বৈমানিক মাসুদ। বাংলা বার্তা
ঢাকা: একজন বৈমানিককে নানা প্রশিক্ষণ এবং নিয়ম শৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে বিমান পরিচালনা করতে হয়। কিন্তু ক্যাপ্টেন নূরউদ্দিন আল মাসুদ যেন রীতিমত অনিয়মকে নিয়মে পরিণত করেছেন। এই বৈমানিক অনিয়মের মাধ্যমে লাইসেন্স পেয়ে যেমন প্রায় ২ যুগ ধরে বৈমানিক হিসেবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিমান পরিচালনা করেছেন। তেমনিভাবে আবার নানা অনিয়ম করেও তিনি রয়েছেন ধরা ছোঁয়ার বাইরে।
বাংলাবার্তার অনুসন্ধান বলছে, এই বৈমানিক মাসুদ বৈধ রেটিং ছাড়া ২০০৪ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত যাত্রীবাহী বিমান পরিচালনা করেছেন। তিনি প্রায় ৭৬২ ঘণ্টা যাত্রীবাহী বিমান পরিচালনা করেছেন বৈধ রেটিং ছাড়া। মেয়াদ উত্তীর্ণ লাইসেন্স নিয়ে ফ্লাইট পরিচালনা করা। ২০০৪ সালের ১০ জুন থেকে ২০০৫ সালের ২৬ জুলাই পর্যন্ত সময়ে বৈমানিক মাসুদ বৈধ লাইসেন্স ছাড়া ফ্লাইট পরিচালনা করেছেন।
অনুসন্ধানে আরও বেরিয়ে এসেছে, এই বৈমানিক বাংলাদেশ সিভিল এভিয়েশনে মিথ্যা তথ্য দিয়ে আইআর রেটিং নবায়ন করেছেন ২০২০ সালের ২০ ডিসেম্বর। এছাড়া বেসরকারি এয়ারলাইন্স ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সে ডিএফও হওয়ার সময় ২০২১ সালের ২২ মার্চ আবেদনে মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন। এছাড়া বৈধ মেডিক্যাল ছাড়া ১৪টি ফ্লাইট পরিচালনা করেছেন। যা আইন অনুযায়ী দন্ডনীয় অপরাধ।
অন্যদিকে ফিলিপাইন সিভিল এভিয়েশনে খোঁজ নিয়ে বাংলাবার্তা জানতে পারে, এই বৈমানিক মাসুদকে ফিলিপাইন সিভিল এভিয়েশন ফ্লাইং করার জন্য অনুমতি দেয় ২০০১ সালের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত। এছাড়া ফিলিপাইনে তার সর্বশেষ ফ্লাইং ছিলো ২০০১ সালের ১৮ এপ্রিল। এই বৈমানিক ২০০১ সালের ২৭ এপ্রিল বাংলাদেশে রওয়ানা দেওয়ার পর তিনি আর কখনো ফিলিপাইনে যাননি। সবমিলে অনিয়মের মাধ্যমে লাইসেন্সসহ বিভিন্ন সুবিধা ভোগ করে এক প্রকার নিয়মে পরিণত করেছেন এই বৈমানিক।
অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, বৈমানিক মাসুদ অন্য একজন বৈমানিকের সিমুলেটর চেক ফর্মের পরীক্ষকের কলমে অবৈধভাবে ক্যাপ্টেন মাসুদ নিজের মতামত দিয়ে পরীক্ষকের স্বাক্ষর জাল করেন। যা অপরাধ। এছাড়া তিনি প্রশিক্ষক থাকাকালীন বিভিন্ন অনিয়ম করেছেন যা বাংলাদেশ সিভিল এভিয়েশনের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে।
এদিকে বাংলাদেশ সিভিল এভিয়েশনের নিয়ম অনুযায়ী, কোন বৈমানিক যদি অনিয়মের মাধ্যমে লাইসেন্স পান তাহলে তার লাইসেন্স বাতিলসহ ১ কোটি টাকা জরিমানা সাথে ৫ বছরের সশ্রম কারাদন্ডে দন্ডিত হবেন। একই সাথে বৈধ রেটিং ছাড়া ফ্লাই করলে সেই বৈমানিকের লাইসেন্স বাতিলসহ জরিমানার বিধান রয়েছে। বৈধ মেডিক্যাল ছাড়া বিমান উড্ডয়ন করলে সেটাতেও লাইসেন্স বাতিলসহ জরিমানার বিধান রয়েছে। এছাড়া ডিএফও হওয়ার সময় সিভিল এভিয়েশনে ভুল তথ্য দেওয়াতে লাইসেন্স বাতিলের পাশাপাশি অর্থদন্ডের বিধান রয়েছে।
এদিকে সিভিল এভিয়েশন সূত্রে জানা গিয়েছে, এই বৈমানিক তদন্তে প্রভাবিত করতে তদন্ত কর্মকর্তাদের বিভিন্ন উপরিমহল দিয়ে তদবির সুপারিশ করাচ্ছেন। যার ফলে তটস্থ রয়েছেন সিভিল এভিয়েশনের তদন্ত কর্মকর্তারা।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ সিভিল এভিয়েশনের পরিচালক (এফএসআরআইএ) এর গ্রুপ ক্যাপ্টেন মুকিত উল আলম মিয়ার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বাংলাবার্তাকে বলেন, এখন একটি জরুরি মিটিংয়ে আছেন। কিন্তু পরবর্তীতে ফোন দিলে আর তিনি কল রিসিভ করেননি।
বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়ে ক্যাপ্টেন নূরউদ্দিন আল মাসুদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বাংলাবার্তাকে বলেন,বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। এ বিষয়ে আমি কোন মন্তব্য করবো না।
এদিকে এ বিষয়ে এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহিদুল আলম বাংলাবার্তাকে বলেন, বাংলাদেশ সিভিল এভিয়েশনের উচিত সিনিয়র বৈমানিকদের সকল কাগজপত্র এখন নতুন করে আবার তদারকি করা। এভাবে যদি চলতে থাকে আর যদি কোন ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে তাহলে সেটার দায়ভার সিভিল এভিয়েশনের কাছে গিয়ে বর্তায়। কাজেই সিভিল এভিয়েশন আরও কঠোর এবং সতর্ক হলে এসব ভুল হওয়ার কোন সম্ভাবনা থাকবে না। সিভিল এভিয়েশনের উচিত সবকিছু কঠোর দৃসি্টতে মনিটরিং করা।
তবে সিভিল এভিয়েশনের চেয়ারম্যান মফিদুর রহমান বাংলাবার্তাকে বলেন, আপনারা জানেন আমরা দুজন বৈমানিকের জালিয়াতি ধরেছি। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। তদন্তে এই বৈমানিকের অনেক তথ্য আমরা পেয়েছি। অনিয়ম করলে রক্ষা পাওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। এভিয়েশন সেক্টরে কোন অনিয়ম চলবে না।
বাংলাবার্তা/এসজে