ছবি: বাংলাবার্তা
ঢাকা: হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবস্থিত ঢাকা কাস্টম হাউস। এই ঢাকা কাস্টম হাউসের একটি ইউনিট যার নাম কুরিয়ার শাখা। এই কুরিয়ার শাখায় প্রতিদিন গড়ে ৩ হাজারের বেশি বিল অফ এন্ট্রি দাখিল করা হয়। যার মানে পণ্য ছাড়করণ করা হয়। ঢাকা কাস্টম হাউসের বর্তমান কমিশনার যোগদানের পর থেকে কুরিয়ার ইউনিট সংস্কার করা হয়।
কিন্তু এরপরও কিছু অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজসে কুরিয়ার ইউনিটে মিথ্যা ঘোষণার মাধ্যমে বেরিয়ে গিয়েছে একাধিক পণ্যের চালান। আর যেসব পণ্যের চালান বেরিয়ে গিয়েছে সেসব চালানে সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে।
বাংলাবার্তার অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, কুরিয়ারে একক আধিপত্য বিস্তার করে চলেছে মকলেস নামে এক সিএণ্ডএফ ব্যবসায়ী। যার নিজের কোনো লাইসেন্স না থাকলেও ভাড়া করা লাইসেন্স দিয়ে পণ্য খালাস করে চলেছেন। এই মকলেসের নামে ঢাকা কাস্টম হাউসে মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য চালান বের করে নিয়ে যাওয়ার একাধিক অভিযোগে মামলাও রয়েছে। এমনকি এই মকলেসের মাধ্যমে কুরিয়ার ইউনিট দিয়ে একাধিক পণ্য চালান মিথ্যা ঘোষণায় বেরিয়ে গিয়েছে। আর সেসব চালানের মাধ্যমে বিভিন্ন উড়োজাহাজ তথা বিমানের নানা সামগ্রী আমদানিকারক নভোএয়ার লিমিটেড। নভোএয়ার নানা সামগ্রী আমদানি করলেও মূলত সিএণ্ডএফ মকলেস কারসাজি করে ঢাকা কাস্টম হাউসের কুরিয়ার ইউনিট দিয়ে এমন একাধিক পণ্যের চালান খালাস করেছেন। সেসব বিল অফ এন্ট্রি ও পণ্য চালান বেরিয়ে যাওয়ার বিষয়ে তথ্য রয়েছে বাংলাবার্তার কাছে।
আরও পড়ুন>>বিটিভির দুর্নীতির রাণী মাহফুজা আক্তার
অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, আমদানিকারক নভোএয়ারের একটি বিল অফ এন্ট্রি নাম্বার ৫২১০৮৭। যেখানে আমদানি করা ভাল্ব দেখানো হয়েছে। কিন্তু ভাল্ব টিটিআই ৫৮ শতাংশ হারে শুল্কহার হওয়া সত্ত্বেও ৩৭ শতাংশ শুল্কহারে পণ্য চালানটি খালাস করা হয়েছে। আরেকটি বিল অফ এন্ট্রি নাম্বার ৫২৮৮০৩। যেখানে একচুয়েটর আমদানিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নির্দেশনা রয়েছে ৫৮ শতাংশ হারে শুল্কহার দিয়ে পণ্য খালাসের। তবে এখানে মাত্র ২৬ শতাংশ শুল্কহারে পণ্যটি খালাস করা হয়েছে। অপর আরেকটি বিল অফ এন্ট্রি নাম্বার ৫৭৫৪১৬। যেখানে আবারও ভাল্ব আমদানি করা হয়েছে। এখানেও ৫৮ শতাংশ শুল্কহার হওয়া সত্ত্বেও মাত্র ৩৭ শতাংশ শুল্কহারে পণ্যটি শুল্কয়ণ করা হয়েছে।
শুধু তাই নয়, আরেকটি বিল অফ এন্ট্রি নাম্বার ৬০২৮২৫। যেখানে আমদানি করা হয়েছে ট্রান্স রিসিভার। এই পণ্যটি আমদানিতে শুল্ককর ৫৮ শতাংশ হওয়ার কথা থাকলেও মাত্র ২৬ শতাংশহারে শুল্ককর করা হয়েছে। যদিও এটি শর্তসাপেক্ষে আমদানির নির্দেশনা থাকলেও সেই বিধান পূরণ না করে পণ্যটি আমদানি করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, সাধারণত উড়োজাহাজের যন্ত্রাংশের মূল্য অধিক এবং উচ্চমূল্যের উপাদান দ্বারা তৈরি। কাস্টম হাউস ঢাকায় দাখিলকৃত বিল অফ এন্ট্রি গুলোতে দেখা গিয়েছে, কুরিয়ার দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার এমন ২০টির অধিক পণ্য চালান আমদানি করেছে নভোএয়ার লিমিটেড। যার সকল পণ্য মূলত উড়োজাহাজে ব্যবহৃত যন্ত্রাংশ। স্বাভাবিক পণ্যের মূল্যায়নের চেয়ে অনেক কম মূল্যে আমদানি করা এসব পণ্যের চালান শুল্কায়ণ করা হয়েছে। যেখানে সরকারের কোটি কোটি টাকার রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে।
আরও পড়ুন: অর্থ আত্মসাৎসহ নানা কেলেঙ্কারিতে বরখাস্ত সোনালী ইন্স্যুরেন্সের সিইও
এমনকি স্বাভাবিক নিয়মে এইচএসকোডে শুল্কায়ন না করে নিম্নহার কোডে শুল্কায়ন করা হয়েছে। আর এসব করেছে মূলত কুরিয়ারে কাজ করা সিএন্ডএফ এজেন্ট মকলেস।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বাংলাবার্তাকে বলেন, এয়ারপোর্টে যারা কাজ করে তারা সবাই এমন করে। কেউ ধোঁয়া তুলসি পাতা না। আপনি নিউজ করেন আমার কিছুই হবে না। এছাড়া এই প্রতিবেদকের সাথে তিনি অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন বিমানবন্দরে।
যদিও নভোএয়ারের আমদানি করা পণ্য মিথ্যা ঘোষণায় বের করে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে জানতে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মফিজুর রহমানকে ফোন দেওয়া হলে তিনি কল রিসিভ করেননি। ফলে তার মন্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
যদিও এ ঢাকা কাস্টম হাউসের একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাবার্তাকে বলেন, যেসব বিল অফ এন্ট্রি গুলোতে মিথ্যা ঘোষণার মাধ্যমে পণ্য বেরিয়ে গিয়েছে সেগুলো এখনও চাইলে ফাঁকিকৃত রাজস্ব আদায় করা সম্ভব। সেজন্য কমিশনারের নির্দেশে একটি কমিটি গঠন করা যেতে পারে এবং সেই কমিটির অনুসন্ধানের মাধ্যমে মিথ্যা ঘোষণায় কি পরিমাণ পণ্য বেরিয়ে গিয়েছে সেটা জানা সম্ভব।
পরবর্তী পর্ব দেখতে চোখ রাখুন বাংলাবার্তায়
আরও পড়ুন>>মিথ্যা ঘোষণায় কুরিয়ার দিয়ে বেরিয়ে গিয়েছে নভোএয়ারের ৩০ পণ্যের চালান (২য় পর্ব)
বাংলাবার্তা/এসজে