ছবি: বাংলা বার্তা
ঢাকা: মেডিসিন প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান বায়োফার্মার আয়কর ফাঁকির নথি গায়েব হওয়ার অভিযোগ উঠেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক উপ-কর কমিশনার (বর্তমানে যুগ্ম কর কমিশনার) মো: মেসবাহ উদ্দিন খানের বিরুদ্ধে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে এই তথ্য নিশ্চিত হয়েছে বাংলাবার্তা।
এনবিআর সূত্রে জানা যায়, বায়োফার্মা কোম্পানির ২০১৬ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত আয়কর হিসেবে দাখিলকৃত বিবরণে গড়মিল ছিল। যেখানে দেখা যায়, বায়োফার্মা লিমিটেড তাদের ২০১৬-১৭ কর বর্ষে টানওভার দেখিয়েছে ৮৮ কোটি ৯৪ লাখ ৫২ হাজার ৯৬৯ টাকা। তবে আলফা রেটিং লিমিটেড রিপোর্ট অনুযায়ী এই করবর্ষে বায়োফার্মার টার্নওভার হয় ১৪২ কোটি ৯৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা। ২০১৭-১৮ করবর্ষে টার্নওভার দেখিয়েছে বায়োফার্মা ৯৩ কোটি ২৫ লাখ ৬২ হাজার ৯৩৮ টাকা। যেখানে আলফা রেটিং লিমিটেড রিপোর্ট অনুযায়ী ১৭-১৮ করবের্ষ তাদের টার্নওভার ১৬০ কোটি ৪২ লাখ ৮০ হাজার। অন্যদিকে বায়োফার্মা লিমিটেড ২০১৮-১৯ করবর্ষে তাদের বার্ষিক টার্নওভার দেখিয়েছে ৯৬ কোটি ৯১ লাখ ১৯ হাজার ৮১০ টাকা। যেখানে আলফা রেটিং লিমিটেড রিপোর্ট অনুযায়ীতাদের বার্ষিক টার্নওভার ৯৮ কোটি ৩ লাখ ১০ হাজার টাকা।
সবমিলে বায়োফার্মা লিমিটেড তাদের বার্ষিক টার্নওভার আয়করের তথ্য গোপন করে কর ফাঁকি দিয়েছে। আর এই কর ফাঁকি দেওয়ায় সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে বলে মনে করছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
এদিকে বায়োফার্মার আয়কর ফাঁকি দেওয়ায় গত বছরের ১৬ জুলাই তখনকার উপ কর কমিশনার মো: মেসবাহ উদ্দিন খানকে শোকজ করা হয়। একই সাথে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের একটি টিম অনুসন্ধান চলমান রাখে। এনবিআরের অনুসন্ধানে বায়োফার্মার আয়কর ফাঁকির বিষয়টি উঠে আসে।
এদিকে মেসবাহ উদ্দিনকে শোকজ করা নোটিশে বলা হয়, বায়োফার্মার আয়কর বিভাগের কাছে দাখিল করা টার্নওভার এবং অডিট করা প্রতিষ্ঠান আলফা রেটিং লিমিটেডের দাখিল করা প্রতিবেদনে টার্নওভার অনেক বেশি। একই সাথে তদন্তকালে আলফা রেটিং থেকে প্রাপ্ত তথ্যের সম্পর্ণ মিল রয়েছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪ এর ৯৩ ধারা মোতাবেক কার্যক্রম গ্রহণ করা প্রয়োজন ছিলো। উপ কর কমিশনার প্রাথমিক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে প্রথম পত্রটি জারি করলেও পরবর্তীতে আর কোন আইনানুগ কার্যক্রম গ্রহণের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এছাড়া এমন কর্যক্রম অসাচরণ এবং ইচ্ছাকৃত রাজস্ব ক্ষতির সামিল এবং সরকারি কর্মচারী শৃঙ্খলা ও আপিল বিধিমালা ২০১৮ এর বিধি ৩ (খ) ও (ঘ) অনুযায়ী কেন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে না সেটাও জানতে চাওয়া হয়েছে।
এদিকে আরও জানা যায়, ২০১৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ঢাকার কর অঞ্চল-৮ কর্মরত ছিলেন মেসবাহ উদ্দিন খান। ওই সময় বায়োফার্মা কোম্পানির আয়কর বিবরণীর হিসেবে গড়মিল পাওয়া যায়। গড়মিলের বিষয়ে কর কমিশনার মেসবাহ উদ্দিন ৮৮৯ নম্বর পত্র জারি করে করদাতা কোম্পানির কাছে বিবরণের ব্যাখ্যা চাইলেও পরবর্তীতে ব্যবস্থামূলক কোনো কর্যক্রম করেননি। পরবর্তীতে ২০২১ সালের ২৪ মে করদাতার আয়কর নথি পর্যালোচনা করে স্মারকের কোনো অস্তিত বা আদেশপত্রে জারি করা কোনো নোটিশ পাওয়া যায়নি। এনবিআর বলছে, ফাইলটি গায়েব করে দেওয়া হয়েছে।
বায়োফার্মার নথি এবং আয়কর ফাঁকির বিষয়ে জানতে সাবেক উপ কর কমিশনার ও বর্তমানে যুগ্ম কর কমিশনার মেসবাহ উদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বাংলাবার্তাকে বলেন, নথি যে গায়েব হয়েছে কিনা সেটা আমি জানি। আমি থাকা পর্যন্ত নথি ছিলো। আমি এনবিআরে আমার ব্যাখার জবাব দিয়েছি। কর দাতার কাছে ব্যাখা চাওয়ার পর আমি তিন মাস ছিলাম। তখন বায়োফার্মা কোন ব্যাখা দেয়নি। এরপর আমি দেশের বাইরে পড়ালেখা করতে চলে যায়। পরবর্তীতে আমি আর কিছু জানি না। আমার কাছে সন্দেহ হলে আমি বায়োফার্মার কাছে ব্যাখা তলব করি। দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে এখানে আমার কোন দায়ভার নেই।আমার যা করার প্রয়োজন ছিলো আমি করেছি।
এ বিষয়ে কর অঞ্চল ৮ এর কমিশনার মোহাম্মদ আবুল মনসুর বাংলাবার্তাকে বলেন, এগুলো গোপনীয় বিষয় গণমাধ্যমে বলা যাবে না। এটা এনবিআর ভালো জানে। আমরা এ বিষয়ে কিছুই বলতে পারবো না।
তবে এ বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আয়কর সদস্য সৈয়দ মোহাম্মদ আবু দাউদকে বাংলাবার্তার পক্ষ থেকে তার ব্যক্তিগত ফোনে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
বাংলাবার্তা?এসজে/এসএ
বাংলাবার্তা/এসজে