাত বা তার চেয়ে বেশি দীর্ঘ বস্তু। এতে নামাজির সামনে বস্তুটি দাঁড়িয়ে থাকলে, অতিক্রম করা সহজ হবে এবং নামাজির অগ্রগতি বা প্রার্থনার ক্ষেত্রে কোনো ব্যাঘাত ঘটবে না।
৩. নামাজের মাঝপথে দাঁড়িয়ে থাকা মুসল্লির সরে যাওয়ার বিধি
কখনও কখনও এমন পরিস্থিতি আসে যখন একজন মুসল্লি নামাজ পড়ছেন এবং পেছনের কাতার থেকে একজন নতুন মুসল্লি তার নামাজ শেষ হওয়ার আগেই সরে যেতে চান। এই পরিস্থিতিতে, ইসলামে কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বিশেষভাবে, যদি একজন মুসল্লি নামাজ পড়ার মাঝপথে থাকেন, তবে সামনে থেকে সরে যাওয়ার জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. বর্ণনা করেছেন, "আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখেছি, তিনি নামাজ আদায় করছেন এবং আমি তার ও কিবলার মাঝে শুয়ে থাকতাম। কখনও কখনও আমার বের হওয়ার প্রয়োজন হত, কিন্তু আমি তার সামনে দিয়ে যেতে অপছন্দ করতাম। তাই আমি চুপচাপ সরে পড়তাম" (সহীহ বুখারী, হাদিস ৫১১)।
এ থেকে প্রমাণিত হয় যে, যখন নামাজির সামনে সরে যাওয়া প্রয়োজন, তখন তা করা জায়েজ। তবে, এটি নামাজি ব্যক্তির সম্মান ও তার প্রার্থনার প্রতি সতর্কতার সাথে করতে হবে। তাছাড়া, যদি অন্য মুসল্লিদের সামনে দিয়ে অতিক্রম করার আশঙ্কা থাকে, তবে নামাজির সামনে না সরে অপেক্ষা করাই উত্তম।
৪. অপেক্ষার গুরুত্ব
যতটা সম্ভব, নামাজির সামনে দিয়ে অতিক্রম না করার চেষ্টা করা উচিত। বিশেষত, যদি সামনে অতিক্রম করলে অন্য মুসল্লিদের নামাজের ক্ষতি হতে পারে, তাহলে এক্ষেত্রে সময়ের অপেক্ষা করাই উত্তম। ইসলামী শরীয়ত অনুসারে, নামাজের মধ্যে সরে যাওয়ার সুযোগ থাকবে, তবে তা কখনই অন্যদের নামাজের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে না।
ইসলামে সুতরা ব্যবহারের মাধ্যমে সামনে দিয়ে অতিক্রম করা হলেও তা কিছু শর্তে জায়েজ হয়, এবং সময়ের সুযোগে অন্যদের নামাজের ক্ষতি না করতে এগিয়ে আসা উচিত।
এই বিধি-নিষেধের মাধ্যমে মুসলিমরা নামাজের প্রভাবকে এবং একে অপরের সম্মান রক্ষা করার শিক্ষা পায়, যা ইসলামের শান্তিপূর্ণ ও সুস্থ সমাজ ব্যবস্থাকে প্রতিষ্ঠিত করে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ